পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের জলবায়ু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ অঞ্চলে বৃষ্টি বেশি হয় আর মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশে বৃষ্টিপাত কম হয়। গত বছরও দেশের চিত্রটা এরকমই ছিল। দক্ষিণে ছিল বন্যা আর উত্তরে ছিল খরা। কিন্তু এবার এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি নেই। অন্যদিকে উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি ও ভারতে থেকে আসা ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা বন্যা, শিলাবৃষ্টি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, মরুকরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি, নদী ভাঙন ইত্যাদি অনেক বেড়ে গেছে। প্রকৃতিতে আবহাওয়ার বৈরী আচরণ খুবই স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর যাবত গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর বেশি থাকছে। যাকে মরুর তাপমাত্রা বলা হচ্ছে। তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিকতার ফলে দিনে দিনে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। আবার কখনো বা অসময়ে দেশের কোন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে।
অনাবৃষ্টির ফলে বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পেয়ে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী মরুকরণ। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। যদিও এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবও দায়ী, তবে অনাবৃষ্টির ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত কমে যাচ্ছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বন্যার ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। ফলে দেশের কোথাও খরা আবার কোথাও ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে এ বছর মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে এবং দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি পাতের পরিমাণ অনেক কম। উল্টো দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) দেশের উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। তাই উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। গতকালও সেখানে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বৃষ্টিহীন। গতকাল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে ফের তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার এবং শনিবার ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের এ প্রভাব গত বছর দেশে ছিল পুরোপুরো উল্টো। গত বছর আগস্টে দক্ষিণের জেলাগুলোতে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখো মানুষ। ভেসে যায় বাড়িঘর, চিংড়িঘের, রাস্তাঘাট। অন্যদিকে ঠিক উল্টো চিত্র ছিল দেশের উত্তরে। বৃষ্টির আশায় প্রহর গুনছেন কৃষকেরা। ভরা বর্ষায় পানির অভাবে ধানের খেত ফেটে চৌচির। বৃষ্টির আশায় কৃষকরা তখন চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিলেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুরাদ আহমেদ ফারুক বলেন, বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মৌসুমগত এবং পরিমাণগত পরিবর্তন হচ্ছে। যে সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ার কথা, কোনো বছর দেখা যাচ্ছে অনেক দেরিতে বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, কোনো বছর অনেক আগেই অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কম সময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া লঘুচাপের কারণে টানা বর্ষণ, এবং ভারতের ঢলে ও সামুদ্রিক জোয়ারে গত বছর কক্সবাজারে ৫১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, যশোর, খুলনা, বরগুনা, ভোলাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এতে কোটি কোটি টাকার মাছের ঘের তলিয়ে যায়। পানিবন্দী হয়ে আছে লাখো মানুষ। অন্যদিকে তখন পানির জন্য হাহাকার কুড়িগ্রাম, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজারসহ অনেক জেলার মানুষ।
এ বছর ঠিক তার উল্টো। কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে ভারি বৃষ্টি। আর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।