Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৫ কারণে অস্থির মুদ্রাবাজার

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রবাসী আয় হ্রাস, রফতানি আয়ে শ্লথ গতি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ ও বড় প্রকল্পের আমদানি ব্যয় পরিশোধের কারণে সম্প্রতি অস্থির হয়ে পড়েছে মুদ্রাবাজার। বিদেশী মুদ্রাগুলোর বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান হঠাৎ ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এই সুযোগে রেমিট্যান্স আয় ও রফতানি আয় বাড়িয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে বিপুল রিজার্ভ থাকা সত্তে¡ও বাজারে ডলার ছাড়ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানীনির্ভর রমজানের নিত্যপণ্যের মূল্যে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও টাকার অবমূল্যায়নে হাসি ফুটেছে প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী ও রফতানিকারকদের মুখে। এদিকে বড় কোন রফতানি বিল বিপুল লাভে ছাড়িয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে কেউ ‘যোগসাজশে’ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডলারের দাম বাড়িয়ে থাকতে পারে- এমন আশঙ্কাও আছে অনেকের মাঝে।
পূর্বের দিনের ন্যায় গতকালও আমদানি পর্যায়ে ডলার বিক্রয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় (সিটি ব্যাংক এনএ)। আন্তঃব্যাংক লেনদনের গড় ছিল ৮০ টাকা ৩ পয়সা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ৪ টাকার বেশি। একই অবস্থা অন্যান্য মুদ্রার ক্ষেত্রেও। গত দুই সপ্তাহে সব মুদ্রার বিপরীতেই মান হারিয়েছে ‘টাকা’। গতকাল ব্রিটিশ পাউন্ড বিক্রি হয়েছে ১০৯ টাকার ওপরে। ইউরো বিক্রি হয়েছে ৯২ টাকা ৬৫ পয়সার বেশি রেটে। ইন্ডিয়ান রুপি বিক্রি হয়েছে ১ টাকা ১৮ পয়সায়। আর প্রবাসীদের স্বজনরা ব্যাংক থেকে প্রতি ডলারের বিপরীতে পেয়েছেন ৮২ টাকা ২৫ পয়সা।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া ‘ওপেন মার্কেট’ নীতির কারণে “ডলারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার নেই”- এমন বক্তব্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। তিনি বলেন, “চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মুহূর্তে বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। চাহিদা কমে গেলে ডলারের দাম এমনিতেই কমে যাবে। আমরা বাজার পর্যালোচনা করছি। প্রয়োজন পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ইচ্ছে মাফিক নিজেদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে পারে না। এজন্য নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক দিন শেষে তার মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতে পারে। দিনশেষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে বাজারে বিক্রি করতে হবে। বাজারে বিক্রি করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়।
গত কয়েক বছর যাবত বিনিয়োগ স্থবিরতার মাঝে বাজারে ডলারের বাড়তি কোনো চাহিদা ছিল না। ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ ডলার আহরণ করে আসছিল তা প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত থেকে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে এতদিন ডলার কিনে আসছিল। তবে কতগুলো কারণে হঠাৎ বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একদিকে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স কম এসেছে ১৭ ভাগ, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ ভাগ। সেখানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২০ ভাগ। বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে যেগুলোর যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিপুল পরিমাণ ডলার চলে যাচ্ছে। এর উপর অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আনা ৯শ’ কোটি ডলারের একটি বড় অংশই পরিশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আনা ঋণগুলোর মেয়াদ হয় সাধারণত ৬ মাস। সম্প্রতি অনেকগুলো বড় ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সুদাসলে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে।
সবমিলিয়ে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ না বেড়ে বরং কমে গেছে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।
বিদেশি মুদ্রার বর্তমান সংকটের জন্য হুন্ডি ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, অনেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুযোগ নিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করছে। কোন একটি নির্দিষ্ট দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ওই দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ পরিশোধ করছে। নির্দিষ্ট পণ্যগুলো কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করছে। পরবর্তীতে সমঝোতার মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বাড়তি অর্থ নিয়ে সেদেশেই বিনিয়োগ করছে।
এদিকে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ওই দেশের ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে সুদাসলে বাংলাদেশ থেকে ডলার চলে যাচ্ছে। এভাবে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকে বর্তমান ডলার সংকটের বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচারকেও ডলার সংকটের জন্য দায়ী করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, গত কয়েক মাসে দেশের রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কমেছে। একই সময় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে বাজারে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে সবগুলো বিদেশি মুদ্রার বিনিময় মূল্য বেড়ে গেছে। এতে আমদানি ব্যয় বাড়লেও দ্রব্যমূল্যে তা খুব প্রভাব ফেলবে না বলে জানান তিনি।
এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমীন এ পরিস্থিতিকে ‘সাময়িক’ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন রয়েছে। বাজার বেশি খারাপ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেই হোক আর যে কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে হোক- তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ।
অন্য একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে হস্তক্ষেপ করে থাকে। তবে বর্তমানে ডলারের সংকট সত্তে¡ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে আমদানি পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
‘সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক ভূমিকা রাখবে’- এমন আশা ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে খরার পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্পের এলসির পেমেন্ট শুরু হয়েছে। এ কারণে ডলারের সংকট তীব্র হয়েছে।



 

Show all comments
  • Sumon ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:১০ পিএম says : 0
    mone hosse ata o sarker er success
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুদ্রাবাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ