পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় কোয়েটা শহর পরিবেষ্টনকারী বিস্কুট রঙের শুস্ক পাহাড়ের অনেক গভীরে এক অভাবনীয় সম্পদ রয়েছে। পাহাড়ের গভীরে সুড়ঙ্গে পবিত্র কোরআনের বাক্সগুলো মৌচাকের মতো থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অপবিত্রতা থেকে নিরাপদে এসব সুড়ঙ্গে পবিত্র কোরআন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পাহাড়টি ‘জাবাল-ই-নূর’ বা ‘আলোর পাহাড়’ হিসেবে পরিচিত। দুই ভাই মিলে পাহাড়ের সুড়ঙ্গকে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থের জন্য একটি পবিত্র আধার হিসেবে পরিণত করার পর থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ লোক এই সুড়ঙ্গ পরিদর্শন করেছে। এখানে কোরআনের বেশ কয়েকটি কপি রয়েছে যেগুলো ৬’শ বছরের বেশী পুরনো। এই সুড়ঙ্গ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাবাল-ই-নূরের প্রশাসক হাজি মুজাফফর আলি বলেন, এখানে পুরনো কোরআন ভর্তি অন্তত ৫০ লাখ বস্তা রয়েছে। তবে পাহাড়ের গোলকধাধার এই সুড়ঙ্গগুলোতে খালি স্থান আর তেমন নেই। কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত স্থানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পবিত্র কোরআনের কপিতে ভরা শতশত বস্তা পাহাড়ের গায়ে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানে এই সমস্যাটি খুবই নাজুক। বিশেষ করে কোরআনের কোন ধরনের অবমাননা ব্লাসফেমির অভিযোগ উস্কে দিতে পারে এবং পরিণামে রাষ্ট্র বা নজরদারী কোন উন্মত্ত জনতার হাতে কারো বেঘোরে প্রাণও যেতে পারে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরআন হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী। মহান আল্লাহ মানব জাতির জন্য মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে সরাসরি পবিত্র কোরআন এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই কারণে কোরআনের প্রতিটি অক্ষরই পবিত্র। মুসলমানরা এ জন্য গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের কাছে থাকা কোরআনের পুরনো কপিগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অতি পুরনো কোরআনের কোন কপি যতেœর সঙ্গে কাপড় দিয়ে মুড়ে মাটিতে পুতে ফেলা যেমন জাবালে নূরে রাখা হয়েছে অথবা প্রবাহমান নদীতে এটা ভাসিয়ে দেয়া হয়, যাতে পৃষ্ঠা থেকে কালি মুছে যায়। আলেমগন এমনই ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
তবে এই পাহাড়ের পেছনে যিনি রয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী বিত্তশালী ব্যবসায়ী আব্দুল সামাদ লেহরি’র একটি ভাবনা রয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে এটা একদিকে যেমন হবে ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি হবে বৈপ্লবিক। তার চিন্তাভাবনা হচ্ছে পাকিস্তানের প্রথম কোরআনের রি-সাইক্লিং প্লান্ট গড়ে তোলা। এই উদ্যোগ লেহরির চিন্তাভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করতে পারে।
২০১১ সালে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে হাজার খানেক ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারী একটি কাগজ কলের অনেকখানিই ধ্বংস করে ফেলে। তাদের অভিযোগ সেই কাগজ কলে কোরআনের কাগজকে রি-সাইক্লিং করে টয়লেট পেপার তৈরি করা হয়।
পাকিস্তানে ২০১৫ সালের নভেম্বরে পাঞ্জাব প্রদেশে ক্ষুব্ধ লোকজন একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই কারখানার এক কর্মী বয়লারে কোরআনের পাতা পুড়িয়েছে এই অভিযোগে লোকজন কারখানাটিতে অগ্নিসংযোগ করে।
আলেমগণের অভিমত
তবে পাকিস্তানের আলেমগন অভিমত দিয়েছেন যে পবিত্র কোরআনের পাতা রি-সাইক্লিং করা যেতে পারে। পাকিস্তানের আলেমদের এই অভিমত অনেকের কাছে বিস্ময়কর। আলেমগণ বলেছেন, কোরআনের পৃষ্ঠাগুলো রি-সাইক্লিং অনুমোদন করা যেতে পারে যদি এই পাতাগুলো রি-সাইক্লিং করে ফের কোরআন মুদ্রণের জন্যই ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান উলেমা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তাহির মেহমুদ আসরাফি একথা বলেছেন। তার মতে, কোরআনের পৃষ্ঠার মর্যাদা যথাযথ রক্ষার মাধ্যমে রি-সাইক্লিং অনুমোদন করা যেতে পারে।
পাকিস্তানের নেতৃস্থানীয় আলেম মুফতি মুনিব-উর-রহমান বলেন, জরাজীর্ণ কোরআনের পাতাগুলোর লেখা অস্পষ্ট হয়ে গেলে এবং ইসলামের শিক্ষার আলোকে লেখাগুলো মুছে ফেলতে সলিউশন ব্যবহার করা হলে রি-সাইক্লিং করা পাতা পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা যে কোন জিনিস উৎপাদন অথবা কার্ডবোর্ড তৈরির কাজে লাগানো যেতে পারে।
পাঞ্জাব কোরআন বোর্ডের সচিব ইরফান কাদরি বলেন, পাকিস্তানে বিদ্যমান কোন কারখানা কোরআনের জরাজীর্ণ পৃষ্ঠা রি-সাইক্লিং করেনা কারণ এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে। পাঞ্জাবের এই বোর্ড পবিত্র কোরআনের কালেমার পৃষ্ঠাগুলো সংগ্রহ ও সেগুলো নিয়ে করণীয় বিষয় তদারক করে থাকে। ইরফান কাদরি বলেন, এই কাজে কেবল মুসলমানদের অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। তিনি অবশ্য বলেন, জরাজীর্ণ পাতাগুলো সীমিত পর্যায়ে রি-সাইক্লিং করার জন্য আমরা একটি বেসরকারী ফাউন্ডেশনকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি বলেন, এই ফাউন্ডেশন একটি ড্রামের মধ্যে পানি ভরে তাতে জরাজীর্ণ কোরআনের পাতাগুলো ডুবিয়ে রাখে। এরফলে পাতাগুলো থেকে লেখা মুছে যায়। পরে এই ড্রামের পানি একটি কূপে ঢেলে দেয়া হয়। তাদের রি-সাইক্লিং করা পাতাগুলো নরম কার্ডবোর্ড তৈরির ম- হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, কোরআন বোর্ড পবিত্র কোরআনের জন্য একটি রি-সাইক্লিং প্লান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে তবে সরকার এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
সউদী আরবের পাহাড়ের নামে পাকিস্তানের এই পাহাড়ের নাম করা হয়েছে জাবাল-ই-নূর। সউদী আরবে জাবাল-ই-নূর পাহাড়েই মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয়েছিল। পাকিস্তানের এই পাহাড়কে ঘিরে জনাব লেহরি’র রি-সাইক্লিং প্লান্টের চিন্তাভাবনা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
পাহাড়ের ভেতরে দর্শণার্থীরা দান করতে পারেন তবে এতে প্রবেশের জন্য কোন ফি দিতে হয়না। জনাব লেহরি বলেন, তাদের তহবিল দরকার। তিনি বলেন, আমরা প্লান্ট স্থাপন করতে চাই এবং পাহাড়ে আরো সুড়ঙ্গ খনন করতে চাই। কিন্তু আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।
প্রত্যাশার স্থান
কোরআনের বাণীগুলো সংরক্ষণে লেহরির আকাক্সক্ষার শুরু ১৯৫৬ সালে। কোয়েটায় তার বাসভবনে এক সাক্ষাতকারে তিনি কোরআন নিয়ে তার আবেগ-অনুভূতির কথা বলেন। তিনি বলেন, কাবা শরীফের এক বিরাট ছবি ছাপানো একটি সংবাদপত্র তার এক বন্ধুর গাড়ির মেঝের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে তিনি তা যতেœর সঙ্গে তুলে নেন এবং তখনই পবিত্র কোরআনের বাণী ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার তার মিশন শুরু করার শপথ নেন। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে তিনি এবং তার ভাই আব্দুল রশিদ কোয়েটার বাইরে পাহাড়ে জমি লিজ নিয়ে পাথর ভাঙার ব্যবসা করতেন। তবে লিজ নেয়া স্থানের মাত্র একটি অংশ তারা ব্যবহার করছিলেন। তিনি স্মৃতিচারণ করেন, তখন আমি কোরআনের জরাজীর্ণ পাতাগুলো পাহাড়ের ভেতরে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
জাবাল-ই-নূরে দর্শণার্থীদের আগমন ¯্রােত ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে এসে অনেক মূল্যবান মন্তব্যও লিখে যান। অনেকে আল্লাহ’র সাহায্য প্রার্থনা করেন আবার অনেকে তাদের মনের বাসনাও সুড়ঙ্গের দেয়ালে লেখেন। অনেকে এখানে প্রার্থনা করেন।
যারা পাহাড়টি পরিচালনা করছেন তারা অলৌকিক ঘটনার জন্যও প্রার্থনা করেন। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ণে মহান আল্লাহ’র রহমত কামনা করেন। লেহরি বলেন, আমার কোটিপতি বন্ধুদের সাহায্যের জন্য বলেছি। রি-সাইক্লিং প্লান্ট গড়ে তুলতে তাদের সহায়তা চেয়েছি। প্রথম অবস্থায় রাজী হলেও তারা এখন সাড়া দিচ্ছেনা বলে তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র : এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।