পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গতকাল পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ‘রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নাশকতা সামগ্রীর খোঁজে’ সকাল ৭টা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা কার্যালয়ে এ অভিযান চলে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তল্লাশীর নামে কার্যালয়টি মূলত ‘তছনছ করেছে’ পুলিশ। দলটি বলেছে, অভিযানে পুলিশের প্রাপ্তি ‘শুন্য’। অর্থাৎ তারা কিছুই পায়নি। পুলিশও এটি স্বীকার করেছে। এদিকে, দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির প্রতিবাদে গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ পতিবাদ করেছে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। ঢাকায় মহিলা দল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বগুড়া ,গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তল্লাশির প্রতিবাদে বিএনপি ও যুবদল আজ রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
অভিযান চালানোর সময় পুলিশ জানায়, আদালতের পরোয়ানা নিয়েই তারা অভিযান চালিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, অজ্ঞাতনামা একটি জিডির ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ করার জন্য পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আছে এই কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার। ওয়ারেন্ট রয়েছে, তা অনুযায়ী তল্লাশি করেছি।
এই ঘটনা জানার পর ঠাকুরগাঁয়ে অবস্থানরত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তল্লাশি করে সরকার এটাই বুঝিয়েছে- বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে সরকার দেশ চালাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত করছে।
অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দিন আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এক ট্রাক বই আনার খবর তারা পেয়েছেন। সেই বইকে ঘিরে তাদের সন্দেহ হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অভিযানের পর ওসি আবু বকর বলেন, যে তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়, সে রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
অভিযানে পুলিশ কিছু পায়নি জানিয়ে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই অভিযানের পর পুলিশ বলেছে যে অভিযানে তাদের প্রাপ্তি শুন্য। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) তৌহিদের কাছে তারা এ বিষয়ে বলেছে। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিকভাবেই শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আকস্মিকভাবে গুলশান কার্যালয়ের সামনে হঠাৎ করেই পুলিশ মোতায়েন হয়। ৭টার দিকে গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করে। কার্যালয়ের ভেতরের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে পুলিশ কার্যালয়ের মূল ভবনে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ ভবনটিতে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির সময় চারটি কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এবং তালাগুলো নিয়ে যায়।
পুলিশ কার্যালয়ে প্রবেশ করে অফিসের দুই কর্মচারী রাশেদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম স্বপনকে একটি কক্ষের মধ্যে আটকে রাখে। এছাড়া তাদের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। তবে তল্লাশি শেষে যাওয়ার সময় তাদের মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে যায় পুলিশ।
গুলশান কার্যালয়ের কর্মচারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং চারটি কক্ষের তালা ভাঙ্গে। আমাদেরকে একটি রুমে আটকে রাখে। আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে বন্ধ করে রেখে দেয়া হয়। তল্লাশি শেষে যাওয়ার সময় আমাদের মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দেয়।
রাশেদুল বলেন, ভবনের দ্বিতীয় তলায় তল্লাশীকালে পুলিশ খালেদা জিয়ার কক্ষের চাবি চায়। জবাবে রাশেদ পুলিশ সদস্যদের বলেন, ম্যাডামের কক্ষের চাবি তাদের কাছে থাকে না। তবে, ম্যাডামের কক্ষে প্রবেশের বিষয়ে তারা কোন বাড়াবাড়ি করেননি। পুলিশ সঙ্গে একজন তালা ভাঙ্গার মিস্ত্রি নিয়ে এসেছিল। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা ভবনের তিন তলায় একটি কক্ষে রাখা বাইন্ডিং করা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখেন। এসময় একজন পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, এগুলো নিয়ে চল, যাতে করে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কোন বক্তব্য দিতে না পারে। তবে, ওই সময়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা বলতে থাকেন এগুলো নিয়ে কি হবে। এগুলো তো লন্ডনে তারেক রহমানের কাছেও আছে। এরপর ওই কক্ষ থেকে পুলিশ সদস্য আর কিছু না পেয়ে চলে যায়। তবে যাবার সময়ে তারা সম্প্রতি বিএনপি ২০৩০ যে ভিশন ঘোষণা করেছে, সেসব বই গুলো কোথায় আছে তাও জানতে চায়। রাশেদ জানায়, পুলিশ সদস্যরা কার্যালয়ের সিসি ক্যামারায় ধারণ করা ক্যাসেটও চেয়েছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, এসব বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। তবে পুলিশ কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করিয়ে নিয়েছে বলে জানান রাশেদ। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের দুটি তালা নিয়ে যায় তবে অভিযানের শুরুতে নেয়া মোবাইল ফোন ফেরত দেন।
ওই কার্যালয়ের আরেক কর্মচারী সোহরাব হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যরা প্রথমে কার্যালয়ের সামনের ৮৬ নম্বর সড়কের দুই পাশ আটকে দেয়। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। সোহরাব জানান, প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুলিশ কার্যালয়ে ঢোকে। ঢুকেই তারা কার্যালয়ের চারজন কর্মীর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় পুলিশ ভাঙা তালাটি নিয়ে যায়। অভিযান শেষে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সড়কে বসানো ব্যারিকেড তুলে নেয় পুলিশ।
অজ্ঞাতনামা যে জিডির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়েছে এতে বলা আছে, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, গুলশান থানাধীন রোড-৮৬, বাড়ি-০৬-এ এবং এর আশপাশ এলাকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ নাশকতামূলক কর্মকান্ডে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণের আহŸানমূলক বিভিন্ন বক্তব্য সংবলিত বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় নাশকতা সৃষ্টির সামগ্রী আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ অভিযান চালায়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘অভিযানের সময়ে পুরো কার্যালয়ের কাগজপত্র তছনছ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ অনুমতি ছাড়াই কার্যালয়ের প্রধান ফটকের গেটের তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করে। অফিসের ভেতরে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি টিভি) ভেঙে ফেলা হয় বলেও দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন।
অভিযানের পরপরই কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরাও পরিস্থিতি দেখতে আসতে শুরু করেন। তারা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেন। পুলিশ বেরিয়ে যাওয়ার পর কার্যালয়ে ঢুকে দেখা যায়, নিচের তলা ও দোতলায় দুটি সিসি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে। দোতলা ও তিন তলায় কাগজপত্র, ফাইলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কার্যালয়টির দোতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্ষ।
অভিযানের সময় বিএনপির কোনো নেতা সেখানে ছিলেন না। খবর পেয়ে প্রথমে উপস্থিত হন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এরপর আসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ।
রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ যাওয়ার সময় বলে গেছে, তল্লাশি অভিযানে প্রাপ্তি শুন্য। পুলিশের এই অভিযানকে ‘পুলিশি হানা’ আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানান রিজভী। এই হানা সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির জিডির পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে। সারাদেশে খুন-গুম-হত্যা, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা ব্যর্থতা আড়াল করতেই সরকার এই অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে যুবদলের এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে কয়েকশ নেতাকর্মী গুলশান কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে। যুবদলের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে আজ রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিক্ষোভের ডাক দেন যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। পরে রিজভী বিএনপির পক্ষ থেকেও রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির কথা সাংবাদিকদের জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অভিযান চলাকালীন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে, কর্ণেল (অব.) তৌহিদ, সার্জেন্ট (অব.) নুরুন্নবী। এরপরই আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। পুলিশ কার্যালয় ত্যাগের সময় হাতে লেখা তল্লাশীকালে প্রাপ্ত মালামালের বিবরণে উল্লেখ করে ‘তল্লাশীকালে প্রাপ্ত মালামালের বিবরণ শুণ্য। পুলিশের পক্ষ থেকে এ তালিকা তৈরী করেন, গুলশান থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন আমিনুল ইসলাম। স্বাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর দেখা যায়, মনিরুজ্জামান, মো. ফেরদৌস ও মো. রাশেদের।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশ কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য রেখে এসেছে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তও দাবি করেছেন নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সন্দেহ প্রকাশ করেন পুলিশ এই দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ে ভেতরে বিস্ফোরকজাতীয় কিছু রেখে এসেছে কি না, কে বলতে পারে।
সাংবাদিকদের নজরুল ইসলাম খান বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আমাদের এখানে তল্লাশি চালিয়েছে। তারা আমাদের এখানে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য রেখেছে কি না, এটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি আজকের বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি। তিনি বলেন, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। বিনাভোটের সরকারকে বিদায় করতে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামা ছাড়া কোন বুদ্ধি নেই। এজন্য তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়ে অযাচিত আচরণ করছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০ আসনও পাবে না। এ কারণে তারা বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায়।
অভিযানের পর কার্যালয়ে আরও আসেন দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ যুবদলের
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির প্রতিবাদে কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে যুবদল। সেখান থেকেই রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
মহিলা দলের তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির প্রতিবাদে কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক গুলশানে বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সড়কটিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ আসলে আফরোজা আব্বাস নেতাকর্মীদের সরিয়ে নেন।
আফরোজা আব্বাস বলেন, আজ আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। যখন তখন আমাদের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে মহানগর বিএনপি। শনিবার সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কাজীর দেউড়ি মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিন্দা
বিএনপি চেয়ারপারমন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ তল্লাশিকে গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাকর বিষয় হিসেবেও দাবি করেন তারা।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, পেশাজীবী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাদাদল, ইউল্যাব প্রভৃতি খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশির নিন্দা জানিয়েছে।
গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির প্রতিবাদে
চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব চত্বর হতে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাজীর দেউরী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি আওয়ামী লীগের এক অশুভ চক্রান্ত। বিএনপি যখনই দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে সহায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে, ঠিক সেই মুহুর্তে সরকারের এ ধরণের অভিযান দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রাজপথে রুখে দাঁড়াবে এবং রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন ঘণ্টা বাজানো হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপি নেতা মো. মিয়া ভোলা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আনোয়ার হোসেন লিপু, কামরুল ইসলাম, গাজী সিরাজউল্লাহ প্রমুখ।
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির প্রতিবাদে ডাকা রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পুলিশি বাধায় পন্ড হয়েছে। গতকাল দুপুরে নগরীর মালোপাড়ায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েক’শ নেতাকর্মী জড়ো হলেও পুলিশের বাধায় তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করতে পারেনি।
জানা যায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ কয়েক’শ নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হন। কিন্তু খবর পেয়ে পুলিশ নিচে চারিদিকে ঘিরে রাখে। পরে দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীরা নিচে নেমে বিক্ষোভ করতে চাইলেও পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিক্ষোভ করেন, মিছিল করেন সমাবেশ করে যা করার তাই করেন। কিন্তু বাইরে নয়, কার্যালয়ের ভিতরে করেন। বাইরে বের হয়ে বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। পুলিশের বাধারমুখে বিক্ষোভ করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের পুলিশের অবৈধ তল্লাশির প্রতিবাদে আমরা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয়। ফলে কার্যালয় থেকে আমরা বের হতে না পারায় বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করতে পারেনি। পুলিশের এটি অগণতান্ত্রিক আচরণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান বলেন, বিক্ষোভ মিছিলের নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। তাই তাদের বের হতে দেওয়া হয়নি।
রাবি সংবাদদাতা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির নামে রাজনৈতিক হয়রানীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রæপ (সাদা দল) এর শিক্ষকবৃন্দ। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রæপ (সাদা দল) এর ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক প্রফেসর ড. মোহা. এনামুল হক স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই এ তল্লাশি চালানো হয়েছে। দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূণ্য করার গভীর চক্রান্তের অংশ এটি। এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান অনির্বাচিত সরকার এ দেশকে গণতন্ত্রবিহীন করে কোন পর্যায়ে নিয়েছে তা এর মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হলো। বিবৃতিতে শিক্ষকবৃন্দ আরও বলেন: আমরা মনে করি দেশের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে চরম অসম্মান করা হয়েছে। এদেশে যে, কেউ আর নিরাপদ নয় সেটাই প্রমাণিত হলো এর মাধ্যমে।
বিবৃতিতে স্বক্ষরকারী শিক্ষকৃন্দের মধ্যে রয়েছেন: রাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মামনুনুল কেরামত, সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কেএএম শাহাদাৎ হোসেন মন্ডল, প্রফেসর ড. সি.এম. মোস্তফা, প্রফেসর ড. আফরাউজ্জামান খান চৌধুরী, প্রফেসর ড. শামসুল আলম সরকার, প্রফেসর ড. কেবিএম মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড. এবিএম শাহজাহান, প্রফেসর ড. ময়েজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আশরাফ উজ্জামান, প্রফেসর ড. মামুনুর রশীদ, প্রফেসর ড. ফজলুল হক, প্রফেসর ড. আমজাদ হোসেন, প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর কবীর, প্রফেসর ড. বেলাল হোসেন, প্রফেসর ড. শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দিল আরা হোসেন, প্রফেসর ড. ফরিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আব্দুল আলীম, প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা এসামী, ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ড. সৈয়দ সরওয়ার জাহান, ড. আওরঙ্গজীব আব্দুর রাহমান, প্রফেসর ড. আব্দুল হান্নান, প্রফেসর ড. আমিনুল হক, প্রফেসর ড. ফারজানা আশরাফী নীলা, প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, ড. মোহাম্মাদ আলী, মেহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।