Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পিছিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন

ইউপি নির্বাচনে মনোযোগ

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও স্থানীয় সরকার পরিষদের অন্যতম ভিত্তি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা ছিল ২৮ মার্চ সোমবার। কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনের কারণে পূর্বনির্ধারিত দলের সম্মেলন থেকে পিছিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। বিগত পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সফলতার লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীরা যাতে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেজন্যই দলীয় সম্মেলন পেছানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নতুন তারিখ নির্ধারণ না হলেও ‘অযাচিত’ কিছু না ঘটলে আসছে বাংলা সনের আগেই অর্থাৎ ১ বৈশাখের আগেই দলের জাতীয় সম্মেলন শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এর মধ্যে চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ে যে ‘গ্যাপ’ কাজে লাগাবে দলটি। সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। চলতি মাসের মাঝামাঝি এ বৈঠক হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৮টি ও ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৫৭টি ইউপির ভোটগ্রহণ হবে।
সর্বশেষ ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সম্মেলনের তিন বছর পার হয়েছে। এর ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ও ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের কারণে সম্মেলন পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের জন্য সুবিধাজনক দিনক্ষণ নির্ধারণের নির্দেশও দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
এ সময় নেতারা বলেছেন, ২৮ মার্চ জাতীয় সম্মেলনের আগে-পরে দু’দফা ইউপি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় কিছুটা হলেও সম্মেলনের উৎসবে ভাটা পড়তে পারে। ওই সময় দলের তৃণমূল  নেতাকর্মীরা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। এ কারণে তৃণমূলের ডেলিগেট ও কাউন্সিলরদের ২৮ মার্চের কাউন্সিলে অংশগ্রহণে কিছুটা হলেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ সময় কয়েকজন নেতা আরও বলেন, ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের ও ২৩ এপ্রিল তৃতীয় পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে দলের জাতীয় সম্মেলন করা যেতে পারে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সম্মেলন পিছিয়ে ২২ মার্চ থেকে ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচন চলাকালে এর মধ্যবর্তী যে কোনো সুবিধাজনক তারিখে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
দলের কাউন্সিলের সম্ভাব্য নতুন তারিখ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এ নিয়ে মন্তব্য করারও সময় আসেনি। দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউপি নির্বাচন থাকায় ২৮ মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সম্মেলন কয়েক দিন পিছিয়ে দেয়া যায় কি-না, তা ভেবে দেখার জন্য নেতাদের বলেছেন।
সূত্র জানায়, গেল বছরের ডিসেম্বরেই দলের নতুন ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল। কিন্তু  সেই সময়ে পৌরসভা নির্বাচন হওয়ায় সম্মেলন করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। এরপর কার্যনির্বাহী সংসদে মার্চ মাসের ২৮ তারিখে এ সম্মেলন করার নতুন তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু এ মাসেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, তাও আবার দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে; সেই কারণেই নির্ধারিত তারিখের সম্মেলন থেকে পিছিয়ে আসে আওয়ামী লীগ।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সাড়ে ছয় হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়ে থাকেন। দলের জেলা কমিটির নির্বাচন করা নেতারা হলেন জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলর। দলের গঠনতন্ত্রে প্রতি ২৫ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একজন কাউন্সিলর নির্বাচনের বিধান আছে। নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও সম্মেলনকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তাছাড়া, সারাদেশ থেকে যেসব কাউন্সিলরা দলের সম্মেলনে যোগ দেবে, তাদের অনেকেই ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না হয় দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যে কারণে স্থানীয় সরকার পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ইউনিয়ন পরিষদে ততটা মনোযোগ দেয়ার ব্যত্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রের মনোযোগের অভাবে এতে নির্বাচনী ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু দল কোনোভাবেই ইউপি নির্বাচনকে হালকাভাবে দেখতে চায় না। দল চায়- বিগত পৌরসভা নির্বাচনের মতো সম্মানজনক নিরঙ্কুশ বিজয়। সেই কারণেই কাউন্সিল পেছানো।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী স্বপন এমপি ইনকিলাবকে বলেন, দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও দলের কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। তবে নির্ধারিত দিন (২৮ মার্চ) থেকে তা ১০/১৫ দিন পেছানের সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের মাঝে যে সময়ের গ্যাপ তা কাজে লাগিয়ে সুবিধাজনক সময়েই আমাদের কাউন্সিল হবে।  
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সম্মেলনকে সফল করতে দলে ১০টি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাজসজ্জা উপ-কমিটির দুটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সম্মেলনের মঞ্চ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৭৩ থেকে বেড়ে ৮১ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতীয় সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সম্মেলন পেছানোর বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কতদিন  পেছাবে তা এখনও ঠিক হয়নি। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নতুন তারিখ ঠিক হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পিছিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ