Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কোটি কোটি টাকায় সংগৃহীত ১৩টি সী-ট্রাকের নয়টিই বন্ধ

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংগৃহীত ১৩টি সী-ট্রাকের মাত্র ৪টি এখন যাত্রী পরিবহন করছে। ৮টিই পড়ে আছে এসব সী-ট্রাক পরিচালনাকারী রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে। ‘এস-টি সুকান্ত বাবু’ নামের সী-ট্রাকটি সংস্থার নারায়ণগঞ্জ পোতাঙ্গনে পড়ে আছে ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে। ২০১২ সাল থেকেও অন্তত দুটি সী-ট্রাক বিকলাবস্থায় পড়ে আছে। অথচ সরকার এসব সী-ট্রাক সংগ্রহে আর্থিক সহায়তা প্রদান ছাড়াও উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনকে ‘গণদায়বদ্ধ খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ লক্ষ্যে প্রতি বছরই বিআইডব্লিউটিসি’কে নগদ আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে আসছে। অথচ সাগর মোহনার ভোলার মির্জাকালু থেকে লক্ষ্মীপুরের চর অলেকজান্ডার রুটের সী-ট্রাক সার্ভিসটি বন্ধ গত ৪ বছর। অভিযোগ রয়েছে, শুধু ইজারাদারের প্রয়োজনেই সংস্থাটির কতিপয় দায়িত্বশীল মহল এসব সী-ট্রাক পরিচালনায় আগ্রহী। এমনকি হাতেগোনা কয়েকটি  সী-ট্রাক বছরে ৭ মাস ইজারা দিয়ে সংস্থাটি যে অর্থ আয় করে তার কয়েকগুণ অর্থ ব্যয় হয় তার মেরামতে। উপরন্তু বছরের পুরো সময়ের জন্য ইজারা নিয়ে এসব সী-ট্রাক ৭ মাস চালিয়ে অবশিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখছে ইজারাদার। এখানে ইজারাদারের সিদ্ধন্তই শেষ কথা। অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির বানিজ্য ও কারিগরি পরিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা ইজারাদারের স্বার্থে নানা যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেন।
তবে অতীতের ধারাবাহিকতায় ইজারাদারের স্বার্থে আগামী ১৫মার্চের মধ্যে অন্তত দুটি সী-ট্রাক সচল করে যাত্রী পরিবহনে দেয়ার লক্ষে সংস্থার কারিগরি পরিদফÍরের ওপর থেকে নিচের পর্যায়ে যোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবছরই ১৫অক্টোবর শান্ত মওশুম শুরু হলে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের দুটি সী-ট্রাক নানা কারিগরি ত্রুটি নিয়ে অচল বা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। আবার ১৫ মার্চ থেকে অশান্ত মৌসুম শুরুর আগেই ঐসব ‘চলাচল অযোগ্য’ সী-ট্রাক সচল হয়ে যাত্রী পরিবহনে ফিরে আসে। এর পেছনে সংস্থাটির বানিজ্য ও কারিগড়ি পরিদফÍরের কতিপয় কর্মকর্তার ‘অন্য রকম বানিজ্য’ রয়েছে বলে অভিযোগ থাকলেও দায়িত্বশীল মহল কোন মন্তব্য করেননি।  
সমুদ্র পরিবহন অধিদফÍর উপকূলীয় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৬মার্চ থেকে ১৫অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালকে অশান্ত মওশুম হিসেবে চিহ্নিত করে এসময়ে ভাটি মেঘনা থেকে সাগর মোহনা পর্যন্ত এক ইঞ্জিন ও এক স্তরের তলা ও ম্যনুয়াল সুকান বিশিষ্ট অভ্যন্তরীন রুটের নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। এরই আলোকে ঐ সময়কালে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র সী-ট্রাক সমুহকে নিরাপদ হিসেবে চ্ঞ্হিত করে তা চলাচলের অনুমোদন দিয়ে থাকে। তবে সংস্থাটির এসব সী-ট্রাকে কোন ‘জিপিএস’ সহ অনেক অত্যাধুনিক নৌ সরঞ্জামাদী নেই।
সাম্প্রাতিককালে সমুদ্র পরিবহন অধিদফÍরে অনুমোদিত নকশায় নির্মিত ‘এমভি পারিজাত’ নামের একটি বেসরকারী নৌযান বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলের অনুমোদন লাভ করেছে। নৌযানটি ১২মাসই দেশের উপক’লীয় এলাকায় চলাচল উপযোগী বলে সমুদ্র পরিবহন অধিদফÍর অনুমোদন দেয়ার পরে বিআইডব্লিউটিএ তা বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলের সময়সূচীও প্রদান করে। তবে বেসরকারী ঐ নৌযানটি চলাচলে বাধা সৃষ্টির লক্ষে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এপর্যন্ত ৪টি রীট করা হয়েছে দেশর উচ্চ আদালতে। সবগুলো রীটই খারিজ হবার পরে বিলাসবহুল ও নিরাপদ ঐ নৌযানটি চলাচলে কোন আইনগত সমস্যা না থাকলেও একটি মহল নানা প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ঐ নৌযানটি বন্ধে বিআইডব্লিউটিসি’র ইজারাদার ও যাত্রী সেবা(?) ইউনিটের কোন কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকান্ডেরও অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে এ সংক্রান্ত একটি রিটের ফয়সালা কালে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিআইডব্লিউটিসি’র যাত্রী সেবা ইউনিট সম্পর্কে নানা পর্যবেক্ষন প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিসি’র ১৩টি সী-ট্রাকের মধ্যে  ‘এস-টি শেখ কামাল’ দ্বীপজেলা ভোলার শশিগঞ্জ থেকে সাগর বক্ষের মনপুরা রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এছাড়া ‘এস-টি ভাষা শহিদ জব্বার’ চট্টগ্রামের কুমিড়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া রুটে, ‘এস-টি শহিদ শেখ ফজলুল হক মণি’ বয়ারচরÑহাতিয়া রুটে ও ‘এস-টি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ চরচেঙ্গাÑবয়ারচর রুটে চলাচল করছিল।
এছাড়া সংস্থার ৯টি সী-ট্রাকই গত ১মার্চ বন্ধ ছিল। এরমধ্যে কয়েকটি সী-ট্রাক ৪বছর ধরেও বন্ধ বা অচল। ‘এস-টি শেখ রাসেল’ ২০১২-এর নভেম্বর থেকে সংস্থার ২নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। অনুরূপভাবে ২০০২সালে চীন থেকে সংগ্রহ  করা ‘এসটি খিজির-৬’ ২০১২সালের ২৭সেপ্টেম্বর থেকে সংস্থাটির একই ডকইয়ার্ডে রয়েছে। ‘এস-টি সুকান্ত বাবু’ নামের সী-ট্রাকটি সংস্থার নারায়নগঞ্জ পোতাঙ্গনে অনেকটা অচলবস্থায় রয়েছে২০১৪-এর সেপ্টেম্বর থেকে । ‘এস-টি শেখ জামাল’ ২০১৫-এর ৪জানুয়ারী থেকে সংস্থার এক নম্বর ডকইয়ার্ড অচলবস্থায় পড়ে আছে। ‘এস-টি খিজিরÑ৫’ গত ২২অক্টোবর থেকে সংস্থার ২নম্বর ডকইয়ার্ডে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে ঐ সী-ট্রাকটি ভোলাÑলক্ষ্মীপুর রুটের ইজারাদারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ১২ফেব্রুয়ারী থেকে এস-টি খিজির-৭ এক নম্বর ডকইয়ার্ডে পৌছার আগে নৌযানটি ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইজারাদারের কাছে ছিল। কিন্তু শান্ত মওশুম শুরু হওয়ায় নানা খোড়া যুক্তিতে গত মধ্য অক্টোবর থেকে নৌযানটি বন্ধ ছিল।
বরিশালÑলক্ষ্মীপুর রুটের ‘এস-টি খিজির-৮’ গত মধ্য অক্টোবরে নিয়মমাফিক অচল হয়ে পড়ে। ১৪নভেম্বর নৌযানটি ২নম্বর ডকইয়ার্ডে পৌছে। মার্চ মাস চলে আসায় ইজারাদারের প্রয়োজনেই সাম্প্রতিককালে নৌযানটির মেরামতে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই খিজিরÑ৮ বরিশালে পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানা গেছে। এছাড়া ‘এস-টি ভাষা শহিদ ছালাম’ নামের সী-ট্রাকটি গতবছর ১৩এপ্রিল থেকে বিআইডব্লিউটিসি’র ১নম্বর ডকইয়ার্ডে রয়েছে। ‘এস-টি রূপালী’ নামের সী-ট্রাকটিও ২০১৪-এর সেপ্টম্বর থেকে ১নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। ইতোপূর্বে নৌযানটি সন্দ্বীপে উপকূলীয় জাহাজ থেকে যাত্রীদের নিরাপদে কিনারায় পৌছে দেয়ার কাজে ববহৃত হত। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে সংস্থাটি তার যাত্রীদের নিরাপদে কিনারায় পৌছে দেয়ার দায়িত্বটিও পালন করছে না।
অভিযোগ রয়েছে, কোন ইজরাদারের আগ্রহ না থকার কারনেই বেশীরভাগ সী-ট্রাক বছরের পর বছর সংস্থাটির ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। এমনকি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সী-ট্রাক অযতœ অবহেলায় বছরের পর বছর পড়ে থাকায় তা মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ারও আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে সংস্থার প্রধান নির্বাহীর সাথে তার সেল ফোন ও ল্যন্ড ফোনে একাধীকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। অন্য কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণও মন্তব্য করতে রাজী হননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটি কোটি টাকায় সংগৃহীত ১৩টি সী-ট্রাকের নয়টিই বন্ধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ