Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাতে ঢাকার রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি

শনিবার ঝরেছে ৩টি প্রাণ : অভিজাত এলাকায় রেসিংয়ের নামে উঠতি বয়সীদের খেয়ালীপনা

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাতের ঢাকায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচলে বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা। রাত যতো গভীর হয় ব্যস্ত কিংবা ফাঁকা রাস্তায় গাড়ির গতি ততো বাড়ে। গতকাল শনিবার বেপরোয়া গাড়ি চাপায় ঝরে গেছে তিনটি প্রাণ। এছাড়া  সুযোগ পেলেই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কার রেসিংয়ের নামে বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মেতে উঠছে উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণদের বেশ কয়েকটি গ্রæপ। এতে নগরবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও পুলিশের দাবি, বেপরোয়া গাড়িচালনা ঠেকাতে রাতেও অভিযান চালান তারা। অন্যদিকে, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাত ১১টার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণসহ বেশিরভাগ সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। তাঁরা মনে করেন দুর্ঘটনা কমাতে রাতে ট্রাফিক পুলিশের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা জরুরি।
রাজধানীতে গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঝরে গেছে তিনজনের প্রাণ। শ্যামপুরে ট্রাকের ধাক্কায় দুই শ্রমিক ও নয়াপল্টনে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, শ্যামপুর থানার ধোলাইপাড় এলাকায় সরকার পেট্রোল পাম্পের সামনে ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ট্রাকের ধাক্কায় দুই শ্রমিক নিহত হন। নিহত দু’জন হলেন শমসের আলী ও আব্দুস সালাম। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন। তার নাম শাহ আলম। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধোলাইপাড় সরকার পেট্রোল পাম্পের সামনে একটি ট্রাকের মেরামত কাজ চলছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি দ্রæতগামী ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে শমসের আলী নিহত হন। শ্যামপুর থানার এসআই আশরাফুল হক আহতাবস্থায় সালাম ও শাহ আলমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে সালামকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শাহ আলম চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে, সকাল ৭টায় পল্টন থানাধীন নয়াপল্টন জোনাকী সিনেমা হলের সামনে হিমাচল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় জসিম উদ্দিন (৫০) নামে এক পথচারী নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জসিমের বাড়ি ফেনীতে। তিনি নয়াপল্টন এলাকার মসজিদ গলির ১৩ নং বাসায় ভাড়া থাকতেন।
জানা গেছে, রাতে রাজধানীর সব সড়কেই সব ধরনের গাড়ি চলে দ্রæত গতিতে। এমনকি গাড়িগুলো যখন কোনো মোড় অতিক্রম করে তখনও গতি কমায় না। সবচেয়ে বেপরোয়া গতিতে চলে মালবাহী ট্রাক। রাত ১১টার আগে ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে রাত ১০টার পরই ট্রাকগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করে বেপরোয়া গতিতে চলে। যাত্রীবাহী বাসগুলোও রাত ১১টার পর বেপরোয়া গতিতে চলে। ভুক্তভোগীরা জানান, রাতে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বাসগুলো এতোটাই গতিতে চলে যে যাত্রীরা ভয় পেয়ে চিৎকার করার পরও চালকরা সেদিকে কর্ণপাত করে না। আর ভোরে বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস চালায় হেলপাররা। চালক ঘুম থেকে ওঠার আগেই হেলপার একটি ট্রিপ শেষ করে বাড়তি টাকা আয় করে। এ কারণে ভোরে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। একজন বাস মালিক বলেন, চালক ঘুম থেকে ওঠার আগেই হেলপার নিজে গাড়ি বের করে কমপক্ষে একটা ট্রিপ মারে। এতে মালিকদের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারা তা মানে না। তিনি বলেন, কোনো মালিকই চায়না হেলপারের কাছে গাড়ি দিতে।
অপরদিকে, রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কার রেসিংয়ের নামে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ সময় সড়কে অবস্থানরত গাড়ি বা পথচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশের অগোচরে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। গুলশান এলাকার এক ব্যবসায়ী  কয়েকদিন আগে এক রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাত তখন সাড়ে ১২টার মতো হবে। একে একে কার রেসিং-এর ৪টি গাড়ি ঢুকলো গুলশান থেকে বনানীমুখী সড়কে। পুলিশের চেকপোস্ট পেরিয়ে বনানী থেকে উত্তরা রোডে প্রচÐ বেগে ছুটে চললো গাড়িগুলো। মুহূর্তেই বিপজ্জনকভাবে ৪টি গাড়ি চারদিক দিয়ে সাধারণ যানবাহনগুলোর ফাঁক গলে দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেল। প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি বলেন, মধ্যরাতে একাধারে চার থেকে পাঁচটি গাড়ি এঁকেবেঁকে রাস্তা অতিক্রম করার সময় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ, গাড়িগুলোর গতি ছিলো খুবই বিপজ্জনক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাতে গতির ঝড় তোলার ফাঁকে রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় জটলা পাকিয়ে রীতিমত দলভারী করতেও দেখা যায় উঠতি বয়সী এসব চালককে। তবে তাদের ঘিরে নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো তদারকি। রাজধানীতে এরকম বেপরোয়া গাড়ি চালনায় হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত সাধারণ মানুষ। তবে পুলিশের দাবি, রাতে বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালান তারা। ডিএমপির (ট্রাফিক) বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,  অভিজাত এলাকাগুলোতে কার রেসিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের সামনে পড়লে তাদের ধরে অনেক সময় মোটরযান আইনে মামলা দেয়া হয়। অনেক সময় গভীর রাতে আমরা চেক পোস্টও বসাই। এ প্রসঙ্গে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, রাতের ফাঁকা সড়কে গাড়িগুলো দ্রæত গতিতে চলে। সংঘর্ষটা সে কারণে বেশি হয় রাতের বেলাতেই। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্বটাকেও এখন বাড়াতে হবে গভীর রাত পর্যন্ত। তিনি  বলেন, কঠোর ব্যবস্থা না নিলে রাতের রাস্তায় গাড়ির বেপরোয়া গতি বন্ধ করা যাবে না।



 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম says : 0
    রেসিংয়ের নামে উঠতি বয়সীদের খেয়ালীপনার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেপরোয়া গাড়ি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ