পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জ্যৈষ্ঠের শুরুতে রাজধানীসহ সরাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এটি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অব্যাহত তাপ প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের জনজীবন। দিনের সূর্যতাপের রেশ থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। লোডশেডিং, পানি সংকট, বিরূপ আবহাওয়া এবং ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অধিক তাপমাত্রা আর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। গরমে বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস এর মত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
আবহাওয়া অফিস থেকে আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা ও খুলনা বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই তাপপ্রবাহ এ মৌসুমের চতুর্থ। গত শনিবার থেকে এই তাপপ্রবাহের কারণে অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ৩ থেকে ৪ দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তাই আগামী কয়েক দিনে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারিতে রূপ নিতে পারে। তাই গরমে কষ্ট পেতে হবে আরও কয়েক দিন।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রচÐ গরমে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হতে পারছে না। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। শুধু মানুষই নয়। সকল জীবের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চরম দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ। প্রচন্ড গরমে মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। প্রখর রোদ যেন আগুনের ফুলকা হয়ে বিধছে মানুষের শরীরে। সকালের স্বাভাবিক সময়কাল শেষ হতেই সূর্যের তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে রাস্তাঘাটে বের হওয়া দায় হয়ে যায় মানুষের জন্য। প্রচন্ড রোদ ও গরমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন রাজধানীসহ সরাদেশের শ্রমিকরা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ। প্রচÐ গরমে অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের লেখা পড়ায় বিঘœ ঘটছে। তাপপ্রবাহে রাজধানীর বাস যাত্রীদের জীবন হয়ে উঠেছে দুবির্ষহ। অনেক যাত্রী যানজটে আটকা পড়ে তীব্র তাপদাহে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে গরমের কারণে কোন উপায় না পেয়ে পথচারীরা পান করছেন নানা ধরনের পানি, জুস, শরবত। একদিকে প্রচÐ গরম আর তীব্র তাপমাত্রা অন্যদিকে লোড শেডিং এর কারণে গরমে নাকাল হচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ। আগামী কয়েকদিনেও এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল (রোববার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে রেকর্ড করা এই তাপমাত্রা এ সপ্তাহেরও সর্বোচ্চ। আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুকনো থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি তীব্র এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকাসহ যেসব এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সেখানে আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। আগামী ২৬ মে’র দিকে ওই সব এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে আপাতত সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও এখনও তা নিশ্চিত নয়। তবে আপাতত এ মাস মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা বেশি। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। গরমের কারণ তুলে ধরে শাহীনুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম মÐলীয় অঞ্চলে অবস্থান করা বাংলাদেশের ঠিক উপরের কর্কটক্রান্তি রেখা ধরে সূর্য ওঠানামা করে এ সময়ে। তাই সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থানগত কারণে এ সময়ে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ থাকে। এ সময় বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমে না। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে, যা উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অসহনীয় তাপপ্রবাহে সারাদেশে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জনজীবন। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা ও যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৩৬ ও ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সে, চট্টগ্রামে ৩৫ ও ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে.। এই সপ্তহাজুড়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, রাজশাহী, পাবনা, চাঁদপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে রাতের তাপমাত্রাও বেড়ে যাওয়ার কারণে গরমের মাত্রা দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাপপ্রবাহের সাথে বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। দাবদাহের কারণে হতদরিদ্র দিনে এনে দিনে খাওয়া জনগোষ্ঠির দুর্ভোগ সীমাহীন। তাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যা উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজকের আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।