Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিনাজপুরের অন্যান্য উপজেলায়ও একই অবস্থা

শিশুদের খেলনা সামগ্রী নিয়ে বিরলে শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর অফিস : আজকের শিশু কালকের ভবিষ্যৎ। শিশুদের স্কুলমুখী করার জন্য প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্কুলে এসে খেলার মাঝে পড়া লেখা করবে শিশুরা। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা’র অধীনে খেলার সামগ্রী ক্রয়ের জন্য প্রতিটি স্কুলকে নগদ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় হয়। সরকারের দেয়া অর্থ অর্ধেক চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের পকেটে। বিধি বিধানকে উপেক্ষা করে শত শত স্কুলের লাখ লাখ টাকা ট্রেজারী থেকে সরাসরি জমা হয়েছে উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা কর্মকর্তা’র ফান্ডে। এসব অর্থ স্কুল কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তিরা বাজার থেকে নিম্নমানের খেলা সামগ্রী ক্রয় করে সরবরাহ করেছে। স্কুল প্রধানদের ভাউচারে স্বাক্ষর করে মালামাল গ্রহণে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১৬৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে আট লাখ টাকা এভাবেই ব্যবহার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে একই ঘটনা ঘটেছে জেলার আরো কয়েকটি উপজেলাতে।
অবশ্য বিরল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে জানালেন সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বিরল উপজেলার তেঘরা মহেশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরজামাল এর সাথে। তিনি জানালেন স্কুলের নামে বরাদ্দ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা তিনি পাননি এবং স্কুলের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। তবে ভ্যাট বাদে ৪৭৫০/- টাকার মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে উপজেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিস থেকে। সাথে দেয়া হয়েছে একটি ভাউচার। ঢাকা, আরামবাগ ঠিকানার আরটি কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানের বিল ভাউচারে কোন তারিখ নেই। নেই বিল নম্বর এবং ক্রেতার স্বাক্ষর। সরকারী টাকা খরচের এই নমুনা। এই বিলটি পাশ হয় কিভাবে এই প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষক জানালেন আমাদের কিছুই করার নাই। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মালগুলো গ্রহণ করতে বলেছেন আমি করেছি। অনেক আগেই টাকা প্রাপ্তি’র বিলে স্বাক্ষর নিয়ে নিয়েছে আমারসহ প্রায় সকল প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে। পুরো টাকা যথারীতি  ৬ মাস আগেই ট্রেজারী অর্থাৎ সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের ঘরে প্যাকেটেই রয়ে গেছে শিশুদের খেলার সামগ্রীগুলো।
কয়েক কিলোমিটার দূরেই তেঘরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষিকা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে জানালেন যে, তিনি সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা চেয়েছিলেন এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে প্রয়োজনমত খেলনা সামগ্রী ক্রয় করবেন। কিন্তু তাকে টাকা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে মালামাল বুঝে নিতে। দীর্ঘদিন তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে দেয়া টাকা গ্রহণ করেননি। তার স্কুলের মালামালগুলো পড়ে ছিল তেঘড়া মহেশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে অবশ্য তিনি বাধ্য হয়ে মালামাল গ্রহণ করেন। তাও ৩৭৫০/- টাকার। বাকি এক হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের কর্ণার ক্রয় করে সরবরাহ করা হবে। একই অবস্থা দামাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পাওয়া গেল।
বিরল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রত্যুশ কুমার চট্টপাধ্যায়’র সাথে কথা বললে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা’র পরিবর্তে মালামাল সরবরাহের বিষয়টি মিথ্যা বলে জানালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষয়ত্রী’রা লিখিতভাবে নগদ টাকা বুঝে নিয়েছেন মর্মে প্রমাণ আছে। পরে অবশ্য তিনি মালামাল সরবরাহের কথা স্বীকার করে দোষ চাপালেন স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তিনি জানান, উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি’র মাধ্যমে মালামাল ক্রয় করে সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মতে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো টাকার মালামাল ক্রয় করে না। উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটিতে বিভিন্ন স্কুলের প্রধানগণ, শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষক সমিতি’র প্রতিনিধি, সরকারী দলের মনোনীত প্রতিনিধিরা সদস্য হিসাবে আছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও দলীয় সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই সব হয়েছে। ট্রেজারী থেকে টাকা উত্তোলন করে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যক্তিগত হিসাবে রাখার কথাটিও তিনি স্বীকার করেন। তবে এটা কোন অনিয়ম নয় বলেই তিনি মত প্রকাশ করেন। ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিনাজপুরের অন্যান্য উপজেলায়ও একই অবস্থা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ