পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720197779](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীতে ইয়াবা ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে পুলিশের সোর্স। এদের পেছনে রয়েছে দুর্নীতিবাজ কতিপয় পুলিশ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার সাথে পুলিশের কথিত সোর্স জড়িত। পুলিশের সাথে সম্পর্ক থাকায় এরা কখনও গ্রেফতার হয় না। বরং পুলিশের সংস্পর্শে থেকে এরা অন্যদেরকে দিয়ে নিরাপদে ব্যবসা করায়। ঢাকার ৪৯টি থানা এলাকায় এরকম মাদক ব্যবসায়ী আছে কমপক্ষে ২ হাজার। ভুক্তভোগিদের মতে, সোর্স নামধারীরা নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে ইয়াবাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। এ কাজেও তাদের সহযোগী কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য।
রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী সোর্সরা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিতেও দ্বিধা করে না। এরকম বহু ‘ভূয়া পুলিশ’ পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মাদক ব্যবসা, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসা, ভেজাল কারখানা, অসামাজিক কার্যকলাপ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক এই সোর্সরাই। প্রয়োজন মতো প্রতিপক্ষ গ্রæপের দু-চারজনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে এসব সোর্সরা নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখে। রাজধানীতে এখনও অনেক এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করছে সোর্স নামধারীরা।
দাগী আসামি ও গডফাদারদের ধরতে সোর্স নামধারীদের কাজে লাগানো হয় বলে দাবি করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। অথচ এরাই কখনও কখনও নিজেই পুলিশ সেজে নিরীহ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে হাজির হয়। অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার সোর্স নামধারী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ইয়াবা বা ভিন্ন কোনো মাদক দিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সোর্সদের অপরাধের লাগাম টানতে গত বছর রাজধানীর ৪৯ থানা পুলিশের প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছিলেন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপির ৮ ক্রাইম জোনের ডিসি এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৪ ডিসির প্রতি লিখিত আদেশ জারি করা হয়। ওই আদেশে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত সোর্সদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সোর্সের ব্যবহার সীমিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। ওই আদেশে উল্লেখ ছিল, জনসম্পৃক্ত পুুলিশিং ব্যবস্থায় জনগণই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করবে। আস্থা অর্জন করতে পারলে জনগণ পুলিশকে অপরাধ এবং অপরাধী সম্পর্কে তথ্য দিবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই আদেশের পর ডিএমপির থানাগুলোতে সোর্সের অবাধে চলাফেরা ও পুলিশের গাড়িতে ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে পুলিশ সাবধানতা অবলম্বন করে। কিছুদিন এই অবস্থা চলার পর সোর্সরা স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের আস্কারা পেয়ে আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ভুক্তভোগিদের মতে, কদমতলী থানার মুরাদপুর এলাকায় বেশ কয়েকজন সোর্সের ইয়াবা ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা। ওই নেতার ভাগ্নেরাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোটা রাজধানীতে ইয়াবা ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ এখন সোর্সদের হাতে। এরা ‘পুলিশের লোক’ পরিচয় দিয়ে নিজেদেরকে রক্ষার চেষ্টা করে। পুলিশ সাধারণত এদেরকে ধরে না। বরং এদেরকে দিয়েই ইয়াবা বা মাদক ব্যবসায়ী ধরার চেষ্টা করে। শ্যামপুর থানা এলাকার এক সোর্স জানায়, শুধুমাত্র শ্যামপুর থানা এলাকায় পুলিশের সোর্স আছে ৫০ থেকে ৬০ জন। এরা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। বেশিরভাগ ইয়াবা বেচাকেনা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সোর্সের তথ্যমতে, এদের মধ্যে কেউ আগে মাদক ব্যবসায়ী ছিল। পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা করতে করতে সোর্স বনে গেছে। আবার কেউ প্রথমে সোর্স ছিল, পরে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেকের অধীনে বেশ কয়েকজন করে বিক্রেতা আছে। শুধু শ্যামপুর থানা নয়, রাজধানীর মতিঝিল, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ডেমরা, কদমতলী থানার সোর্সরা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তার মতে, নিরাপদে ইয়াবা ব্যবসা করার জন্য এরা পুলিশকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। এরকম দুই হাজার সোর্সের তালিকা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, এই সব সোর্সই ইয়াবা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতে থানা এলাকায় পুলিশ রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে তল্লাশি চালায়। এই তল্লাশির সময় পুলিশের সাথে থাকা সোর্সরা নিরীহ মানুষের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। মধ্যরাতে এরকম বিপদের সম্মুখিন হয়েছেন এমন একজন ব্যবসায়ী জানান, একদিন হাসপাতালে রোগি দেখে ফিরতে দেরি হয়েছিল। বাসার কাছাকাছি মোড়ে এসে পড়েন পুলিশের তল্লাশির মুখে। একজন তার পকেটে তল্লাশির নামে হাত ঢুকিয়ে একটা কাপড়ের পুটলি বের করে চিৎকার করে বলে ওঠে, স্যার ইয়াবা পাইছি। ওই ব্যবসায়ী দু:খ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন সিগারেটও খাইনি। আমার পকেটে ইয়াবার পুটলি রাখবো কেনো? এরপর যা হবার তাই হলো। প্রথমে থানার গারদে। এরপর পরিবারকে খবর দেয়ার পর থানায় উপস্থিত স্বজনরা। থানার ওসি ইয়াবার মামলার আসামীর সাথে আপোস করতে নারাজ। সারারাত দেন দরবারের পর মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তবেই রক্ষা। ভুক্তভোগি ওই ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশের তল্লাশির সময় সোর্সরা এভাবে বহু নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। এর বিচার কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।