ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মোহাম্মদ আবু নোমান
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেখে অনেকে কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। কেননা, অনেক বেশি ফেল করেছে। জিপিএ-৫ কম পেয়েছে, ইত্যাদি। তাহলে কি আমাদের লেখাপড়া খারাপ হচ্ছে? এতে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ করছে? শিক্ষাবিদরা বলেছেন, বিষয়টা ঠিক এ রকম নয়। এ বছরের মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্ন অনেক কঠিন থাকায়, ফল বেশি খারাপ হয়েছে গড়পড়তায় সব বোর্ডে। অবশ্য, শিক্ষাবিদদের দাবি এ বছর পাসের হার শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষণ। যদিও নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, প্রশ্নফাঁস রোধ এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়াকড়ির কারণে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এটি নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই। এখন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও জানিয়েছেন, উত্তরপত্র (খাতা) মূল্যায়নে আগের পদ্ধতি খুবই ত্রæটিপূর্ণ ছিল। নতুন পদ্ধতিতে নম্বর দেওয়ার কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। এছাড়াও ফলের সূচক আগের বছরের তুলনায় হ্রাসের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে উত্তরপত্র নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়নকে। এর বাইরেও অন্য কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলে জানা গেছে।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। আধুনিক এবং প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশই এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে পারবে না। অবশ্য ইতোপূর্বে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে নানারকম উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি-উপবৃত্তিসহ বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া, নকলবিরোধী ব্যাপক প্রচারসহ নকল প্রতিরোধে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে আমাদের শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে।
পাসের হার বৃদ্ধি পেলে অভিভাবক ও শিক্ষকরা স্বভাবতই খুশি হন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, পাসের সঙ্গে যদি শিক্ষার মানের সংমিশ্রণ না থাকে, তবে তাতে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। মনে রাখতে হবে, ফলে পাস-ফেলের বিষয় থাকবেই। পাসের হার ওঠানামা করতেই পারে। তবে শিক্ষার মান বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা, সেটিই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
পরীক্ষায় সৃজনশীলে এবার গতবছরের চেয়ে বাড়তি ১০ নম্বর যোগ হয়েছে। এমসিকিউতে ১০ নম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে ফলে। এমসিকিউর নম্বর পূর্ণরূপে থাকলে সেটি গড় ফলেও প্রভাব পড়ে। এখানে ১০ নম্বর কমায় অনেক শিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক নম্বর কম উঠেছে। যেটি তার প্রাপ্ত নম্বরে প্রভাব পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, আগে পরীক্ষকরা দায়সারাভাবে খাতা দেখতেন। তাদের মূল্যায়নের পার্থক্যও হতো অনেক বেশি। ফলে শিক্ষার্থীদের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতো, কেউ বাড়তি সুযোগ পেয়ে যেত। তা এবার হয়নি। এ বছরের নতুন পদ্ধতির কারণে সরকারের চাপে ঠিকমতো উত্তরপত্র দেখতে বাধ্য হয়েছেন বলে সঠিক ফল এসেছে। এছাড়াও এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ডগুলো বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়। প্রধান পরীক্ষকরা উত্তরমালা প্রণয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণসহ প্রণীত নমুনা উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে গুণগতমান যাচাইয়ে একটি প্রশ্নমালা পরীক্ষকগণকে সরবরাহ করা হয়। এর প্রভাব পড়েছে ফলের সূচকে। ভালো যোগ্য শিক্ষকদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ভালো শিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এজন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নে সম্মানী বাড়ানোর জরুরি।
এবার গড় পাসের হার ছিল ৮০.৩৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৮.২৯ শতাংশ। এবার পাসের হার হ্রাস পেয়েছে ৭.৯৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ কমেছে ৫ হাজার, যা গতবছর ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।