Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে আলোচনায় ভিশন ২০৩০

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কর্মী-সমর্থকরা উদ্দীপ্ত : ‘বিএনপির রূপকল্প জাতির প্রতিটি স্তরের মানুষের সাথে সামাজিক চুক্তি’ -আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
শফিউল আলম : ‘বিএনপি সত্যিকারের জনগণের দল। দেশের উন্নয়ন জনগণের কল্যাণই বিএনপির স্বপ্ন। বেগম খালেদা জিয়া যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন তাতে সেই স্বপ্ন পূরণের পরিকল্পনা আছে। এটিই প্রমাণ করে বিএনপি সবসময় ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা অত্যন্ত খুশি, এখন দলের ভিশন ২০৩০-এর আলোকে উন্নয়নের রূপরেখা ও কর্মসূচি জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারবো। দলকে আরও শক্তিশালী করে আগামীতে দেশ পরিচালনা ও গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য বিএনপি আবারও প্রস্তুত হবে’। বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০ রূপকল্প নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে গতকাল বুধবার বিকেলে নাসিমন ভবনস্থ দলের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সামনে থাকা কয়েকজন কর্মী- রিয়াদ আবেদীন, মোঃ নুরুল আফসার, রাকিব হাসান, শিবলী নোমান ও আবুল কালাম আজাদ কথাগুলো বলেন। বিএনপির নগর কার্যালয় শুধুই নয় ভিশন ২০৩০ ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্বত্র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জোরালো হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। এ মুহূর্তে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দারুন উদ্দীপ্ত। রাজনীতি সচেতন চাটগাঁবাসী একে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছেন।   
বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১০ মে (বুধবার) ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করার পর গত এক সপ্তাহে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাজনীতি সচেতন সর্বস্তরের জনগণ কৌতূহল নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরাও করছেন আলোচনা-সমালোচনাও। অন্যান্য ছোট-মাঝারি দল কিংবা জোট, অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও এ বিষয়ে পরস্পর বলাবলি শুরু করেছেন। তবে এরমধ্যেই অনেকের কথাবার্তায় উঠে এসেছে, ভিশনে কিছু কিছু সমালোচনার দিকও নেই তা নয়। কথা উঠেছে ৯২ ভাগ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এদেশে ইসলামী আদর্শ ও ভাবধারার প্রতিফলন ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করতে বিএনপি কি পদক্ষেপ নেবে তার উপস্থাপন আশা করা হলেও রূপকল্পে তা বলতে গেলে অনুপস্থিত। আগামী নির্বাচনের আগে তা আরও পরিস্কার করে বিএনপিকে জনগণের কাছে যেতে হবে।   
রাজনৈতিক মহলের অভিজ্ঞজনেরা বলছেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০-এ বাংলাদেশের ভবিষ্যতমুখী এবং নির্বাচনমুখী রাজনীতির ইতিবাচক দিকগুলো ফুটে উঠেছে। ভিশনের মাধ্যমে বিএনপি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জনে সক্ষম হবে। বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০-কে ঘিরে রাজনৈতিক পন্ডিত ও বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্পটি হচ্ছে জাতির প্রতিটি স্তরের মানুষের সাথে সামাজিক চুক্তি। এতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ১৯ দফা কর্মসূচির প্রতিফলন আছে। সময়ের পরিবর্তনে নতুন রূপরেখা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ভিশন ২০৩০ সারাদেশের নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং জনগণের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা এখন খোলা মন নিয়ে মাথা উঁচু করে কর্মসূচি তুলে ধরতে পারবেন’।    
এদিকে ঘোষিত ভিশন ২০৩০ রূপকল্পকে ঘিরে আলাপচারিতায় চট্টগ্রামের রাজনীতি সচেতন অনেকেই একে বিএনপির আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ‘ছায়া’ হিসেবে দেখছেন। ৩৭টি ইস্যুতে ২৫৬ দফা নিয়ে ভিশন ২০৩০ বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে দলের কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত ভিশন ২০৩০ বইটি চট্টগ্রাম মহানগরী, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন তথা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছেনি। এ যাবত মূলত সংবাদপত্রসহ মিডিয়ায় যতটুকু এসেছে তা নিয়েই এখানে-সেখানে আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। তবে নগর ও জেলার নেতৃবৃন্দ ভিশন নিয়ে সভা-সেমিনারের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তারা আশা করছেন, ভিশন ২০৩০ দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা দেবে। রাজনীতিতে আসবে নতুন ধারা এবং অর্থনীতিতে সূচনা হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের। রাজনৈতিক ‘খরা’ ও গৎবাঁধা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানুষ আরও আস্থাশীল হবে বিএনপির উপর। চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা জানান, গোড়তে সমাজের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীদের মাঝে ভিশন ২০৩০ তুলে ধরা হবে। ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে পৌঁছানো হবে। এরজন্য দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সাথে কর্মকান্ড সমন্বয় করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দিক-নির্দেশনা এসেছে। আসন্ন মাহে রমজানকে কাজে লাগিয়ে ভিশন ২০৩০ রূপকল্প প্রচার, গণসংযোগের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণের কাছে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরতে এবং জনগণের এ ব্যাপারে মনোভাব, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো কেন্দ্রে জানাতে বলা হয়েছে।   
তবে তৃণমূলে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে মামলা, হুলিয়া থাকার কারণে কীভাবে ভিশন ২০৩০ রূপকল্প নিয়ে তারা মাঠে-ময়দানে নামতে পারবেন তা নিয়ে কম-বেশী সংশয় তৈরি হচ্ছে।            
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী       
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে সাক্ষাতকারে আরও বলেন, বিএনপির রাজনীতি উন্নয়নের রাজনীতি। বিএনপির প্রতিষ্ঠা উৎপাদনের রাজনীতির অঙ্গীকার ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে। ঘোষিত ভিশন ২০৩০ তে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যক্তিখাতের উন্নয়ন ও বিকাশ, সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। শহীদ জিয়ার ১৯ দফায় ও তার দিক-নির্দেশনা ছিল। শহীদ জিয়ার সরকারের সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৭ ভাগ। সেই ধারা অব্যাহত থাকলে এখন ১০ ভাগ অতিক্রম হতো। ভিশনে প্রত্যেক শ্রেণীর জনগণ যেমন কৃষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধীসহ সকলকে নিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ভাবনার কথাগুলো আছে। শুধুই ভাবনা নয়; পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের রূপরেখাও দেওয়া হয়েছে। ভিশন ২০৩০ নিয়ে দল ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে পারবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, দল তো শক্তিশালী আছেই। সমস্যা হলো গণতন্ত্রহীনতা, আইনের শাসনের অভাব, বিচারহীনতা, মানবাধিকারহীনতা, গণতন্ত্রেও পরিবর্তে সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থান।
ডা. শাহাদাত হোসেন       
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ ঘোষণায় আওয়ামীলীগ অতিবেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যেখানে এতো চিন্তিত তখন বুঝতে হবে এটি জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরা সব জায়গা থেকে সাড়া পাচ্ছি। এখন থেকে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে আমরা জনগণের আরও কাছাকাছি গিয়ে ভিশন ২০৩০ রূপকল্পকে তুলে ধরবো। এর মধ্যদিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে। তিনি ভিশন ২০৩০ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রূপকল্প উল্লেখ করে বলেন, এরমধ্যে রয়েছে রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, নতুন প্রজন্ম, প্রযুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচারসহ সবধরনের বিষয়ে জনগণের চিন্তা-ভাবনা ও আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন রয়েছে।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরী        
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেছেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ রূপকল্প ঘোষণার পর জনগণের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই সর্বস্তরের মানুষের এ নিয়ে আগ্রহ লক্ষ্য করছি। মিডিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ  ও তা নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ। এটি ইতবাচক দিক। তিনি বলেন, ভিশন ২০৩০ কে কেন্দ্র করে আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু হবে। এতে রয়েছে যুগোপযোগী পরিকল্পনা। দেশ পরিচালনায় জনগণের কল্যাণে প্রতিটি ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা আছে। ইনশাআল্লাহ এসব নীতিমালা সুফল বয়ে আনবে। এখন আমরা ভিশন ২০৩০ রূপকল্পকে জনগণের কাছে আরও বিস্তারিত ও খোলাখুলি আলোচনায় তুলে ধরবো। এ নিয়ে গণমুখী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী       
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০ রূপকল্প বর্তমান ও আগামীর রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য-সচিব ও ড্যাব-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী। গতকাল ইনকিলাবকে তিনি বলেন, ভিশন নিয়ে জনগণের আগ্রহ এবং প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেছেন, বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশ্নটি আসে না। কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের গুম-খুন, হামলা-মামলা, নিপীড়নের রাজনীতি সত্তে¡ও বিএনপি এখনও জনসমর্থনে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সরকারি দলে কোন রাজনীতি নেই, তারা রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়ে গেছে। কারণ তাদের কর্মকান্ড পুলিশ আর আমলার মধ্যে সীমিত। তিনি জানান, পেশাজীবী সংগঠনগুলো ভিশন ২০৩০ রূপকল্প সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সবশ্রেণীর পেশাজীবীদের মাঝে তুলে ধরবে। জনগণই এর ভাল-মন্দ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ