পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনে সরাসরি সহজ যোগাযোগ : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মিয়ানমার হয়ে কুনমিং : রফতানি ও বন্দরভিত্তিক কর্মকান্ডের প্রসার ঘটবে : বাংলাদেশে শিল্প রি-লোকেট করতে আগ্রহী চীনা উদ্যোক্তারা
শফিউল আলম : দীর্ঘকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুদেশ চীন। হিউয়েন সাং, ফা হিয়েন এবং আরও অগণিত পরিব্রাজক আর বণিকের চট্টগ্রাম বন্দরে সওদাগরী জাহাজবহর যোগে গমনাগমনে হাজার বছর অতীতে সেতুবন্ধন রচিত হয় বাংলাদেশ ও চীনা জনগণের মাঝে। বর্তমান বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে শুধুই নয় বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ধারাবাহিক সহযোগী চীন। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কঠিন জীবন সংগ্রামে শক্তি সঞ্চয় করে বিশ্ব মানচিত্রে দেশটি এখন বিরামহীন গতি ও প্রগতিতে এগুচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সূচনা থেকেই ভোগ্য ও সেবাপণ্যের বাজার চীন আয়ত্ত করেছে। চীনকে বিশ্ববাসী জেনে আসছে মহাপ্রাচীরের দেশ, গোবি মরুভূমি, ‘দুঃখের’ হোয়াংহো নদীর দেশ, কাগজ ও বারুদ আবিস্কার এবং আয়তন ও জনসংখায় সর্ববৃহৎ দেশ হিসেবে। আর বর্তমানে সর্বাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জয় করে সুলভ মূল্যে ব্যাপক বাজার চাহিদা নিজের আয়ত্তে রেখেছে চীন। তবে বড়ত্ব দিয়ে অন্যকে খর্ব না করাই চীনা রীতি রেওয়াজ ঐতিহ্য ও আদর্শ।
ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ জানান, বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব হাজার বছরের। চীনের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ভৌগোলিকভাবে সহজ হলেও বাস্তবে কঠিন। যা বলতে গেলে ‘বাড়ি কাছে- ঘাটা দূরে’ অবস্থা। অথচ চট্টগ্রাম থেকে সোজা পূর্বদিকে যেতে থাকলে মাত্র ৬শ’ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে পূর্বচীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী অপরূপ সৌন্দর্যে মায়াময় বাণিজ্যিক নগরী কুনমিং। যেটি চীনে যেন অবিকল একখÐ চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের কিছু অংশের উপর দিয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মিত হলে কয়েকদিনের মধ্যেই দুই দেশের পণ্যসামগ্রী পৌঁছে যাবে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগে পরিবহন খরচও অর্ধেকে হ্রাস পাবে। অথচ বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী পরিবহনে এখন শিপিং রুটে দীর্ঘ ঘুর পথে ১৫-২০ দিন থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। বাংলাদেশ-চীন বর্তমান সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দর-শিপিং, ব্যবসায়-বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি কলা-কৌশল বিনিময়, সেবাকাত, কৃষি-খামার, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, পর্যটন ও মানবদক্ষতা উন্নয়নে দেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনীতিতে খুলে যাবে সমৃদ্ধি অর্জনের বহুমুখী দ্বার। সহযোগিতার মেলবন্ধনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদীয়মান ‘নিউক্লিয়াসে’ পরিণত হবে সমগ্র বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। অর্থবহ বাণিজ্যিক রাজধানীতে উন্নীত হবে চট্টগ্রাম।
বিশেষত গত ১৪ অক্টোবর’১৬ইং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিন পিং কর্তৃক যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল, আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক জোন উদ্বোধন এবং গত ৬ মে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সুপরিসর বোয়িং বিমানযোগে সেখানে সফর এবং ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত বিশ্বের সবচেয়ে নিরবচ্ছিন্ন-দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন চীনের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগের উদ্যোগকে একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরকে স¤প্রসারণ করে পরিকল্পিত পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল, প্রস্তাবিত সোনাদিয়া (অথবা মাতারবাড়ি) গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির তাপবিদ্যুৎ মহাপ্রকল্প কাম এলএনজি টার্মিনাল, সোনাদিয়া ও জালিয়ার দ্বীপে বিদেশিদের জন্য বিশেষায়িত পর্যটন পল্লী, চট্টগ্রামস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারির জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন ও কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন ইত্যাদি প্রকল্প-পরিকল্পনাকে ঘিরে চীনের সাথে যোগাযোগ দ্রæতায়িত করা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আরো শাণিত হতে যাচ্ছে। শিগগিরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিমানবন্দরের সাথে চীনের কুনমিং নগরীর আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে এমনটি আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হতে পারে প্রচুর এবং প্রচুর। ‘এক চীন- এক নীতি’ অনুসরণ করে দেশটি এখন সুসমৃদ্ধ। এর দ্বারা বাংলাদেশ লাভবান হতে পারবে। বিশেষ করে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং সিটির সাথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব সড়কপথে খুবই কম এবং তা সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে চীনের সাথে আদান-প্রদানের সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে উদঘাটন করতে পারে। এরফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, সেবা খাত, প্রযুক্তি, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি সুসমৃদ্ধ হবে। তবে এরজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
চট্টগ্রামের বিশাল পশ্চাৎভূমি
চীনের সাথে ঐতিহাসিক ‘সিল্ক-রুট’সহ একাধিক সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। এর পুনঃস্থাপনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা সম্ভব। সর্বদক্ষিণে টেকনাফ থেকে উত্তরে হাটহাজারী-মিরসরাই পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম পরিণত হতে পারে দেশের ইকোনমিক জোনে। চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ অঞ্চলে সুবিশাল এক ‘হিন্টারল্যান্ড’ পশ্চাৎভূমি। কেননা ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানগত পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলটি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইউনানসহ চীনের বিরাট এলাকা, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, উত্তর-পূর্ব ভারত, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের বন্দর-সম্পদ ও অপরূপ পর্যটন নিসর্গ সদ্ব্যবহারের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে দেশের রফতানি বাণিজ্যের পরিধি প্রসারের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্টারল্যান্ড। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চট্টগ্রামে একবার নাগরিক সমাবেশে স্মরণ করিয়ে দেন, ১০ জানুয়ারী’১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪র্থ দিনেই (১৪ জানুয়ারী) দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা করেছিলেন- “বাংলাদেশ হবে এবার এশিয়ার সুইজারল্যান্ড। চট্টগ্রাম বন্দরের উপর এ অঞ্চলের দেশসমূহকে নির্ভর করে চলতে হবে। বাংলাদেশ তাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে”। আর এখন এরজন্য প্রয়োজন শুধুই সময়োপযোগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সরকারি-বেসরকারি মিলিত উদ্যোগের।
সহজতর যোগাযোগের বিকল্প নেই
চট্টগ্রাম বন্দর, বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, পর্যটনের বিশাল সম্ভার, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ এ অঞ্চলের অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ ‘হিন্টারল্যন্ড’ বা ‘পশ্চাৎভূমি’র সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা এবং সরকারের নীতি নির্ধারকমহল এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিগত ২০১০ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে শীর্ষ বৈঠক এবং কুনমিং সিটিতে তাঁর প্রাণবন্ত ও সফরের মধ্যদিয়েই সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সেই গুরুত্বের সুস্পষ্ট প্রতিফলন বেরিয়ে আসে। প্রসঙ্গত সেই রাষ্ট্রীয় সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ বিগত ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে চীনের পাওনা সমুদয় ঋণ মওকুফের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বেইজিং।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে পূর্ব চীনের বাণিজ্যিক নগরী কুনমিংয়ের সরাসরি সড়কপথের দূরত্ব মাত্র ৬শ’ কিলোমিটার হলেও তা এখনও দূরতিক্রম্য রয়ে গেছে। কক্সবাজারের ঘুনধুম- তমব্রæ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের প্রবেশ এবং এরপর বুচিদং-ম্রাউ-আরাকান গিরিপথ অ্যান উপত্যকা হয়ে ইরাবতী নদীর উপর দিয়ে মান্দালয়-পিউলিন হয়ে চীনের মুসে সীমান্ত শহরে পৌঁছালেই সরাসরি খুলে যাবে কুনমিংয়ের মধ্যদিয়ে মহাচীনে প্রবেশের পথ। এক্ষেত্রে শুধুই বাধা আরাকান গিরিপথ। মহাসড়কের উপযোগী প্রশস্ত করা হলেই সরাসরি চীনের সাথে সহজতর সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হতে পারে। শতবছর আগে এই রুটে যুদ্ধ-বিগ্রহে আন্তঃদেশীয় সেনাযাত্রায় দূরপাল্লার অভিযান পরিচালিত হয়। এখন প্রয়োজন বাণিজ্যিক সেতুবন্ধনের জন্যই কানেকটিভিটির মাধ্যমে সেই লুপ্ত-প্রায় অথচ সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করে আধুনিকায়ন।
বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সরাসরি মহাসড়ক যোগাযোগ এবং বিদ্যমান চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথকে কক্সবাজার পর্যন্ত স¤প্রসারণের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে চীনের সাথে সংযোগ সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বর্তমান সরকার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। তাছাড়া চীনের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহযোগিতায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই কানেকটিভিটির উন্নয়ন হলে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে দ্বিগুণ-তিনগুণ সময় সাশ্রয় হবে। আর্থিক অপচয় রোধ হবে ব্যাপক।
সরকারি সূত্র জানায়, কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দরকে কাজে লাগানো ও চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রসারের জন্য এশিয়ান হাইওয়ের টেকনাফ রুটটির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উদাসীনতার কারণে এশিয়ান হাইওয়ের রুটটি সংশোধন হয়নি। এ কারণে মিয়ানমার রুট নিতে এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবুও আমাদের নিজেদেরই প্রয়োজনে রামু-টেকনাফ পর্যন্ত মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মিয়ানমারকেও এ রুটের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে চীনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ইতোপূর্বে চীনের একাধিক উচ্চপর্যায়ের টিম কক্সবাজারের প্রস্তাবিত ‘মৈত্রী সড়ক’ হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে রামু-উখিয়া-টেকনাফ সফর করেন।
অর্থনীতির নতুন নতুন ক্ষেত্র
শিপিং সার্কেলে জানা যায়, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর-সম্পদ হচ্ছে ব্যাপক সম্ভাবনার ধারক। চীন, ভারত (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দি সেভেন সিস্টার বা সুবিধাবঞ্চিত ৭টি রাজ্য), নেপাল, ভূটান, মিয়ানমারসহ স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) সুবিশাল পশ্চাৎভূমির সুবিধা সদ্ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতির ভাগ্য পাল্টে দেয়া সম্ভব। বন্দরের সক্ষমতা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনবহুল বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বাজার পাবে। কেননা নিকটতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য যদি মানসম্পন্ন ও সুলভ হয় তাহলে এ অঞ্চলের ভোক্তাসাধারণ স্বভাবতই সেদিকে আকৃষ্ট হবে। এক্ষেত্রে চীনে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হস্ত ও কুটির শিল্প, তৈরী পোশাক, ওষুধ ও পেটেন্ট দ্রব্য, সৌখিন ও গৃহস্থালী পণ্যসামগ্রী ইত্যাদি হরেক পণ্যের বাজার চাহিদা সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে চীনা উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে সুলভ শ্রম, স্থান সংকুলান সুবিধাসহ বিনিয়োগ বান্ধব সুযোগ গ্রহণ করে হালকা প্রকৌশল, সংযোজন খাতসহ শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে বিশেষত শিল্প স্থানান্তর (রি-লোকেট) করতে আগ্রহী হবেন। এ যাবত বিভিন্ন সময়ে চিটাগাং চেম্বারে আগত চীনা বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের বিনিয়োগকারী-শিল্পোদ্যোক্তারা চট্টগ্রামে শিল্প রি- লোকেট করার আগ্রহ ব্যক্ত করে গেছেন।
চীনা সহায়তায় বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর সুবিধার স¤প্রসারণ ঘটবে। একইসাথে কর্ণফুলী, শংখ ও হালদা নদীর তীর, আনোয়ারা, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী অঞ্চলসমূহ হয়ে সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফ পর্যন্ত নৌ ও স্থল বন্দর বিস্তৃতি লাভ করবে। এসব স্থানে আরো শিল্প-কারখানাও গড়ে উঠবে। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর উপকূল ঘেঁষে বহুমুখী বন্দর সুবিধায় টেকনাফে জেটি-বার্থ, টার্মিনাল, শেড-ইয়ার্ড নির্মিত হবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ায় শিপিং বাণিজ্যে নতুন আকর্ষণীয় রুট হিসেবে বিবেচিত হবে। বিনিময়ে বিপুল অংকের লেভি, সার্ভিস চার্জ, শুল্ককর আহরণ এবং ব্যাপকভিত্তিক বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের পথ হবে অবারিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।