পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামেও স্বর্ণ ব্যবসায় গলদের কারণে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বৈধপথে আমদানির সুযোগ না থাকায় মূলত চোরপথে আসা স্বর্ণ দিয়েই চলছে জুয়েলারি ব্যবসা। জুয়েলারিতে স্বর্ণ কোথা থেকে এল তা জানার প্রয়োজন নেই। কি পরিমাণ স্বর্ণ বিক্রি হলো তার উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট আদায় করে দায়িত্ব শেষ করছে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা।
এখানকার ৮ হাজারের বেশি স্বর্ণের দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ ভরি স্বর্ণালংকার বেচাকেনা হচ্ছে। অথচ সরকারি খাতায় ভ্যাট হিসেবে জমা হচ্ছে সামান্য অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধপথে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ থাকলে বন্ধ হতো চোরাচালান। সরকারি কোষাগারেও জমা হতো শত কোটি টাকার রাজস্ব। এখন বিপুল রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে প্রতিবছর।
চোরাপথে আসা স্বর্ণ কেনার বিষয়টি এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তবে জুয়েলারি মালিকদের কেউ বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তারা দাবি করেন, প্রবাসীরা দেশে আসার সময় বৈধপথে যে স্বর্ণ নিয়ে আসেন তার বিরাট অংশ তারা বিক্রি করে দেন। এগুলো সংগ্রহ করে জুয়েলারি মালিকেরা। আবার অনেকে প্রয়োজনের তাগিদে স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দেন জুয়েলারিতে। সেটাও জুয়েলারিগুলোর স্বর্ণের বিরাট উৎস। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একজন বিমানযাত্রী বৈধপথে সর্বোচ্চ একশ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারেন।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৫ হাজারের মতো স্বর্ণের দোকান রয়েছে। নগরীর নিউমার্কেট, আমিন সেন্টার, আফমি প্লাজা, স্যানমার ওস্যান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, হাজারী গলিসহ বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটে বিপুল স্বর্ণের দোকানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে এখানকার জুয়েলারিগুলো।
বৈধপথে যে স্বর্ণ আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ হচ্ছে চোরাইপথে আসা স্বর্ণ দিয়ে। চোরাই স্বর্ণের কারবার টিকিয়ে রাখতে বেশিরভাগ স্বর্ণ ব্যবসায়ী শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের পকেট ভরাচ্ছেন। সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হলেও ফুলে-ফেঁপে মোটা হচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তা। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমিন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শো-রুমে হানা দিয়ে শত শত কেজি স্বর্ণ ও ডায়মন্ড জব্দের ঘটনায় বিষয়টি ফের আলোচনায় এসেছে। শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি, আমিন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শো-রুম থেকে জব্দকৃত স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের উৎস অজানা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৈধপথে স্বর্ণ ও ডায়মন্ড আমদানির সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় গোজামিলের মধ্যদিয়ে চলছে স্বর্ণের কারবার। চট্টগ্রামে স্বর্ণ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত স্বর্ণ আমদানির সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই। আর এ সুযোগে চোরাইপথে স্বর্ণ আসছে। দেশি-বিদেশি পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক হয়ে গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে কি পরিমাণ স্বর্ণের চালান এসেছে তার হিসেব কারও কাছে নেই। তবে গত ১০ বছরে হাজার কোটি টাকা দামের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হিসেবে শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই ২৫৪ কেজি স্বর্ণ ধরা পড়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে পার হয়ে যাওয়া স্বর্ণের চালানের বিরাট অংশ চলে যায় জুয়েলারিগুলোতে। তারা অপেক্ষাকৃত কম দামে এসব স্বর্ণ কিনে অলংকার তৈরি করে চড়াদামে বিক্রি করে। আর এটিকে পুঁজি করে অসাধু শুল্ক কর্মকর্তারা জুয়েলারির মালিকদের কাছ থেকে নানা রকম অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে চলেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বৈধপথে আসলে সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা পড়তো। কিন্তু এখন সরকার এ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে পকেট ভরছে অসাধু কর্মকর্তাদের। স্বর্ণ ব্যবসার সাথে জড়িতদের অনেকেই এ অনিয়মের অবসান চায়। তারাও চান বৈধভাবে ব্যবসা করে ঝামেলামুক্ত থাকতে। চট্টগ্রাম জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী বলেন, সমিতির সদস্য সংখ্যা দেড় হাজার হলেও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫ হাজারসহ পুরো চট্টগ্রামে ৮ হাজারের বেশি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এসব জুয়েলারিতে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ ভরির বেশি স্বর্ণালংকার বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন উৎস থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এর ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গত ৩০ বছর ধরে সমিতির সাথে থাকার সুবাদে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালার জন্য আন্দোলন করে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া, এরশাদ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সাথে একাধিকবার দেখা করেছেন তারা। সর্বশেষ বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রæতসময়ে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অনুমতি না থাকায় একদিকে আমরা স্বর্ণ আনতে পারছি না অন্যদিকে স্বর্ণের উৎস খোঁজার নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ খাত থেকে সরকার বছরে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পাওয়ার পরও কেন নীতিমালা হচ্ছে না তা স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ার পেছনে শুল্ক কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটে হাত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।