Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তালিবান হামলায় রক্তাক্ত পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় : নিহত ২৫

প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ফের রক্তাক্ত হলো পাকিস্তান। শিক্ষার্থীদের রক্তে ভেসে গেল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে মাথায় গুলি করল বন্দুকধারীরা। শিক্ষার্থীদের রক্তেই ভিজল শিক্ষাঙ্গনের মাটি। ঘটনাস্থল উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চারসাদ্দা শহরের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়। হামলায় অন্তত ২৫ জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। তালিকায় রয়েছেন শিক্ষাঙ্গনের এক অধ্যাপকও। যদিও বেসরকারি সূত্রে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী তাহরিক-এ তালিবান এই অভিযানের দায় স্বীকার করেছে। আর নিন্দা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া নাওয়াজ শরিফ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেকে।
গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন হাজার তিনেক শিক্ষার্থী। বিশেষ আলোচনাসভা উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ছয়শ’ অতিথি। শুরুটা হয়েছিল সুষ্ঠুভাবেই। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই গুলির শব্দে ছন্দপতন ঘটে। শিক্ষার্থীরা তখনও ব্যাপারটা আঁচ করতে পারেননি। কিন্তু ঘোর কাটার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্লক থেকে ভেসে আসতে শুরু করে গুলিবৃষ্টি ও বিস্ফোরণের শব্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, গতকাল সকালে কুয়াশা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই। সেই কুয়াশার চাদরের আড়াল নিয়েই বয়েজ হোস্টেলের পিছন দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে জঙ্গিরা। জঙ্গি হামলার খবর ততক্ষণে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্লাস থেকে বেরনোর জন্য শুরু হয়ে গেছে হুড়োহুড়ি। কিন্তু সবাই বেরিয়ে আসার আগেই সেখানে পৌঁছে যায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। ক্লাসরুমে ছাত্রদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। এখানে ওখানে ছিটকে পড়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের নিথর দেহ। রক্তে ভেসে যায় ক্লাসরুমের মেঝে।
কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যাম্পাসে পৌঁছে পুলিশ। তারপর সেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আকাশে চক্কর কাটতে শুরু করে সেনার হেলিকপ্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তখন উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের ভিড়। কেউই তখন বুঝতে পারছেন না ভিতরে কী হচ্ছে। এক অভিভাবক বলেন, যতবার গুলির শব্দ কানে আসছে, মনে হচ্ছে নিজের সন্তানকে আর জীবিত দেখতে পাব তো! ডন নিউজ সূত্রে খবর, সেনার পৌঁছনোর খবর পেয়েই জঙ্গিরা আরও নৃশংস রূপ ধারণ করে।
এদিকে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক ই তালেবান। ২০১৪ সালে পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলাও করেছিল তাহরিক-এ তালিবান। ওই হামলায় ১৪০ জন নিহত হয়েছিল। সেই হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ওমর মনসুর ফেসবুকের মাধ্যমে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার দায় স্বীকার করেন। ওমর জানান, চারজন আক্রমণকারীকে এই হামলা পরিচালনা করতে পাঠানো হয়েছিল। নিজস্ব সূত্রের উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন জানায়, চারজন আক্রমণকারীই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। হামলাকারীরা আত্মঘাতী হামলা করার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল। তবে বোমা বিস্ফোরণের আগেই তাদের হত্যা করতে সক্ষম হয়।
সংসদ সদস্য ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শওকত ইউসুফজাই বলেন, অভিযান শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এখন এলাকা পরিষ্কার করছেন। ক্যাম্পাসে ছেলেদের হোস্টেলেই হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
উদ্ধারকারী দলের একটি সূত্র স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ এলাকা এখন নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। প্রায় সব শিক্ষার্থীকেই উদ্ধার করা হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলাকারীরা দেখতে আমাদের মতোই ছিল। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় উদ্ধার হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেছেন, বন্দুকধারীরা যুবক বয়সী। দেখতে আমাদের মতোই। তাদের হাতে একে-৪৭ বন্দুক ছিল। তাদের পরনে জ্যাকেট ছিল যেমনটা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের থাকে। ক্লাস না থাকায় ঘটনার সময় আমরা হোস্টেলে ছিলাম। তিনি আরও বলেন, হামলাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় চলছিল। সবকিছু থেমে যাওয়ার পর সেনা সদস্যরা আমাদের দরজায় কড়া নেড়ে জানান, আমরা নিরাপদ।
ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জাহুর আহমেদ জানিয়েছেন, গুলির শব্দ শোনামাত্র তিনি হোস্টেল ত্যাগের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগের এক প্রভাষক আমাদের হোস্টেল ত্যাগ করতে মানা করেন। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের রুমেই থাকতে বলেন তিনি। তার হাতে পিস্তল ছিল। তিনি আমাদের মানা করতে না করতেই একটা বুলেট এসে লাগে তার গায়ে। দু’জন জঙ্গিকে গুলি করতে দেখলাম। আমি দৌড়ে ভেতরে চলে গেলাম। পরে হোস্টেলের পেছনের দেয়াল টপকে কোনোরকমে বেঁচে গেছি আমি।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পালানোর সময় আমি দেখলাম তিন হামলাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করছে। একজন ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছে, দ্বিতীয় জন কোণার দিকে আর তৃতীয় জন দেয়ালের কাছে। ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীরা ক্যাম্পাস ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থান নিয়েছিল।
ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক শাবির খান বলেছেন, গুলি যখন শুরু হলো, তখন বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিলেন। প্রথমে আমি বুঝতেই পারছিলাম না, কী ঘটছে। পরে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের মাধ্যমে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হই।
হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্ধ শতাধিক মানুষ এ হামলায় আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা কোনো বিশ্বাস বা ধর্মের লোক হতে পারে না। দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করেই ছাড়বো আমরা। বর্তমানে নওয়াজ শরীফ সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থান করছেন। বিশ্ব ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিতে তিনি সেখানে গেছেন।
নিন্দা মোদির
পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক-তালিবানের নৃশংস হত্যাকা-ের নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটারে প্রতিবেশী দেশের মর্মান্তিক হত্যাকা-ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার কঠোর নিন্দা করছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি। আহতদের জন্য রইল প্রার্থনা। সূত্র : রয়টার্স, এবিপি আনন্দ ও বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালিবান হামলায় রক্তাক্ত পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় : নিহত ২৫
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ