Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যাঁতাকলে পিষ্ট চাকরি প্রার্থীরা

ব্যাংক নিয়োগে প্রশ্নফাঁস-শর্টলিস্ট

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন/হাসান সোহেল : নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এবং শর্টলিস্টের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরীক্ষা শুরুর আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে সরকারি ব্যাংকের প্রশ্ন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আবেদন করলেও পরীক্ষায় বসারই সুযোগ হচ্ছে না তাদের। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাইয়ের পরিবর্তে শর্টলিস্টে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে এসব ব্যাংক। ফলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এখন সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকেই নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
সর্বশেষ গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত জনতা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ওই দিন বিকেলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সকাল থেকেই কিছু কিছু পরীক্ষার্থীর হাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যায়। অনেকেই তা ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়ে যারা নিশ্চিত হয়েছেন তারা প্রশ্নের সমাধান করে পরীক্ষার হলেও নিয়ে গেছেন। বারবার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের কারণে হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরীক্ষার্থীরা। তাদের প্রশ্ন প্রশ্নফাঁস করে যদি পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে এবং বাণিজ্য করা হবে তাহলে পরীক্ষার নামে নাটক মঞ্চস্থ করে এতোগুলো পরীক্ষার্থীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কেন? সরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় যখন অতিষ্ট প্রার্থীরা। তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। নিয়োগের জন্য প্রায়শই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে এসব প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞপ্তিতেই জিপিএ-র মারপ্যাঁচে ফেলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে আবেদনের অযোগ্য বিবেচনা করে বাদ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতায় যারা আবেদন করছেন তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সৌভাগ্যও হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করা কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞপ্তির যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করার পরও তাদের পরীক্ষার জন্য ডাকা হচ্ছে না। যদি নিয়োগের পরীক্ষায় অংশই নিতে না দেয়া হবে তালে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন নেয়ার মানে কি? আসাদুল ইসলাম নামের এক নিয়োগ প্রার্থী বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি, কিন্তু পরীক্ষায় বসতেই পারছি না। যেই ব্যাংকেই আবেদন করি তারাই শর্ট লিস্ট নামের আজব এক সিস্টেমে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। নিজের যোগ্যতা যাচাই কি করবো পরীক্ষাতে বসারই সুযোগ পাচ্ছি না। চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্টলিস্ট না করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও কোন ব্যাংকই তা মানছে না।
চাকরি প্রার্থীদের এই ভোগান্তি নতুন নয়, এর আগে ২০১৫ সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি ব্যাংকের প্যানেল থেকে নিয়োগ বন্ধ করে দেয় সিলেকশন কমিটি। এতে বিক্ষুব্ধ প্যানেলধারী চাকরি প্রত্যাশীরা নিয়োগের জন্য সকলে মিলে হাইকোর্টে রিট করে। উক্ত রিটকারীদের বয়স, মানবিক দিক এবং পরিবারগুলোর আহাজারি বিবেচনা করে ও উক্ত ব্যাংকের গুলোর পর্যাপ্ত পদ খালি থাকা সাপেক্ষে বিষয়টা সমাধান করতে ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) ব্যর্থ হয়। ফলে রিটটি এখনো চলমান (২ বছর যাবত)। শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাদের কাছ থেকে চাকরির আবেদনের মাধ্যমে টাকা না নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলো টাকা ছাড়া আবেদন করার সুযোগ দিলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো শর্টলিস্ট নামক আজব এক প্রথা চালু করে। এর মাধ্যমে পরীক্ষায় বসার আগেই প্রার্থীদের অমেধাবী তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে। পরবর্তীতে শর্টলিস্ট বন্ধে নোটিশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আবেদন করা সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে। তবে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা মানছে না। তারা এই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই একের পর এক শর্টলিস্ট করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।
দুই শিফটের পরীক্ষায় বৈষম্য: সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্যাংকার সিলেকশন কমিটিকে (বিএসসি)। প্রথম কয়েকটি পরীক্ষা আগের নিয়মে নিলেও তাদের নতুন নিয়োগ পদ্ধতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। সর্বশেষ জনতা ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দুই শিফটে নেয়ায় এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একটি শিফটে কঠিন এবং অপর শিফটে সহজ প্রশ্নের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চাকরি প্রার্থীরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪ মার্চ জনতা ব্যাংকের ওই পরীক্ষায় সকালের শিফটের প্রশ্ন ছিল অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু বিকেলে শিফটে প্রশ্ন করা হয় খুবই সহজ। আবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সকালের শিফট থেকে নেয়া হয় মাত্র তিন হাজার, যেখানে বিকেলের শিফট থেকে নেয়া হয় সাত হাজার প্রার্থী। যদিও নিয়োগ পরীক্ষার জন্য টেন্ডার বিশ্লেষণে পাওয়া যায়, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকালের অংশ থেকে ৫ হাজার এবং বিকালের অংশ থেকে ৫ হাজার পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ করা হবে। কমিটির এধরনের কাজে হতাশ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে প্রার্থীদের মাঝে। বিশেষ করে এই সিলিকশন কমিটির অধীনে আরও কয়েকটি পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকেই নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হয়নি। যে ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ভালো, সেই ব্যাংকও ভালো। কর্মকর্তাদের নৈতিকতায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই অনিয়ম বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার ও ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) সদস্য সচিব লায়লা বিলকিস আরা ইনকিলাবকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে শর্ট লিস্ট থেকে নিয়োগের বিষয়ে কমিটি খোঁজ খবর নিবে।
দুই শিফটের পরীক্ষায় সকালে সহজ, বিকালে কঠিন প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণত একই ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে। একটা থেকে অন্যটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন- একটি প্রশ্নে নেপালের রাজধানী কোথায় থাকলে অন্য প্রশ্নে ভুটানের রাজধানী হবে। সাধারণত এভাবেই প্রশ্ন করা হয়। তবে গত শুক্রবারের জনতা ব্যাংকের পরীক্ষা সম্পর্কে তিনি এখনো কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ