Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বাংলাদেশকে কাছে পেতে চায় পাকিস্তান

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আহমদ আতিক, পাকিস্তান থেকে ফিরে : ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বাংলাদেশকে কাছে পেতে চায় পাকিস্তান। আর তাই বাংলাদেশের সাথে বিরোধ মেটাতে চায় দেশটি। সেই সাথে চায় চীনা প্রকল্প ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনেতিক করিডোর প্রকল্পে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এতে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রাদেশিক মন্ত্রী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এভাবেই তাদের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে পাকিস্তান বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। আমরা পিপল টু পিপল রিলেশন চাই। আমাদের পূর্ব পুরুষরা অতীতে যেমন ঐকতান তৈরি করেছিলেন। অপর দিকে, কঠিন এবং বেদনাদায়ক ইতিহাসও রয়েছে। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক হবে। তিনি বলেন, আমরা যতই দূরে যাই না কেন, দুই জাতি হিসেবে আমাদের একসাথে চলতে হবে।
সার্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সব দেশ এক সাথে থাকলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। আর যখনই সার্কে অনুষ্ঠিত হবে, তখনই সার্ক ভেহিকল এগ্রিমেন্টও হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এখন এ অঞ্চলের যে কারোই চোখে পড়ে। তিনি বাংলাদেশে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক আসরের আয়োজনে পাকিস্তানের সমর্থনের কথাও জানান। সেই সাথে জানান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামেও বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার কথা।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। যেমনÑ ৫০ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানাই।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক তথ্য, সংস্কৃতি এবং কর মন্ত্রী মুজতবা সুজা-উর-রহমান, পাঞ্জাবের চিফ মিনিস্টারের বিশেষ সহকারী এবং প্রদেশটির মুখপাত্র মালিক মুহাম্মদ আহমেদ খান, পাকিস্তানের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সেরাজ লতিফ এবং পিআইডির ডিজিসহ (পিআর) বিভিন্ন কর্মকর্তারাও সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ নিয়ে একই ধরনের ধারণা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানি থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত সাউথ এশিয়ান স্ট্রাটেজিক স্টাবিলিটি ইনস্টিটিউট (সাসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং চেয়ারপারসন ড. মারিয়া সুলতান বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং আইএস ও আল কায়েদার মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, চীনা প্রকল্প ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনেতিক করিডোর প্রকল্পে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ এর আহŸান জানান। তিনি বলেন, এর ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বিশেষ করে গোয়াদার বন্দর নির্মাণ শেষ হলে তার সাথে সম্পূরক হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহৃত হতে পারে বলে জানান। এতে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে দেশটি লাভবান হতে পারে। ভবিষ্যতে গোয়াদর বন্দর হবে বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি হাব। আর এ থেকে বিশ্বের উদীয়মান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। আর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিয়ে চীনা প্রকল্প ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনেতিক করিডোর প্রকল্পে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ হলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তাহীনতা ও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিও দূর হবে।
তিনি প্রজেকশনের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন, কিভাবে এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিস্তার লাভ করছে এবং এর ফলে কারা কিভাবে লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনেতিক করিডোর প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি কমবে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়বে।
তিনি বলেন, চীনের একুশ শতকের সিল্ক রোডে চট্টগ্রামবন্দরও গুরুত্বপূর্ণ, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সমুদ্রপথ বিষয়ক উদ্যোগের লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মারিয়া বলেন, ব্রিটেন ও আরো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও এখন বহুশত কোটি ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে (সিপিইসি) যোগ দিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। রাশিয়াও এতে যোগ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটেন সরকারিভাবে চীন ও পাকিস্তানের যৌথ প্রকল্প সিপিইসিতে তাদের এক প্রধান অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ড. মারিয়া সুলতান বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও এই গেম চেঞ্জার প্রকল্পে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ৫২টি দেশ সিপিইসিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ফলে সিপিইসি হবে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ধারণা। আর গোয়াদার বন্দর এতে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। এ বন্দর হয়ে উঠবে জ্বালানি হাব। বাংলাদেশের চট্টগাম বন্দর এবং নির্মাণাধীন বন্দরগুলোও স্বাভাবিকভাবেই এ প্রকেল্পে যুক্ত হবে। আর বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে পাকিস্তান ও চীনের পাশাপাশি তা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ