পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : সরকারি বরাদ্দের টাকা লুটেপুটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এনজিওর মাধ্যমে কাজ করে পণ্যের ডবল মূল্য দেখিয়ে এ অর্থ লুটে নেয়া হচ্ছে। সরকারি অর্থের অপচয়ের অভিযোগে ওই কোম্পানি ইডকলের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ ধরনের দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা দেন। সেটা আবার করা হয় এনজিওর মাধ্যমে। এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয় বলে তারা মত দেন। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা ষড়যন্ত্রের নামান্তর। ২৭ এপ্রিল বৈঠকের পর সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ইনকিলাবকে বলেন, ইডকলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসানোর বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধে এবং অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি ব্যয়ের একটি জবাবদিহিতা আছে। আমরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারি না। নিম্নমানের কাজ করায় প্রায় দেড় কোটি টাকা আমি ফেরত দিয়েছি।
জানা গেছে, সেই ১৯৭২ সাল থেকেই গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের কর্মসূচি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ প্রকল্প টিআর ও কাবিখা দিয়ে দেশের গরিব ও দুস্থ মানুষগুলোর উপকারে আসত। গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নও হতো। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের কর্মসূচিতে ইডকল কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত গ্রামীণ দুস্থ জনগণকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কর্মসূচি দু’টি বদলে দেয়া হয়েছে। আগে টিআর ও কাবিখার অর্থ দিয়ে উন্নয়ন কাজ হতো। এখন টিআর কাবিখায় বরাদ্দকৃত অর্ধেক অর্থ সোলার প্যানেল ও ব্যায়োগ্যাস স্থাপনের কাজে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাকি টাকায় হবে অবকাঠামো উন্নয়ন। অথচ একাধিক এমপি জানিয়েছেন, অনেক এলাকায় সোলার প্যানেল ও ব্যায়োগ্যাস স্থাপনের প্রয়োজন নেই। এ লক্ষ্যে প্রকল্প বন্ধ থাকার পরও নির্দেশিকা জারি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত ৫ জানুয়ারি যুগ্ম সচিব মো: ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিক এ সংক্রান্ত চিঠি সকল জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজ ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছে। চলমান কার্যক্রমে মূল্য পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ইডকলের সাথে আলোচনা করে আগের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে নির্দেশিকা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত থাকবে। বিনামূল্যে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস প্রদান করবে।
৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণের পর প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হয়েছে প্রতীয়মান হলে জামানতের সম্পূর্ণ টাকা প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে দেয়া হবে। প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে অথবা সেবা সন্তোষজনক বিবেচিত না হলে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত হবে। গত বছর কাবিখার ৩৫০ কোটি টাকা থেকে সোলার খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। নিম্নমানের ও নামসর্বস্ব সোলার প্যানেল দিয়ে একটি সিন্ডিকেট এ বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছে বলে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
সরকারদলীয় এমপিদের অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) সোলার খাতে স্থানান্তর করে আবারও লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে সরকার আবারও এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। এর পেছনের রহস্য পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে অভিমত তাদের। গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দের অর্থ থেকে নয়। এ জন্য পৃথক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উল্লিখিত দুই অর্থবছরে সোলারের বরাদ্দের ৩৩১ কোটি টাকার অধিকাংশই গচ্চা যেতে পারে বলে আশঙ্কা এমপিদের।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে (টিআর/কাবিখা) সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বেসরকারি কোম্পানি ইডকল। বাজারে একটি সোলার প্যানেলের মূল্য ৩০ হাজার টাকা হলেও এই কোম্পানি নিচ্ছে ৫৬ হাজার টাকা। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটি। অনেক এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সংসদীয় কমিটির কার্যপত্রে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের ৫০ শতাংশ বরাদ্দ সোলার প্যানেল (সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে) বসানোর কাজে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক। আর তিন বছরের জন্য সোলার প্যানেল বসানোর দায়িত্ব পেয়েছে ইডকল। সরকারি বরাদ্দ পাস হওয়ার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সোলার প্যানেলের জন্য ইডকলের কাছে চিঠি পাঠায়। এরপর তারা তাদের নির্ধারিত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী সোলার প্যানেল সরবরাহ করে থাকে। জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, ইডকলের সোলার প্যানেল দামে বেশি ও মানে খারাপ। এ নিয়ে জনমনেও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে তারা দাবি করেছেন।
কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে গত ১৬ ফেব্রæয়ারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা দাবি করেন, গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) সোলার খাতে স্থানান্তর করে লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। নিম্নমানের ও নামসর্বস্ব সোলার প্যানেল দিয়ে ইডকল ও তাদের প্রতিনিধিরা এই খাতে বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই হাতিয়ে নিচ্ছে। কমিটির সদস্যরা ইডকলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপনে আপত্তি জানিয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ ইতোমধ্যে এই খাতের বরাদ্দের টাকা ব্যয় করা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ ও কমিটি সদস্যদের আলোচনার সূত্র ধরে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বৈঠকে বলেন, ইডকল সরকারি না বেসরকারি কোম্পানি তা জানি না। ইডকলের বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র এজেন্ডা নির্ধারণের মাধ্যমে পরবর্তী বৈঠকে ইডকল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা করা যেতে পারে। কমিটির সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক ওই প্রস্তাব সমর্থন করেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইডকল কোম্পানির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তাদের নির্ধারিত এনজিও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ইনকিলাবকে বলেন, ইডকলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসানোর বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছেন। ওই কোম্পানির মূল্য ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধে এবং অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, ইডকল নির্ধারিত এনজিওর মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন কমিটির সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আমরা বেশি টাকা ব্যয় করে নিম্নমানের কাজ করব কেন? যারাই সোলার প্যানেল স্থাপন করুক, তাদেরকে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করতে হবে।
ইডকল কোনো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সোলার প্যানেল সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তা জানতে চান কমিটির আরেক সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, কারা কিভাবে এই নিয়োগ দিয়েছে? কারণ তাদের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসাতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। সরকারি ব্যয়ের একটি জবাবদিহিতা আছে। আর সে কারণেই আমি এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারি না। নিম্নমানের কাজ করলে আমাকেই জবাবদিহি করতে হবে। তাই এই খাতের প্রায় দেড় কোটি টাকা আমি ফেরত দিয়েছি।
কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, তার এলাকায় অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। অনেক কম খরচেই সোলার প্যানেল বসানো যেতে পারে। কিন্তু ইডকল দেশের গরিব মানুষের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইডকল সরকার অনুমোদিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে সরকারের ৪ জন সচিব ও ৪ জন সামাজিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। সেই প্রতিষ্ঠান জনগণের টাকা লুটে নেবে এটা হতে পারে না। পরবর্তীতে এর দায়ভার কে নেবে?
এদিকে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ ধরনের দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, অনেক এলাকায় সোলার প্রকল্পের প্রয়োজন হয় না। সে টাকা কি করবে তা জানানো হচ্ছে না। সাবেক মুখ্য সচিব নিজের একক ক্ষমতার বলে এটি করেছে, যা টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের নীতিমালার পরিপন্থী। এ প্রকল্প বাতিল করে দিনমজুর ও গরিব অসহায়দের কমংস্থান প্রকল্প করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমার এলাকায় ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেগুলো সোলার প্লান্ট স্থাপন করেছে সেগুলো নিম্নমানের এবং ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।