পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইরানের ক্ষতিকর প্রভাব রোখাই অস্ত্র চুক্তির মূল লক্ষ্য : আমরা এখানে এসেছি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব নিয়ে, যার ভিত্তি হবে পারস্পরিক স্বার্থ।
ইনকিলাব ডেস্ক : মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের ইসলামি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা ও নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন গোষ্ঠীর বা বিভিন্ন সভ্যতার নয়। এই লড়াই সেই সব নৃশংস অপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের জীবন কেড়ে নিতে চায়, সব ধর্মের ভালো মানুষ যারা জীবন রক্ষা করতে চায় তাদের হত্যা করতে চায় এসব অপরাধীরা। এই লড়াই ভালো এবং অশুভের।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এর মানে হচ্ছে সত্যিকার অর্থে ইসলামি জঙ্গিবাদ ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করা। এর মানে হচ্ছে নিরাপরাধ মুসলিমদের হত্যা, নারীদের ওপর নিপীড়ন, ইহুদিদের হত্যা ও খ্রিস্টানদের গলাকেটে হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তির পথ এখানেই রয়েছে, এই প্রাচীন ও পবিত্র মাটিতে।’
মুসলিম বিদ্বেষী বলে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সব সময় আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। আমরা এখানে লেকচার দিতে আসিনি, মানুষ কিভাবে বাঁচবে তা বলতে আসিনি এখানে। কী করতে হবে, কে করবে বা কিভাবে প্রার্থণা করতে হবে তা বলতে আসিনি। আমরা এখানে এসেছি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব নিয়ে। যার ভিত্তি হবে পারস্পরিক স্বার্থ। যা সবার জন্য ভালো ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে।
জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, কিন্তু আমরা অশুভকে পরাজিত করতে পারব যদি সব মহৎ শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী থাকি। এই কক্ষে উপস্থিত সবাই যদি এই বোঝার ভাগ সমানভাবে বহন করি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিৎ নয় তাদের শত্রæদের ধ্বংস করার জন্য আমেরিকার শক্তির অপেক্ষায় থাকা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে তারা দেশের, নিজেদের ও তাদের শিশুদের জন্য কেমন ভবিষ্যৎ চায়।
গতকাল রোববার রিয়াদে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনে ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। গত শনিবার সউদী আরবে পৌঁছান। রাজধানী রিয়াদে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান তিনি।
দুই মাস আগে ক্ষমতাগ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সংশোধিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দেন এবং ক্ষমতায় বসেই অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপ নেন তিনি। এসব কর্মকান্ডে ট্রাম্পের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিলো। এবার সেই ট্রাম্পই সৌদি আরব সফরে এসে ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশ্যে এই ভাষণ দিলেন। তবে ট্রাম্পের সউদী সফরের ফলে মুসলিমদের তাঁর প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ট্রাম্পের সহযোগীদের ভাষ্য, প্রেসিডেন্টের ভাষণ বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেবে। তাঁর ভাষণে শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাবে। রিয়াদে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্পের সহযোগীদের মতে, জঙ্গিবাদের মতো সমস্যা মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা শুরুর এক মোক্ষম স্থান এই সম্মেলন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্দেশ্য মূলকভাবেই সউদী আরবকে ট্রাম্পের প্রথম সফরের দেশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই ট্রাম্পের সফর নিয়ে সউদী আরবের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য সউদী আরবকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে তার প্রমাণ ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনই মিলেছে। এদিন সউদী আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অস্ত্র চুক্তি সই করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কর্মকর্তার আরো বলেন, সউদী আরবকে ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের দেশ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হলো দেশটি দু’টি পবিত্র মসজিদের রক্ষক। এই সফর তাঁর ভাবমর্যাদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে সউদী আরবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ বিষয়টিও হয়তো ট্রাম্প বিবেচনায় নিয়েছেন।
সউদী আরবের সাথে চুক্তি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, ইরানের ক্ষতিকর প্রভাব রোখাই অস্ত্র চুক্তির মূল লক্ষ্য। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম-সেবার এই প্যাকেজ সউদী আরব, তথা গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তায় সমর্থন জোগাবে। সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৩৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রির চুক্তি।
এদিকে, সবার সামনেই নাচলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাও আবার সৌদি আরবে! এ সময়ে তাঁর সঙ্গে নেচেছেন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস।
রাতে নৈশভোজের পর কিং আবদুল আজিজ হিস্টোরিক্যাল সেন্টারে দেশটির ঐতিহ্যবাহী তলোয়ার নাচে অংশ নেন তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বাজনার তালে তালে বেশ হাসি মুখে অদ্ভুতভাবে হেলেদুলে নাচছেন ট্রাম্প। হাতে রয়েছে চকচকে একটি তলোয়ার। এ সময় তাঁর সঙ্গে মন্ত্রীরা ছাড়াও ছিলেন অনেক সৌদিবাসী।
ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ রিন্স প্রাইবাস ও চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন সফরে দেখা গেলেও তাদের নাচের অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। ট্রাম্পের ওই নাচ উপভোগ করেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, ট্রাম্পকন্যা ইভাংকা ট্রাম্প ও জামাই জেরাড কুশনার। সূত্র : রয়টার্স, সিবিএস নিউজ, বিটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।