পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে গত সোমবার বিকালে হাসান শাহরিয়ার হৃদয় (৬০) নামের আত্মহননকারী ব্যক্তি আসলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন বলে জানা গেছে। তার লাশ পরদিন কক্সবাজারে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়েছে। ৮ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করলেও নিজের আসল পরিচয় দেননি। পরে আত্মীয়-স্বজন ফোন করে পুলিশকে আসল পরিচয় প্রকাশ করে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার তার একমাত্র ছেলে রাজিব কক্সবাজারে এসে পিতার কবর জেয়ারত এবং আত্মহত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি পিতার কবর কক্সবাজারেই রাখতে চান বলে জানান। রাজিব মোবাইল কোম্পানী টেলিটকের একজন কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সাবেক এই সচিব ১৯৯৬ সালের বহুল আলোচিত জনতার মঞ্চের একজন সমর্থকও ছিলেন। তিনি এসময় বান্দরবান জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মরহুম মোঃ দেলোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন পার্বত্য বান্দরবান জেলায়।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুদকের আলোচিত সচিব ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ার লুন্তি গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত সোনা মিয়া। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এই মেধাবী আমলা ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৫০ জন আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে সন্দেভাজন দুর্নীতিবাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও তা প্রকাশ করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। এই কারণে কারো কারো মতে এটি কোন মহলের পরিকল্পিত হত্যাও কান্ডও হতে পারে আশঙ্কা। তবে পুলিশের ধারণা, পরিবারের অবহেলার কারণে তিনি কক্সবাজার এসে একা অবস্থান করতেন। আর পরিবারের এই অবহেলাই তার আত্মহত্যার কারণ। কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান- ‘আত্মহত্যার ব্যাপারে স্বজনেরা কিছুই স্বীকার করতে রাজি নয়’। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই আমলা পরিচয় গোপন করে কক্সবাজারেই কেন আত্মহত্যা করেছেন তা জানা যায়নি। পরদিন বেওয়ারিশ হিসাবেই তার লাশ স্থানীয় বড় কবরস্থানে (কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কবরস্থান) দাফন করা হয়েছে।
গত (২৯ ফেব্রুয়ারী) সোমবার কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের সী-হ্যাভেন গেস্টহোম নামের এক হোটেলে হাসান শাহরিয়ার হৃদয় (৬০) পরিচয়ে সুসাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তাতে তিনি আত্মহত্যার কোন কারণ উল্লেখ করেননি। এর আগে তিনি ২৭ দিন ধরে ওই হোটেলের ১০১ নং কক্ষে অবস্থান করছিলেন বলে হোটেল সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ ওই দিন কক্ষটির দরজা ভেঙ্গে বৈদ্যুতিক ফ্যানের সাথে গামছা দিয়ে ফাঁস লাগানো সচিবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হোটেল সী হ্যাভেন গেস্ট হোমের ম্যানেজার মকবুল হোসেন জানান, দেলোয়ার হোসেন ২ জানুয়ারীর থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসের জন্য ২৪ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে তিনি হোটেল কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। এ সময় সচিবের সাথে মিঠুন নামের একজন আত্মীয় পরিচয়ধারীও ছিলেন বলে জানা গেছে। মিঠুন নামের এই ব্যক্তি কে তার সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ইংরেজিতে লেখা সুইসাইড নোটে তিনি তার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি। সুইসাইড নোটে তিনি উল্লেখ করেন- ‘বেঁচে থাকা অর্থহীন, মরে যাওয়াও নিরর্থক। জীবনে বেঁচে থেকে কী লাভ’। তিনি আরো লিখেন- ‘আজ হলেও মরব, কাল হলেও মরব। একটু আগে মরে গেলে অসুবিধা কী?’। এভাবে তিনি তার মৃত্যু বা আত্মহত্যা নিয়ে বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক’ কথা লিখেছেন বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ওসি আসলাম হোসেন।
ওসি জানান, কোন পরিচয় না পাওয়ায় উদ্ধার হওয়া লাশটি মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে বেওয়ারিশ হিসাবে শহরের বড় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, পোস্ট মর্টেম করে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
লাশ দাফনের পর তার কাছে পূর্বে পাওয়া এক মোবাইল নম্বর থেকে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বলে জানান। তিনি ১/১১ এর সময় দুদকের সচিব ছাড়াও পরবর্তীতে সাভারের বিপিএটিসির রেজিস্ট্রার ছিলেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি দুদকের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেন- এ কথা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর উনার কোন ছেলে-মেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে এক আত্মীয় যোগাযোগ করেছে।
জানা যায়, সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেনের এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। একমাত্র ছেলে রাজিব হোসেন বৃহস্পতিবার পিতার কবর দেখতে কক্সবাজারে এসেছেন। এসময় তিনি তার পিতার কবরটি কক্সবাজারে রাখারই সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। পিতার কবরে পাকা ঘেরাবেড়া দেয়ার বিষয়েও কবরস্থান পরিচালনকারী কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি আলাপ করেন বলে জানা যায়। পরে তিনি পিতার আত্মহত্যার ঘটনাস্থল সী-হ্যাভেন গেস্টহোমও পরিদর্শন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।