পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৭ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা পাস করেছে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনে প্রভাব পড়েছে ফলাফলেও। পাসের হার কমলেও সৃশনশীল এবং প্রকৃত মেধাবীরাই এই পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আগে উত্তরপত্র (খাতা) মূল্যায়নের পদ্ধতি খুবই ত্রæটিপূর্ণ ছিল। নতুন পদ্ধতিতে নম্বর দেওয়ার কারণে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক এইভাবে নয়। আমাদের তিন বছরের এই প্রচেষ্টার ফলাফল হচ্ছে, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে খাতা দেখে আমরা ফলাফল আনতে পারছি। এতে ছেলেমেয়েরা আরও সিরিয়াস হবে। শিক্ষকরাও খাতা দেখা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস হবেন এবং এখানে আমরা সঠিক বাস্তবতা দেখতে পাব।
প্রকাশিত ফলাফলে কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী, শতভাগ পাস ও শূণ্য পাসের (একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি) প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সার্বিকভাবে এবছর পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গতবছর এই পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ২৯ শতাংশ (কমেছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ)। এর আগে প্রতিবছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এবার কমেছে ৫ হাজার। যা গতবছর ছিল এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান এবং শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে উল্লেখযোগ্য। এবছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ২৬৬টি। গতবছর এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ৭৩৪টি। শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান গতবছরের তুলনায় এবার বেড়েছে ৪০টি। একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯৩টি। পাসের হারে ৫ শতাংশ কমলেও টানা তৃতীয়বারের মতো শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। এই বোর্ডে এবার পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। শীর্ষ স্থান অর্জন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক এবং অসৎ পন্থা অবলম্বনের কারণে গতবছরই প্রথম এসএসসিতে সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা বাতিল করা হয়। এবারও তার ধারাবাহিকতায় তা নির্ধারণ করা হয়নি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যায় ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও পাসের হারের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। তবে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র এবং ছাত্রীদের শতাংশ সমান। ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ হাজার ৪৮৮ ছাত্র এবং ৫১ হাজার ২৭৩ জন ছাত্রী।
সার্বিক ফলাফলে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান উভয়টিই কমেছে। এবছর শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মাদরাসা বোর্ডে। এই বোর্ডের ৮০৯টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে কম শতভাগ পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে ১৪টি। অন্যদিকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেশি মাদরাসা বোর্ডেই। এই বোর্ডের ৮২টি প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে সিলেট ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই দুটি বোর্ডে শূণ্য পাস করা প্রতিষ্ঠান নেই।
রেওয়াজ অনুযায়ি এবারও ৬০ দিনের মধ্যেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফল দিতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এবার ফলাফল দেখে অনেকেই এমনকি আপনারাও কিছুটা বিস্মিত হতে পারেন। আমাদের ফলাফল দেখে মনে হবে অনেক বেশি ফেল করেছে কিংবা জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ইত্যাদি। বিস্ময় এ রকম হতে পারে যে আমাদের লেখাপড়া খারাপ হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ করছে। কিন্তু আগে উত্তরপত্র (খাতা) মূল্যায়নের পদ্ধতি খুবই ত্রæটিপূর্ণ ছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন পদ্ধতিতে নম্বর দেওয়ার কারণে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক এইভাবে নয়। আমরা এজন্য প্রস্তুত ছিলাম। কারণ জানি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিতে যাচ্ছি। তার প্রভাবে প্রথমদিকের পরীক্ষায় এভাবেই পড়তে পারে।’
গতকাল দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফলাফল একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদরাসা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের সমানের পরীক্ষা এবার অংশগ্রহণ করে মোট ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। ১০টি বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় কমেছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। গতবছরের চেয়ে এবার কমেছে ৫ হাজার।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮ জন। আটটি সাধারণ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৭ হাজার ৯৬৪ জন। গতবারের চেয়ে এবার বেড়েছে এক হাজার ১৯৫ জন। সার্বিক ফলাফলের মতো আটটি সাধারণ বোর্ডের ফলাফলেও গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। পাসের হারে সবার চেয়ে নিচে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক শূণ্য৩ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ড : মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৫১ জন। এই বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এই বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৬১০ জন। যা গতবছরের তুলনায় ৩ হাজার ২৮৫ জন।
কারিগরি বোর্ড: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবছর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬ হাজার ২৩৯ জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯৮ হাজার ৫৬১ জন। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৮৭ জন। যা গতবছরের তুলনায় দুই হাজার ৯১০ জন কমেছে।
বিজ্ঞান বিভাগের ফল ভালো :বিষয়ভিত্তিক দিক দিয়ে এবছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যদিও গতবছর এই বিভাগে আরও ভালো ফল ছিল। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ৭৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এর আগে সকাল ১০টায় সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার ফলাফল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।