Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যাট আইন : অর্থমন্ত্রী-ব্যবসায়ী উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ব্যক্তি আয়ের করসীমা সোয়া তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব এফবিসিসিআই’র
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে সামনাসামনি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। গতকাল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) যৌথসভায় এই ঘটনা ঘটে।
অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচনার এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সেক্রেটারি এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না দিয়েই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে চাইছে। নতুন ভ্যাট আইনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানাতে এফবিসিসিআই ও এনবিআর কিছু কাজ করলেও তার ‘ফলাফল শূন্য’।
‘তারা কিছু লোক দেখানো প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। চকবাজারের ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ না দিলে তারা কীভাবে জানবে ইলকেট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার কী?’
ব্যবসায়ী ঐক্যফোরামের এ নেতা বলেন, ‘এমন অবস্থায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছি আমরা। এফবিসিসিআই যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মানা না হলে হলে আমরা আন্দোলন করব।’
অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই মোতালেব বলেন, ‘আমাদের স্কুলছাত্রদের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য করবেন না। আমাদের দাবি না মানলে আমরা তাই করব।’
পাঁচ কোটি টাকার কম টার্নওভারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট আইনের আওতায় আনা হলেও আন্দোলনের হুমকি দেন তিনি।
এ সময় অর্থমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজের মাইক অন করে বলেন, ‘দেশে আট লাখ নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভ্যাট দেয় মাত্র ৩২ হাজার। আপনারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কতজন ভ্যাট দেন? আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন! আপনারা আন্দোলন করলে আমরা তা দমন করব।’
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আন্দোলন দমনের হুমকি দেবেন না’।
এমন পরিস্থিতে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ব্যবসায়ীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য ধরেন। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে। বাজেটে কী আছে জানি না। এখনো আমরা বাজেট দেখিনি।’
ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানও ব্যবসায়ীদের হুমকি না দিয়ে এ ধরনের সভার যথাযথ ভাষা প্রয়োগের আহ্বান জানান।
পরে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আবু মোতালেব, উনি অত্যন্ত বড় বড় থ্রেট দিয়েছেন। একেবারে থ্রেট। দেশটা বন্ধ করে দেবেন- এরকমই বলেছেন।’
‘আবার আমারও উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক হয় নাই। অতিরিক্ত হয়েছে। এটা আপনারা একটু চিন্তা করবেন। তার থ্রেটটা উইথড্র করা উচিত।’
২০১২ সালের এই ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেয়া হবে। ব্যবসায়ীরা তা আরও পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে এলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি ওই তারিখ থেকেই নতুন আইন কার্যকরের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান।
এদিকে এই সভায় ব্যক্তি আয়ের করসীমা সোয়া তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আয়কর সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধির এ প্রস্তাব করেছে শীর্ষ এ বণিক সংগঠন। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ লিখিত বক্তব্যে এ প্রস্তাব দেন।
লিখিত বক্তব্যে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ব্যক্তির বর্তমান করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তা বৃদ্ধি করে তিন লাখ ২৫  হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো মোট করের বেশিরভাগ প্রত্যক্ষ কর থেকে আদায় করে থাকে। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় কম। মোট রাজস্ব আহরণে প্রত্যক্ষ করের অবদান মালয়েশিয়ায় ৭৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৭ শতাংশ, ভারতে ৫৬ শতাংশ; সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৩০ শতাংশ।
মাতলুব আরও বলেন, এ বছর ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ২৮ লাখ অতিক্রম করেছে। এদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় এনে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। এতে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, বাজেট কার্যক্রমে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এই বাজেট গঠনের পরে একটি কর ও ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে, করসীমা ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের আয়কর সংক্রান্ত প্রস্তাবে আরও কিছু দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম, পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হ্রাস। বতর্মানে পোশাক রফতানিতে উৎসে কর শূন্য দশমিক সাত শতাংশ রয়েছে, তা কমিয়ে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়া কাঁচামালের ওপর পাঁচ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, সারচার্জের সীমা দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা এবং করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ হ্রাস।
এ আলোচনা সভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এফবিসিসিআই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ