পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দরপত্র জমা দেয়া তোশিবার আর্থিক সঙ্কট আরও প্রকট : ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে পারছে না
বিশেষ সংবাদদাতা : মাতারবাড়ী প্রকল্পে দরপত্র জমা দেয়া তোশিবার আর্থিক সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন ব্যাংক গ্যারান্টি পর্যন্ত দিতে পারছে না। গত ১৩ এপ্রিল টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা তোশিবার তিন মাসের (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০১৬) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক দুরবস্থার কারণে তাদের পক্ষে ব্যাংক গ্যারান্টি জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, আর্থিক দুরবস্থার কারণে তোশিবার পক্ষে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে রাজি না হওয়ায় এখন এ প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হলে নগদ অর্থ জমা দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তোশিবার ব্যাংক গ্যারান্টি চার্জও বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ব্যাংকের হিসাবে যে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টিকে সমপরিমাণ দেনা হিসাবে দেখানো হয়। আর ব্যাংক গ্যারান্টি মানেই দেনা আরও নেতিবাচক করা। এমন পরিস্থিতিতে তোশিবাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মত বড় কোন কাজ পেতে হলে কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলারের ব্যাংক গ্যারান্টির প্রয়োজন পড়বে।
নিয়ম অনুযায়ী, বড় ধরনের কোন প্রকল্পের কাজ পেতে হলে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি এবং প্রকল্প হতে অগ্রিম অর্থ (ডাউন পেমেন্ট) বাবদ সমপরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টির প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে তোশিবা নিজেই ঘোষণা দিয়েছে- তাদের জন্য সমপরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টি জোগাড় করা কঠিন হবে। এ অবস্থায় তোশিবা বাংলাদেশের বড় কোন প্রকল্পের কাজ পেলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তোশিবা ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য দরপত্র দাখিল করেছে। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক হওয়ার কারণে যথাসময়ে এর কাজ শুরু করা যাবে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
একই সাথে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন না করে লোকসানের কবলে পড়া কোন কোম্পানিকে কাজ দেয়া হলে মাতারবাড়ী প্রকল্পটির ভবিষ্যতও কী ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিবিয়ানা সাউথ ও ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্পের মত হবে কি-না সে দিকটিও বিদ্যুৎ বিভাগ খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।জানা গেছে, মায়ানমারের মোন প্রদেশে ১২৬০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তোশিবার সাথে আলোচনা করছিল ওই দেশটির সরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরে মায়ানমার এখন তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথেও আলোচনা চালাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে মাতারবাড়ী প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে সরকার কোন দিকে এগুবে তার উপর নির্ভর করছে এর ভবিষ্যত।
উল্লেখ্য, ‘অত্যাধুনিক’ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট বিনিয়োগের ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপানের উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা জাইকা।
এদিকে জাইকার ক্রয় নীতিমালার প্রাক-যোগ্যতা সম্পন্ন দরদাতাদের দরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতির সেকশন ৩.২ এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে-‘প্রাক-যোগ্যতাকালীন সময়ে দরদাতাদের দেয়া তথ্য দরপত্র মূল্যায়নকালে যাচাই বাছাই করতে হবে এবং কোন দরদাতার যোগ্যতা বা সম্পদ সন্তোষজনকভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট না থাকলে সেই দরদাতাকে কাজ দেয়া হবে না।’ কাজেই জাইকার ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী যে কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে হলে আর্থিকভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে। এদিকে, স্পেনের কোম্পানি আইসোলেক্স-এর কারণে সরকারের কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, এই প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধরণ দেখে সরকার নিজেই ক্ষুব্ধ। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বর্তমানে আর্থিক দুরবস্থার কারণে এই কোম্পানিটি বিবিয়ানা সাউথ প্রজেক্ট ৪০০ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ এবং খুলনায় ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটি নির্মাণ করতে পারছে না।
বিশেষ করে বিবিয়ানা সাউথ প্রজেক্ট ৪৫০ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প দু’টির নির্মাণ কাজ মাঝ পথে থেমে যাওয়ায় সরকার আইসোলেক্সকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়ার পরও কোন সুফল আসছে না। বরং এ দু’টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আইসোলেক্স সরকারের কাছে অতিরিক্ত প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা দাবি করেছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক ডেকে প্রতিষ্ঠানটিকে জানিয়ে দিয়েছে সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, নির্মাণাধীন বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গত ২ মার্চ দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রকল্পের সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে প্রি-লোডিং এর জন্য ব্যবহৃত অতিরিক্ত মাটি অপসারণের কাজ মন্থরগতিতে চলমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ ফেব্রæয়ারি থেকে সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু হয়েছে এবং ১৩০০টির মধ্যে ২৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২০টি সার্ভিস পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের অন্যান্য কাজের অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হয়নি। সাইটে ইপিসি ঠিকাদারের কোন কর্মচাঞ্চল্য নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইপিসি ঠিকাদারের সাথে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরের ২ বছর ৩ মাস পরও প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনায় ইপিসি ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে মর্মে প্রতীয়মান হয় না।
প্রকল্পটির এমন দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে হবে। দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে-ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পুরোদমে চালু করা সম্ভব না হলে ঠিকাদারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলপূর্বক নতুন ঠিকাদার নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিবিয়ানা সাউথ প্রকল্প নিয়ে আইসোলেক্সের যে দুরবস্থা চলছে, একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও।
এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই না করে ঢালাওভাবে বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দিলে ভবিষ্যতে বড় প্রকল্পগুলোর ভাগ্যেও বিবিয়ানা সাউথ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্প দু’টির মত দুরবস্থার সৃষ্টি হবে। আর এতে করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চরমভাবে ব্যাহত হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারের ভিশন-২০২১ রূপকল্প।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।