পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : সেটি ছিল তার শেষ রাত। তার লোকজন ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের মোতায়েনকে এক অভিশপ্ত ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করছিল।
সিল টিম ৪-এর কমান্ডার জব ডব্লিউ. প্রাইস তার টিমের এক নেভি সিল সদস্যের অতর্কিত হামলায় নিহত হওয়ার রিপোর্টটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তার স্টাফরা আমেরিকার সামরিক চৌকিগুলো তাদের আফগান সহযোগীদের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছিল। কমান্ডার প্রাইস তার টিমকে তাদের সেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন যা সচরাচর কেউ করে না।
তার নির্বাহী অফিসার লক্ষ্য করলেন, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২-র সে রাতে তার কমান্ডারের সিগ সাওয়্রা পিস্তলটি তার ডেস্কের উপর রয়েছে যা তিনি আগে কখনো দেখেননি। এর মধ্যে কমান্ডার প্রাইস তার রুমে ফিরে গেলেন। দেখলেন তার ৯ বছরের মেয়ের ছবিটি ডেস্কে নেই। তার প্যান্টের পকেটে একটি আমেরিকান ঘাঁটির কাছে বোমা বিস্ফোরণে নিহত একটি আফগান বালিকার ছবি ছিল।
পরদিন সকালে এক আফগান জেনারেলের সাথে বৈঠক ছিল ৪২ বছর বয়স্ক কমান্ডারের। কিন্তু এলেন না তিনি। তার লোকজন নানা জায়গায় খুঁজল তাকে। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল তার রুমে। স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে শুয়েছিলেন তিনি, পিস্তলটি হাতে ধরা, রক্তে ভেসে গেছে বিছানা।
তার এ মৃত্যু ছিল অপ্রত্যাশিত। সিল সদস্যদের আত্মহত্যার ঘটনা বিরল। বিশেষ করে একটি যুদ্ধ এলাকায় মোতায়েন থাকা অবস্থায় এবং একজন উচ্চ সাফল্য অর্জনকারী অফিসারের বেলায়। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার কমান্ডের অধীন ৪ জন লোককে হারিয়েছিলেনঃ ২ জন সিল সদস্য ও ২ জন সেনা সদস্য। দক্ষিণপূর্ব আফগানিস্তানে কমান্ডার প্রাইস যেখানে মোতায়েন ছিলেন সেখানে সহযোগী আফগানদের উপর অবিশ^াস ক্রমেই বাড়ছিল এবং তালিবানরা ক্রমেই শক্তিশালি হয়ে উঠছিল। তালিবানদের পরাজিত করার আমেরিকার ইচ্ছা ক্রমেই বিলীন হচ্ছিল, সামরিক বাহিনী তার সৈন্যদের প্রতিদিনের যুদ্ধ থেকে মুক্ত রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল।
একজন এলিট বিশেষ বাহিনী সেনাদলের কমান্ডারের জন্য, যার সিল টিম ৬ সহযোগীরা ওসামা বিন লাদেন হত্যার মত দু:সাহসী অভিযান পরিচালনা করেছিল কিংবা কোনো হতাহত হওয়া ছাড়াই সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে ক্যাপ্টেন রিচার্ড ফিলিপসকে উদ্ধার করেছিল, তাদের জন্য আফগানিস্তানের চাপ বিশেষ ভাবে প্রচন্ড হয়েই অনুভূত হয়ে থাকতে পারে। দূর পাল্লার ড্রোন অভিযান ও আমেরিকান স্থল সেনা মোতায়েনে অনীহার যুগে যুদ্ধে নিজের লোকদের না হারানোর ব্যাপারে অফিসারদের উপর ক্রমবর্ধমান হারে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
কমান্ডার প্রাইস তার আস্থাভাজনদের বলেছিলেন, আফগানিস্তানে মোতায়েনের আগে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। নৌবাহিনী বলে, ঐ অফিসার ক্যাপ্টেন রবার্ট ই. স্মিথ তার টিম লিডারদের প্রতি গতানুগতিক ভাবে সে আদেশ জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে তখন অন্যান্য সামরিক অফিসাররা অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করেন।
সাবেক সিল টিম কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিল্টন জে. স্যান্ডস তার বন্ধু কমান্ডার প্রাইসের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তকারীদের বলেন, কমান্ডাররা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত শত্রুর সংখ্যার ভিত্তিতে তাদের সফল সৈন্য মোতায়েনের কথা বিচার করেন না।
তিনি কোনো নোট বা ব্যাখ্যা রেখে যাননি। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে কোনো আত্মহত্যার পিছনে কারণ সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। নৌবাহিনীর অপরাধ তদন্ত দফতরের এজেন্টরা পরের বছর তার সহযোগী, বন্ধু ও আত্মীয়সহ ডজন ডজন লোকের সাক্ষাতকার নেন। নৌবাহিনী মৃত্যু পর্যালোচনা বের্ডের সিদ্ধান্তের আগেই প্রায় অর্ধেক লোক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে কমান্ডার প্রাইস আত্মহত্যা করেছেন।
সাবেক এক সিল টিম সদস্য তদন্তকারীদের বলে যে কমান্ডার খুন হয়ে থাকতে পারেন। তার কিছু সহকর্মী ও বন্ধু বিস্মিত ও সন্দেহগ্রস্ত যে কেউই কোনো গুলির শব্দ শোনেনি। তার পরিবারের সদস্যরা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি যে তিনি কি করে আত্মহত্যা করতে পারেন।
কমান্ডার প্রাইসের বাবা হ্যারি প্রাইস এক সাক্ষাতকারে বলেন, কোনো নোট নেই, কোনো ই মেইল করেনি, কোনো ফোন করেনি। কি করে সে আত্মহত্যা করতে পারে আমি তা জানি না। ফিলাডেলফিয়ার পটস টাউনে তার বাড়িতে চারদিকে ছেলের অসংখ্য ছবি নিয়ে বসে থাকেন হ্যারি প্রাইস। সে সব ছবি ছোটবেলায় সাঁতারের স্কুবা মাস্ক ও পায়ে ফ্লিপার পরা, হাইস্কুলের ফুটবল টিমের সদস্য, কুস্তিগীর ও ক্যামোফ্লেজ পোশাকে অস্ত্র হাতে এক তরুণ সিল সদস্য হিসেবে।
তবে তাকে যারা আফগানিস্তানে দেখেছেন তারা তাকে বর্ণনা করেছেন একজন সঠিক নেতা হিসেবে। অন্যদিকে আফগান উপজাতি বিষয়ক এক উপদেষ্টা তদন্তকারীদের বলেন, কমান্ডার প্রাইস হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি যদি ভেঙ্গে পড়ে থাকেন তাতেও আমি অবাক হব না।
তিনি তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে তিনি একাকী হয়ে পড়েছেন। সিল টিমের কঠোর নিয়ম-কানুনের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি বলেন, তার দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি উপরের বা নিচের কারো উপর আস্থা রাখতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন।
২০১১ সাল পর্যন্ত ন্যাভাল স্পেশাল ওয়ারফেয়ার কমান্ড-এর প্রধান অবসর প্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল এডওয়ার্ড জি. উইন্টারস তৃতীয় বলেন, এটা বলা কঠিন যে অফিসাররা তাদের অধীনস্থ লোক হারালে তার প্রতিক্রিয়া কি হয়। তিনি বলেন, প্রাইসের পরিচিত অফিসাররা তাকে বলেছেন যে নিজের লোকদের মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেকে দায়ী মনে করতেন। উইন্টার্স বলেন, সৈন্যরা প্রাণ হারিয়েছিল। তাই পরিকল্পিত সময়ের আগেই অন্যদের প্রত্যাহার করা হচ্ছিল। আমরা সে স্থান ত্যাগ করছি যেটির পরিস্থিতি আমরা যখন এসেছিলাম তার চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে।
তালিবানদের সাথে শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও ২০১২ সাল নাগাদ আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহার ভালোভাবেই চলতে থাকে। সিল টিম সদস্যরা রকেট হামলা, আইইডি ও অতর্কিত হামলার দিকে নজর রাখছিল। এদিকে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক মার্কিন মিত্রদের উপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
কমান্ডার প্রাইস বিদ্যমান বিপদ বুঝতে পেরেছিলেন। সেই বসন্তে তিনি তার বন্ধু সিল ২ টিমের প্রধান কমান্ডার মাইক হায়েসের ব্রিফিংয়ে যোগ দিতে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। সে সময় কমান্ডার হায়েস ৪ জন অভিযুক্ত সৈন্যের ব্যাপারে নৌবাহিনী তদন্তকারীদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে ৩ জন সিল সদস্যও ছিল যারা ওরুজগান প্রদেশে কালাচ সেনা ফাঁড়িতে আটক বন্দীদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় ও তাতে ১ জন আফগান মারা যায়।
বিমান বাহিনী একাডেমির গ্রাজুয়েট ও আগ্রহী স্কাই ডাইভার প্রাইস ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তার চাচা বিমান বাহিনীর এক কর্নেলের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। পরে তিনি সিল-এ যোগ দেয়ার জন্য বিমান বাহিনীর পরিবর্তে নৌবাহিনীতে কমিশন পরিবর্তন করেন।
তার বাবা বলেন, সে আমাকে বলেছিল যে আমি সেরাদের সাথে থাকতে চাই। সিল-ই সবার সেরা।
তার সাথে চাকুরি করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সিল কমান্ডার ডেনিস ডি বোবস। তিনি বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা সময় তিনি স্পেনে রোটায় কর্মরত ছিলেন। তারপর চাকুরি তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে ওঠে। সেখানে সকল কঠিন কাজে তিনি জড়িত হন।
সিল ৪ টিমের দায়িত্ব গ্রহণের আগে কমান্ডার প্রাইস প্রায় এক ডজন বার ইরাক ও আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন। এ সময় কালে তার অধীনস্থ ১ সৈন্য নিহত হয়, তিনি ৪টি ব্রোঞ্জ স্টার লাভ করেন।
সেপ্টেম্বরে কমান্ডা প্রাইসে অধীন সিল ইউনিট ও সৈন্যদের দক্ষিণ পূর্ব আফগানিস্তানের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ফাঁড়িগুলোতে অল্প সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়। তারা আফগান স্থানীয় পুলিশ নামে পরিচিত মিলিশিয়াদের সাথে কাজ করে, তাদের প্রশিক্ষণ দেয় ও স্থানীয় মানুষের মন জয় করা চেষ্টা করে। সহযোগীরা বলেন, কমান্ডা প্রাইস গ্রামবাসীদের সাথে সভা করা কঠিন বলে দেখতে পান। তবে গ্রামে স্থিতিশীলতা রক্ষার কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি গ্রামের প্রবীণদের কথা শুনতেন। সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।