পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে ১২ বিদেশি নাগরিকসহ ১৪ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-১-এর একটি দল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
গতকাল শুক্রবার র্যাব সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক মোবাইল ফোন সেট, ল্যাপটপ, মার্কিন ডলার ও দেশীয় টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারক চক্রটি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতো। তুহিন মাসুদ জানান, ১২ জন বিদেশির মধ্যে নাইজেরিয়ার আটজন, কঙ্গোর একজন ও ক্যামেরুনের তিন নাগরিক রয়েছেন। বাকি দুজন বাংলাদেশি।
গ্রেফতারকৃত ১২ বিদেশী আইব্যা (৩০) নাইজেরিয়ান, কেসি (৩০) নাইজেরিয়ান, এাডউইন (৩৫) নাইজেরিয়ান, ইমনোয়ার (৩৩) নাইজেরিয়ান, কসমডস আলকুজমুজিন ওকিউলিজি (৫১) নাইজেরিয়ান, জোসোয়া (২৭) নাইজেরিয়ান, ইব্রাহিম (২৭) নাইজেরিয়ান, জাসোনামা (৪১) কঙ্গো, বিসেন্স (২৯) নাইজেরিয়া, ওসমান (২৯) ক্যামোরুন, সানজো (৩৬) ক্যামেরুন এবং আনট প্রিজো (৪২) ক্যামেরুনদের বসুন্ধরা ও উত্তরার বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব, ওয়াইফাই (রাউটার), ডিভিটি, পাওয়ার ব্যাংক, পাসপোর্ট এবং ডলারসহ বাংলাদেশী টাকা উদ্ধার করা হয়। উক্ত দ্রব্যাদি, ডলার এবং বাংলাদেশী টাকা তারা বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহার করে।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উক্ত কঙ্গো, নাইজেরিয়ান, ক্যামেরুন এবং বাংলাদেশি দুই নাগরিকসহ প্রতারক চক্র বাড়ি নং-৯, রোড নং-১৫, সেক্টর নং-১৪, উত্তরা হতে তাদের সমস্ত প্রতারণা কার্যক্রম যৌথভাবে পরিচালনা করত। বাংলাদেশীদের মাধ্যমে মূলত বর্ণিত চক্রটি টার্গেট খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে টার্গেটপ্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদের ফেসবুক আইডি বের করে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। এসব ক্ষেত্রে তারা খুবই সুদর্শন এবং আমেরিকা অথবা ইউরোপের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয়। বন্ধুত্ব গাঢ় হওয়ার পর তার প্রেমের অভিনয় এবং বিভিন্ন উপহার প্রেরণের মাধ্যমে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার পর এক পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
সম্প্রতি এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিক ধরা পড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদেশিদের মনিটর করছি। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে; তারা ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের ধরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। বিদেশিদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কাউকে নজরদারির বাইরে রাখছি না, সে যেই হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের এক দিনের মধ্যে র্যব ১২ বিদেশী প্রতারককে গ্রেফতার করা হলো।
র্যাব আরো জানায়, প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে ছদ্মনামে ব্রিটিশ নাগরিক পরিচয়ে খুলনায় বসবাসরত প্রাইভেট কোম্পানির মহিলা চাকরিজীবী এবং অন্য আরেক জন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনী বিভাগে কর্মরত মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরবর্তীতে তারা ফেসবুক, হোয়াইটস অ্যাপ, ভাইবার ও ট্যাংগো যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করে। বন্ধুত্বের সূত্রে অপরাধী লন্ডন হতে কিছু উপহার সামগ্রী বিমানযোগে ঢাকা পাঠিয়েছেন বলে খুলনার ভিকটিমকে জানায়। এ প্রেক্ষিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় মোবাইল নং ০১৬২৯৩৫৮১৬৮ হতে খুলনার ভিকটিমকে মোবাইলে জনৈক সাইফুল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা কাস্টমস্ অফিস হতে পরিচয় দিয়ে জানায় যে, লন্ডন হতে তার নামে একটি পার্সেল এসেছে, পার্সেলটির পরিবহন এবং অন্যান্য চার্জ বাবদ ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। ওই খরচের টাকা প্রেরণ করলে পার্সেলটি তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। তখন খুলনার ভিকটিম সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করে টাকা পাঠাতে রাজি হন। তখন জনৈক সাইফুল উক্ত টাকা প্রেরণের জন্য তাকে সিটি ব্যাংক, ঢাকা-এর একটি অ্যাকাউন্ট হিসাব নম্বর-২৮০১৫৭০৭৪৬০০১ (যার হোল্ডারের নাম নাইমুল হাসান খান) প্রদান করেন। তার পর খুলনার প্রাইভেট কোম্পানির মহিলা চাকরিজীবী বিকাল আনুমানিক ১৫৩০ ঘটিকায় উক্ত অ্যাকাউন্টে বর্ণিত টাকা প্রেরণ করেন এবং জনৈক সাইফুল টাকা প্রাপ্তি হয়েছে বলে তাকে অবগত করে। পরে জনৈক সাইফুলের কথামতো পার্সেলটি না পাওয়া গেলে তার মোবাইল নম্বরে কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর পর খুলনার ভিকটিম খুলনা হতে ঢাকা চলে আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় পুনরায় মোবাইল ০১৭৯৭০৯৫৭৯৪ হতে রাসেল নামে পরিচয় দিয়ে খুলনার প্রতারিত মহিলা ভিকটিমকে ফোন করে জানায় যে, পার্সেলটি প্রেরণ করতে দুই-চার দিন সময় লাগবে। কিন্ত তখন তিনি তার কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারেন যে, সাইফুল নামে ওই ব্যক্তিটিই তাকে রাসেল নামে পরিচয় দিেেচ্ছন। তখন সে তাকে জানায় যে, আমি ঢাকায় আছি বিমানবন্দরে আপনার সাথে দেখা করতে চাই, একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কলটি কেটে দেয় এবং তার মোবাইলটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে খুলনার মহিলা ভিকটিম উক্ত পার্সেলের সন্ধানে বিমানবন্দর কাস্টমস অফিসে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কোনো তথ্য জানা নেই বলে অবগত করে। তখন বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হলে তিনি র্যাব-১ এর শরণাপন্ন হন। অতপর র্যাব-১, উত্তরা ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রথমে মাসকট প্লাজা, উত্তরা, থেকে মামুন মোকারম (৩৮) এবং সুলতান মাহমুদকে (২৬), নিকুঞ্জ-২ (স্থায়ী ঠিকানা-সাঘাটা, গাইবান্ধা) হতে আটক করে।
র্যাব জানায়, একই প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলা ডাক্তারের নিকট হতে এ প্রতারণাকারী চক্র ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।