Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোজার পণ্য খালাসে ব্যস্ত চট্টগ্রাম বন্দর

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চিনি ছোলা খেজুর ডাল ভোজ্যতেল আমদানি পর্যাপ্ত : বাজারে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি
শফিউল আলম : মাহে রমজানের আর বাকি মাত্র তিন দিন। চট্টগ্রাম বন্দরে রোজার নিত্য ও ভোগ্যপণ্য খালাস, ডেলিভারি, পরিবহন কাজে দিন-রাত চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে এবং সদরঘাট, বাংলাবাজারে সবক’টি লাইটারেজ জেটি-ঘাটে হরেক রকম পণ্য খালাস ও পরিবহন করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী সড়ক ও নৌপথে নিত্যপণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। বর্তমানে প্রায় ৪শ’ লাইটারেজ কার্গোজাহাজ, কোস্টার ভাসছে রোজার পণ্য বোঝাই করে। তাছাড়া গুদাম, ইয়ার্ড-শেড, ওয়্যারহাউসগুলোতে মালামাল মজুদ ও স্থানান্তর করা হচ্ছে। গতকাল (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম বন্দর, বহির্নোঙরে ১২টি জাহাজের হরেক পণ্য খালাসের কাজ পুরোদমে চলে। আগামী দু’সপ্তাহের সিডিউল অনুযায়ী আরও ১৮টি দেশি-বিদেশি বড় জাহাজে আমদানি পণ্যসামগ্রী খালাস করা হবে। রমজানকে কেন্দ্র করে চলতি মে মাসে এবং আগের ৪ মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) প্রধান এ বন্দর দিয়ে বিশেষ করে রোজায় সাহরী ও ইফতারে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য যেমন, চিনি, ছোলা, খেজুর, বিভিন্ন ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল আমদানি ও খালাস করা হয়েছে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমানে। গুদাম-আড়তগুলোতেও এসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা। অথচ পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিনাকারণেই ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিমুনাফা লুটে নেয়া হচ্ছে।   
এদিকে গত সাড়ে ৪ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে আগত জাহাজবহরে আমদানি করা নিত্যপণ্য খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন কার্যক্রমকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে বলে জানায় বন্দর-শিপিং সূত্র। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসেও এক্ষেত্রে সবধরনের ডকুমেন্টেশন বিশেষ দ্রæততার সঙ্গে করা হয়। এতে করে এবার রমজানের নিত্য ও ভোগ্যপণ্য খালাস, ডেলিভারি পরিবহনে ঝামেলা বা হয়রানির তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুরসহ রমজানে অত্যধিক চাহিদার সবক’টি নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি চালান খালাস হয়।   
চিনি, ছোলাসহ কোনো কোনো খাদ্যপণ্য চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হয়েছে। তা সত্তে¡ও ইতোমধ্যে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনি, ছোলা, বিভিন্ন ডালের দাম গত একমাসে কেজিপ্রতি গড়ে ৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। রোজার বাড়তি চাহিদা পুঁজি এবং ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করেই অসৎ ব্যবসায়ীরা বাজারে শত শত কোটি টাকার মুনাফা লোটার জন্য যেন মরিয়া। তাছাড়া রোজার মধ্যে আরও কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি, মজুতদারি, কারসাজির পাঁয়তারা চলছেই। অথচ রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রশাসনের তদারকি বা বাজার মনিটরিং তেমন সচল দেখা যাচ্ছে না।    
অবশ্য চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, রমজানে যেসব নিত্যপণ্যের চাহিদা বেশি এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে এর অধিকাংশ পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। কাজেই কোনো অজুহাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম বহির্নোঙর থেকে মাদার ভেসেলে আগেই খালাসকৃত অন্তত ৪শ’ লাইটার, কার্গোজাহাজ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন ঘাটে কিংবা নৌপথে বিভিন্ন নিত্যপণ্য বোঝাই অবস্থায় অঘোষিত ভাসমান গুদামের মতো রয়েছে। এতে করে চাহিদা মাফিক লাইটার জাহাজের অভাবে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। একইসাথে শিল্পের কাঁচামাল নৌপথে সরবরাহও কমে যাচ্ছে।      
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সারাবছরের চেয়ে রোজা ছোলার চাহিদা বেশিই থাকে, যা প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন। রোজার টার্গেটে গত জানুয়ারি-এপ্রিল ৪ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা খালাস হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭০ টন। এরমধ্যে এপ্রিলেই ছোলা খালাস হয় ৮৩ হাজার টন। দেশে চিনির চাহিদা বছরে সাড়ে ১৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৪ লাখ টন। রোজার চাহিদা ২ থেকে আড়াই লাখ টন। চট্টগ্রাম বন্দরে গত দশ মাসে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টন চিনি খালাস হয়। চার মাসে মসুর ডাল খালাস হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার টন। যা রোজার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার টন বেশি। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ টন। সারা বছরে চাহিদা ১৩ লাখ টন। গত চার মাসে ভোজ্যতেল খালাস হয় প্রায় ৫ লাখ টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ২৯ হাজার টন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ