Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

র‌্যাবের দাবি : দুই সন্তানের হত্যাকারী মা

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ৩ মার্চ, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বিছানায় ঘুমের মধ্যেই নুসরাত আমান অরণী (১২) ও আলভী আমানকে (৬) হত্যা করেছেন স্বয়ং তাদের মা কলেজ শিক্ষিকা মাহফুজা আমান জেসমিন। বাবা, মা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনটাই দাবি করেছে র‌্যাব। রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে ভাইবোনের রহস্যজনক মৃত্যুর পর সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চাইনিজ খাওয়ায় দুই শিশু মারা গেছে, এমন প্রচারণার পর থানায় মামলা না করা এবং বাবা-মায়ের গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়া নিয়ে দুই শিশু হত্যা মানুষের মধ্যে কৌত‚হলের সৃষ্টি করে। র‌্যাব বলছে, পরিকল্পিতভাবেই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। সন্তানদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন শিশু দুটির মা মাহফুজা আমান জেসমিন। তার আশঙ্কা ছিল ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না। এজন্যই তিনি দুই সন্তানকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব বলছে, শিশু দুটির মাকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ তথ্য জানতে পেরেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বনশ্রীর বি-বøকের ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় একই বিছানায় ভিকারুন্নেসার ছাত্রী নুসরাত আমান অরণী (১২) এবং স্থানীয় এক স্কুলের ছাত্র আলভী আমানের (৬) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চাইনিজ রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে তারা মারা যায়। তবে পরদিন লাশের ময়নাতদন্তে শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পান চিকিৎসকরা।
দুই শিশুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩-এর একটি টিম ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটনের জন্য শিশু দুটির গৃহশিক্ষিকা শিউলি আক্তার, খালু নজরুল ইসলামের ভাগ্নে শাহিন, আতœীয় ওবায়দুল ইসলাম, বাসার দারোয়ান পিন্টু মন্ডল ও ফেরদৌসকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে আসে। শিশু দুটির লাশ দাফনের পর জামালপুর থেকে শিশুদের বাবা আমান উল্লাহ, মা মাহফুজা আমান জেসমিন ও খালা আফরোজা মালেককে আটক করে ঢাকায় র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে আসে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যার রহস্য উন্মোচনে শিশু দুটির বাবা-মা ও খালাকে অতি সাবধানে, সংবেদনশীলতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে শিশু দু’টির মা জেসমিন স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। শিশুদের মায়ের বিবরণ অনুযায়ী, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাহফুজা জেসমিন তার বেডরুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার পাশেই ঘুমিয়েছিল ছেলে আমান। আর মেয়ে অরনী গৃহশিক্ষিকার কাছে পাশের রুমে লেখাপড়া করছিল। গৃহশিক্ষিকা চলে যাওয়ার পর মা তার মেয়ে অরণীকে ঘুমানোর কথা বলে বেডরুমে ডাকেন। অরণী বিছানায় যাওয়ার পর মাহফুজা জেসমিন তার ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মেয়ে অরণীকে শ্বাসরোধ করেন। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে মেয়ে বিছানা থেকে পড়ে যায়। মেয়ের মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর ছেলেকেও একইভাবে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে হত্যা করেন। এ সময় তার সঙ্গে আরো একজন ছিলেন। যিনি শিশু দুটির হাত-পা চেপে ধরেন। তবে র‌্যাব তার নাম প্রকাশ করেননি। এর পর সন্তানদের লাশের পাশে বসে মা কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করেন। হত্যাকান্ডের পর এ নিয়ে গল্প ফাঁদেন জেসমিন। প্রথমে তিনি ঘটনা গোপন করার জন্য স্বামীকে ফোন করে ছেলেমেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তিনি স্বামীকে জানান, নিজেদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আগের রাতে আনা চাইনিজ রেস্টেুরেন্টের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলো ছেলে-মেয়ে। এর পর থেকে তারা আর উঠছেনা। আমানুল্লাহ তখন দুই বন্ধুকে বাসায় পাঠান। স্বামীর ফিরতে দেরি হলে জেসমিন ফোন করে তার ও বোনকে ফোন করেন। পরে আমানুল্লার বন্ধুরা পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান শিশু দু’টিকে। সেখান থেকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে।  চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সন্তানদের মা জেসমিন তখন দাবি করেন, রেস্টেুরেন্টের খাবার খেয়ে তার সন্তানরা মারা গেছে। তিনি শিশুদের লাশের ময়নাতদন্তও চাননি। মুফতি মাহমুদ আরও জানান, শিশুদের মা উ”্চ মাহফুজা জেসমিন উচ্চশিক্ষিত। তিনি ম্যানেজমেন্টের ওপর মাস্টার্স করেছেন। ২০০৫ সাল থেকে ৩ বছর একটি কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। এ কারণে তিনি পড়াশোনার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। নিজ সন্তানদের বেলায় এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার ধারণা ছিল, ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না। এ নিয়ে মানসিক অস্থিরতা ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরেই তাদের হত্যা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে এটিই হত্যার কারণ বলে মনে হচ্ছে। শিশুদের মা ঠান্ড মাথায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার সময় মাহফুজা সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন বলেও জানান র‌্যাবের এই কমান্ডার। তবে শিশুদের বাবা পোশাক ব্যবসায়ী আমানুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ র‌্যাব এখনো পায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মানসিকভাবে সুস্থ একজন মা লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে কেন নিজের হাতে দুই সন্তানকে হত্যা করবেন, এমন প্রশ্নের সদুত্তর র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে মেলেনি। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হবে; বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত হলে বিস্তারিত জানা যাবে। আপাতত যেসব তথ্য পেয়েছি, সেটাই আপনাদের জানালাম। প্রথমে আমরাও বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়টিই বেরিয়ে এসেছে।
দুই শিশুর মধ্যে ১৪ বছর  বয়সী নুসরাত জাহান অরণী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইস্কাটন শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আর তার ছোট ভাই আলভী আমান পড়তো হলি ক্রিসেন্ট (ইন্টারন্যাশনাল) স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারিতে।
এদিকে গত রাত ৮টায় রামপুরা থানা-পুলিশ জানিয়েছে, দুই শিশু হত্যার ঘটনায় এ সময় পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। ঘটনায় অভিযুক্ত শিশুদের মা জেসমিনকে থানায় সোপর্দ করেনি র‌্যাব। তবে ইতিমধ্যেই লাশের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন থানায় এসেছে। প্রতিবেদনে শিশুদের শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।



 

Show all comments
  • Kasem ৪ মার্চ, ২০১৬, ৫:৩৭ এএম says : 0
    Manus din din khub nisthur hoye jasse
    Total Reply(0) Reply
  • আজিমুন নেসা ৪ মার্চ, ২০১৬, ৫:৩৯ এএম says : 0
    র‌্যাবের দাবি মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একজন মা কিভাবে পারে ?????????????????
    Total Reply(0) Reply
  • Harun ৪ মার্চ, ২০১৬, ৫:৪১ এএম says : 0
    শিশু হত্যা বৃদ্ধি সামাজিক অসুস্থতার লক্ষণ
    Total Reply(0) Reply
  • Arif ৪ মার্চ, ২০১৬, ৫:৪৬ এএম says : 1
    sob kamon jani alomelo lagse
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ৪ মার্চ, ২০১৬, ৫:৪৭ এএম says : 0
    কোন মা কি এটা পারে ?????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: র‌্যাবের দাবি : দুই সন্তানের হত্যাকারী মা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ