পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাহিদার তুলনায় রফতানি এখনো সীমিত : চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর সুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে
শফিউল আলম : প্রতিবেশী দেশ নেপালের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ লেনদেন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে আছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, নেপালে বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রী রফতানি আয় বেড়েই চলেছে। আর হ্রাস পাচ্ছে আমদানি। উভয় দেশের সরকারের ব্যবসা-বান্ধব নীতি বিশেষ করে ঢাকার কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিসহ দূরদর্শী কিছু পদক্ষেপের ফলে নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে শুধুই আসেনি; বরং বাণিজ্যের সূচকগুলো ঊর্ধ্বগামী। তবে দেশটিতে বাংলাদেশের উৎপাদিত হরেক ধরনের ভোগ্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, সৌখিন, গৃহস্থালী পণ্য ও নির্মাণ সামগ্রীর প্রকৃত বাজার চাহিদা রয়েছে আরও ব্যাপক-বিস্তৃত। সুযোগ রয়েছে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণের। পণ্যসামগ্রী আমদানিতে নেপাল একচেটিয়া ভারত-নির্ভরতা (৬৩ শতাংশ) কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরফলেও দেশটিতে বাংলাদেশের বাজার চাহিদা ও সম্ভাবনা বিস্তৃত হচ্ছে। তবে সেই চাহিদার তুলনায় রফতানি বাজার এখনও সীমিত রয়ে গেছে। নেপাল বন্দর সুুবিধা-বঞ্চিত ভূমি পরিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) দেশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারিত হতে পারে। বন্দর ব্যবহার করে নেপালে অনেক পণ্য পুনঃরফতানিও হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের দ্বিপক্ষিক বাণিজ্যের হিসাব অনুযায়ী নেপালে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে রফতানি বাবদ মোট আয় হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর আমদানি হয়েছে ১০৭ কোটি ৭ লাখ টাকা মূল্যের। এরআগে ২০১৫ সালে নেপালে রফতানিতে আয় আসে ২০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং আমদানি হয় ১৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের। ২০১৪ সালে নেপালে রফতানি হয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পণ্য এবং আমদানি করা হয় ১৬১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, সাবান, মেলামাইন, হোম টেক্সটাইল, আসবাবপত্র, পোশাক সামগ্রী প্রভৃতি নেপালে রফতানি হচ্ছে। নেপাল থেকে আমদানি হচ্ছে ডাল, মসলাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার বাণিজ্যিক পরিধি বাড়ানোর জন্য দু’দেশ অধিকসংখ্যক শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, পর্যটন খাত ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে নেপালের জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের রফতানি বাজার স¤প্রসারণের সুযোগ এনে দিয়েছে দেশটির পরিবর্তিত বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি। আর তা হলো, নেপাল ভারত থেকে আমদানি ধাপে ধাপে কমিয়ে প্রতিবেশী অপরাপর দেশে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে চায়। নেপালের আমদানিকৃত পণ্যের ৬৩ শতাংশই আসে ভারত থেকে। আর ১৭ শতাংশ আসে চীনের। অন্যান্য দেশের পণ্য আনা হয় অবশিষ্ট ২০ ভাগ। এরমধ্যে (২০ ভাগের) বাংলাদেশের রফতানির হার মাত্র শূণ্য দশমিক ৫ ভাগ। গতবছরে নেপাল বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৮৮৯ কোটি ডলারের পণ্যসামগ্রী আমদানি করে। এরমধ্যে এককভাবে ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে ৫৮৫ কোটি ডলারের। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন থেকে ১২৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। এখন বাংলাদেশের পক্ষে যদি নেপালে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যের ২০ শতাংশে এবং আমদানিতে সেদেশের ভারত-নির্ভরতা হ্রাস নীতির সুফল পেতে হয় তাহলে রফতানি পণ্যের সংখ্যাগত ও পরিমাণগত আওতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ও নেপালের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সময়োচিত, দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করাই এ মুহূর্তে অপরিহার্য বিষয়। এরজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে কর্মপরিকল্পনা এবং লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদগণ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে বলেন, নেপাল আমাদের প্রতিবেশী দেশ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে হলে প্রথম দরকার নেপালের সাথে কানেকটিভিটি বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে প্রস্তাবিত চার দেশীয় (ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটান) সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার হলে হলে রফতানি আরও প্রসারিত হবে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়ে আমরা নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে পারি। বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়লে দুই দেশের টেকসই উন্নয়ন হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ নেপালের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক, যদি সহজ যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু ভারত তো নেপালে যাবার সহজ ট্রানজিট সুযোগটি দিতে চাইছে না। এতে করে বিরাট সম্ভাবনা আটকে আছে।
আমদানি-রফতানিকারকদের সূত্র জানায়, নেপালের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। ভারতের সাথে লাগোয়া নেপালের স্থল সীমান্ত পথে যোগাযোগ সুবিধা সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ট্রানজিট হিসেবে কাজে লাগানো হলে ব্যাপক বাণিজ্যের দ্বার উদঘাটিত হবে। নেপালে কয়েক হাজার কোটি টাকার নিত্য ও ভোগ্যপণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে। কেননা বাংলাদেশের হরেক পণ্যসামগ্রীর ব্যাপক বাজার চাহিদা রয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে। বাংলাদেশের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, পানীয়, রাসায়নিক দ্রব্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, স্টিল ও আয়রন সামগ্রী, সাবান, মেলামাইন, প্লাস্টিকজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল ও পোশাক সামগ্রী, খেলনা, পাটজাত দ্রব্য, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পপণ্য, বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য, মোবাইল ফোন ও আইটি সামগ্রী ইত্যাদির ব্যাপক বাজার চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া প্রচলিত ও অপ্রচলিত অনেক ধরনের পণ্য বা সেবা পণ্য নেপালে বাজার পেতে পারে। অপরদিকে নেপাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাল, মসলা, হারবাল দ্রব্যাদি বাংলাদেশে কম দামে আরও বেশি হারে আমদানি করা সম্ভব। প্রতিযোগিতামূলক পণ্য বাজারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মধ্যদিয়ে লাভবান হবে উভয় দেশ।
বন্দর সুবিধাবিহীন ভূ-পরিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) নেপালকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ফি, লেভি, মাসুল, চার্জ বা ট্যারিফ বাবদ বিপুল আয় আসবে। বর্তমানে নেপালে ভারতের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দীর্ঘ ঘুরপথে আমদানি পণ্য পৌঁছানো হয়ে থাকে। অথচ সেখানে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সড়কপথে মাত্র সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অনায়াসেই মালামাল পরিবহন করা সম্ভব। এরজন্য শুধু বাংলাদেশ থেকে নেপালের মাঝখানে ভারতের শিলিগুড়ির (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত) কাছে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত মাত্র ২২ কিলোমিটার করিডোর সড়ক পাড়ি দিতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।