Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হানিফ ফ্লাইওভারেও যন্ত্রণা!

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : গুলিস্তান-যাত্রবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরেও যন্ত্রনার শেষ নেই। টাকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। ফ্লাইওভারে উঠতে এবং নামতে গিয়ে যানজট। নিষিদ্ধ তবু ফ্লাইওভারের উপরে মোড়ে মোড়ে বাস স্টপেজ ও পথচারীদের এলোপাথারী চলাচলে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। আছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডেটিং স্পট ও বখাটেদের আড্ডা। এতে করে দিন দিন মøান হয়ে যাচ্ছে যাত্রীসেবার মান। এসব নিয়ে ভুক্তভোগীদের ক্ষোভের শেষ নেই।
সময় বাঁচাতে এবং যানজট এড়াতে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন যাত্রীরা। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের দিকে আসার পথে কুতুবখালীতে ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখেই যানজট লেগে থাকে দিন-রাত। ওই স্থানে ছোট-বড় সব ধরনের বাস ও ট্যাম্পু দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। এতে করে ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকালে ব্যস্ত সময়ে ওই স্থানে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গাড়িগুলোকে যানজটে আটকে থাকতে হয়। এ নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভের শেষ নেই। ঠিক একইভাবে গুলিস্তান অথবা ঢাকা মেডিকেলের দিকে নামতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়। গুলিস্তানে টোলকেন্দ্রে চারটি কাউন্টার থাকলেও তা গাড়ির তুলনায় অনেক কম। এ কারণে গাড়ির সারি ক্রমে লম্বা হয়ে কখনও কখনও টিকাটুলি ছাড়িয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলের দিকে যেতে মাত্র দুটি কাউন্টার। এখানে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই গাড়ির সারি দীর্ঘ থাকে। কাউন্টার অতিক্রম করার পর মেডিকেলের দিকে নামতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সরকারী কার্যদিবসে বেলা ১১টার পর গুলিস্তানের যানজটের প্রভাব পড়ে ফ্লাইওভারের উপরে। গুলিস্তানের দিকে গাড়ি নামতে না পারায় কোনো গাড়িই সামনের দিকে আসতে পারে না। অথচ ফ্লাইওবার থেকে নামার পর সোজা চলতে পারে না কোনো গাড়িই। পুলিশ সোজা রাস্তাটি বন্ধ করে রাস্তায় হকারদের বসার সুযোগ করে দিয়ে রাখে। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে নামতে গিয়ে গাড়ির তুলনায় অপর্যাপ্ত কাউন্টারের কারণে গাড়ির সারি দীর্ঘ হয়। এসব নিয়ে যাত্রীরা অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। নিয়মিত চলাচল করেন এরকম একজন যাত্রী বলেন, আমরা টাকা দিয়ে সময় বাঁচাতে এবং যানজট এড়াতে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে পিক আওয়ারে কোনোদিনই যানজট এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। বরং নিচ দিয়ে গেলে এর চেয়ে আগে যাওয়া যেতো এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত। যানজট ছাড়াও ফ্লাইওভারের উপরে বাসস্টপেজ বাড়িয়ে দিয়েছে যাত্রীদের ভোগান্তি। ফ্লাইওভারে ছয়টি স্পটে যাত্রীবাহী বাস নিয়মিত দাঁড়ায়। কিছুদিন আগেও দাঁড়াতো চারটি স্থানে। শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তানের দিকে আসার পথে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার উপরে এবং গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে ডেমরা রাস্তার মুখে নতুন করে দুটি স্টপেজ তৈরী হয়েছে। এমনকি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার উপরে বাস থেকে নেমে যাত্রীদের হেঁটে যাওয়ার জন্য আলাদা লেন তৈরী করা হয়েছে। ওই লেন দিয়ে যাত্রীরা উপরেও ওঠে। গুলিস্তানের দিকে আসার সময় প্রথমে ফ্লাইওভারের প্রবেশ পথে, কিছু দূর পর আরও একটি স্থানে নিয়মিত প্রায় সবগুলো যাত্রীবাহী বাস দাঁড়ায়। এরপর সেই বাসগুলো থামে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার ঠিক উপরে। সেখান থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের উপরে আরেকবার দাঁড়ায়। এরপরের স্টপেজ টিকাটুলি রাজধানী মার্কেটের সামনে। আবার গুলিস্তান থেকে শনিরআখড়ার দিকে যাওয়ার সময় প্রথমে ডেমরা সড়কের মোড়ে এরপর যাত্রাবাড়ী পাইকারী বাজারের সোজাসুজি স্থানে বাস দাঁড়ায়। ওই স্থানে একটি পকেট গেইট আছে বলে পরিবহন শ্রমিকরা ওই স্থানের নাম দিয়েছে পকেট গেইট। এভাবে কয়েকটি স্থানে বাস দাঁড়ানোর কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে তেমনি ফ্লাইওভারের দু’পাশে যানজটের কবল পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই সাথে ‘ডাইরেক্ট’ ফ্লাইওভার পারাপারের নামে বাসগুলোতে দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে প্রতারণাও করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সরাসরি পারাপারের জন্য গুলিস্তান ও মতিঝিল থেকে বাস সার্ভিস চালু আছে। এসব বাসে ‘ডাইরেক্ট’ পারাপারের নামে যাত্রীদের কাছে থেকে ৫ টাকার স্থলে ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাসগুলো ফ্লাইওভারের উপরেই দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তান আসার পথে ফ্লাইওভারের মাথায় দাঁড়িয়ে বাসগুলো যাত্রী উঠায়। এতে করে সেখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, যেখানে সরাসরি ফ্লাইওভার পারাপারের জন্য যাত্রীদের কাছে থেকে দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া আদায় করা হলেও বাসগুলো ফ্লাইওভারের উপরে একাধিক স্থানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে।
এদিকে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কিছু অংশ প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডেটিং স্পট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গুলিস্তান থেকে মাওয়া রোডের দিকে যাওয়ার জন্য যে রাস্তাটি ধোলাইপাড়ের দিকে নেমেছে সেই রাস্তায় প্রতিদিন বিকালের পর মোটর সাইকেল আরোহী প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভিড় জমে। কিছু দূর পর পর তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের বেশিরভাগই আপত্তিকর অবস্থায় থাকে। এই রাস্তা ছাড়াও প্রধান রাস্তায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ছবি তুলতেও ব্যস্ত দেখা যায় অনেককে। গত বছর সেলফি তুলতে গিয়ে ফ্লাইওভারের উপরে দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। শুধু তাই নয়, বখাটেদের আড্ডাও জমে ওই রাস্তায়। ধোলাইপাড় এলাকার একজন চাকরিজীবী জানান, তিনি কাজ শেষে মধ্যরাতের দিকে ওই রাস্তা দিয়ে বাসায় ফেরেন। প্রতিনিয়তই ওই রাস্তায় বখাটেরা মোটর সাইকেল নিয়ে আড্ডা দেয়। তিনি বলেন, ভয় হয় কবে জানি ওরা আমাকে দাঁড় করিয়ে মোটর সাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আলাপকালে কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেছেন, এভাবে অনিয়ম চলতে থাকলে মানুষ ক্রমে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিশেষ করে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো সংস্কার করা হলে অর্ধেক গাড়ি নিচ দিয়ে যাতায়াত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ফ্লাইওভার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের। তবে যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। ফ্লাইওভার প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইল নম্বরে ফোন করে সফল হওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • Nibir ৫ মার্চ, ২০১৬, ২:১১ পিএম says : 0
    ai obotha hole flyover kore ki lav
    Total Reply(0) Reply
  • লাবনী ৫ মার্চ, ২০১৬, ২:১২ পিএম says : 0
    ফ্লাইওভারের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ৫ মার্চ, ২০১৬, ২:১৩ পিএম says : 0
    যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হানিফ ফ্লাইওভারেও যন্ত্রণা!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ