Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গ্রামগঞ্জে ভোট আতঙ্ক

আ’লীগের বিদ্রোহীদের নিয়ে শঙ্কা গোয়েন্দাদের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনা সুষ্ঠু ভোট স্বাভাবিক উপস্থিতির পরিবেশ আর নেই

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৬ পিএম, ৪ মার্চ, ২০১৬

আজিবুল হক পার্থ : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে গ্রামগঞ্জের উৎসবের আমেজ এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। প্রথম ধাপে নির্বাচনী প্রচারণা, দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র নিয়ে দেশব্যাপী সহিংসতা এবং তৃতীয় ধাপে প্রার্থীদের উচ্ছৃঙ্খল বক্তব্যে এই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী মতের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা এবং রাজনৈতিক মামলায় নির্বাচনী এলাকায় গ্রেফতারের মাধ্যমে এই আতঙ্ক শুরু হয়েছে। আর সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার মানসিকতা, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিহতের ঘোষণা বিভিন্ন ইউপিতে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, প্রচারণায় হামলা, শুরু থেকেই কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকির মাধ্যমে এসব আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য এবং কয়েকটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন গ্রামগঞ্জের মানুষের আতঙ্ককেই সমর্থন করেছে।
ইউপি নির্বাচনের তফসিলের আগ থেকে সারা দেশে গ্রামগঞ্জে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এক মঞ্চে বসে একাধিক অনুষ্ঠানে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় করে। পরে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকে এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী আমেজ ততই ফিকে যাচ্ছে। উল্টো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচন কবে শেষ হবে এই কামনা তৃণমূলের নাগরিকদের।
দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনের ঘোষণা থেকেই নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা করেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনা খুব কঠিন কাজ। তা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযোগী নয়। কোনো নির্বাচন শত ভাগ সুষ্ঠু হয় না। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে জটিল নির্বাচন হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে বৈঠকে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, শেষ বুলেট দিয়ে ব্যালট পেপার রক্ষা করতে হবে। ভোটের বিশৃঙ্খলা হলে গুলি করার নির্দেশ দেন তিনি। এতে আরো আতঙ্ক বেড়েছে। গতকাল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বর্তমান ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, এটা আশা করা যায় না। তারা এখন কঠোর হওয়ার কথা বলছেন। পুলিশকে শেষ বুলেট পর্যন্ত ব্যবহার করতে বলছেন। কিন্তু এই বুলেট কাদের উপর ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলাম।
কিন্তু তারা এবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আরো কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই এবার আওয়ামী লীগের কর্মীদের দায়িত্ব পালনের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করছে ইসি।
গতকাল শুক্রবার প্রথম ধাপের প্রচারণা শুরু ও দ্বিতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমাদানের পরের দিন। এই দিনে দেশের অর্ধশতাধিক ইউপিতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার দিন ও পরের দিন সংঘর্ষ ঘটে। তবে এবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন ক্রমান্বয়ে পরবর্তী ধাপগুলোতে সংঘর্ষ বাড়বে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে নির্বাচনের সহিংসতার কথা। বিরোধীমতের প্রার্থীদের তুলনায় সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে এ আশঙ্কার কথা ইসিকে অবহিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয় পেতে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ সুযোগে অরাজকতা উসকে দিতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মীরাও। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধী দল পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা দিন-রাত মাঠ চষে বেড়ালেও বিরোধী পক্ষের প্রার্থী, কর্মী এবং সমর্থকরা গ্রেফতার ভয়ে মাঠে নামা তো দূরের কথা, মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
এছাড়া ৩৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত কয়েকদিন বেশ কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে আলাপ হলে সকলেই আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, আগের মতো ভোট দিতে যাওয়ার আগেই তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। নামমাত্র ভোট গ্রহণ ও গণনা হবে এমন আশঙ্কা তাদের। অনেকে আক্ষেপ করে জানালেন, নিজে বেচে বাবার নাম। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে নির্বাচনকালীন সহিংসতা হতো কেবল শহরে। কিন্তু এবারে সহিংসতা কেবল জেলা বা উপজেলা সদরে নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। তাই ভোট নিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিলের পরের দিন গতকাল শুক্রবার পাবনার বেড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কোরবান আলীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী নাসির হোসেন ও জুলহাস উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া বা‏হ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকারপুত্র মো. ফারুক মিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এমন অভিযোগে এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এদিকে প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনেই ঝালকাঠির নলছিটিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রচারণা ও মনোনয়ন নিয়ে দেশের অর্ধশত ইউনিয়নে সহিংসতা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এই নির্বাচন প্রথমে মনোনয়ন নিয়ে সহিংসতা হবে। তারপর সহিংসতা হবে ভোট নিয়ে। কারণ, এখানে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই, পিতার বিরুদ্ধে সন্তান প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন।



 

Show all comments
  • মিলন ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:১১ পিএম says : 0
    এখন ভোট মানেই আতঙ্ক।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারজানা ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:১২ পিএম says : 0
    নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ভোটাররা কি কেন্দ্রে যাবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:১৮ পিএম says : 0
    Dekha jak ki hoy ?????????
    Total Reply(1) Reply
    • Kawsir ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:১৯ পিএম says : 4
      ki ar hobe , sob gulay khomotasin ra jitbe
  • রাশেদ ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:২১ পিএম says : 0
    বিদ্রোহীপ্রার্থী কমানো গেলে সহিংসতা কিছুটা কমবে বলে মনে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সালমান ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম says : 0
    দেশে কি এখন আদৌ সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রামগঞ্জে ভোট আতঙ্ক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ