Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতি বর্ষণ ও জোয়ারে চট্টগ্রামে কোমর সমান পানিবদ্ধতা

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভোর থেকেই ঘনঘোর মেঘে আকাশ কালো করে টানা বৃষ্টিপাত। সেই সাথে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। মুহুর্মুহু বিকট আওয়াজে বজ্রপাত। সকালের দিকেই আবার ভরা জোয়ার। এভাবেই গতকাল (শুক্রবার) দিনভর বৈশাখের অনেকটা ‘অসময়ে’র অতি বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে চট্টগ্রাম মহানগরীর অনেক এলাকায় কোমর সমান পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় হাজারো বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদাম, আড়ত, বাজার, মসজিদ, রাস্তাঘাট, অলিগলি কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। নগরীজুড়ে জনদুর্ভোগ পৌঁছে চরমে। খাল-নালা উপচে গিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাটের ভেতরের কাদাপানি, বালির স্তূপ আর ময়লা-আবর্জনা অপসারণেই বিশেষত নিচু এলাকাগুলোর অসংখ্য মানুষজনকে গতকাল রাত অবধি হয়রান-পেরেশান হতে হয়েছে। ছুটির দিন থাকায় সরাতে না পেরে প্রচুর মালামাল বিনষ্ট হয়ে গেছে শত শত দোকান, গুদাম, আড়তের।
গতকাল ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১২ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সেই সাথে পূবালী বায়ুমালার সাথে পশ্চিমা বায়ুর মিলনের ফলে বৈশাখের গোড়াতে বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আজ (শনিবার) চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বন্দরসমূহে ৩ নং সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সতর্কতা রয়েছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অতি ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে।   
চট্টগ্রামে গতকাল ভোরে গাঢ় মেঘের বলয়ে করে হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে বজ্রসহ ভারী বর্ষণ নামে। চলে দিনভর। এতে ব্যাপক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। ছুটির দিন থাকায় যাত্রী কম থাকলও যানবাহনের অভাবে ঘরমুখী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বজ্রসহ ভারী বর্ষণে নগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, ষোলশহর, নাসিরাবাদ, বাকলিয়া, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রাজাখালী, আগ্রাবাদ, সাগরিকা, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ অনেক এলাকা কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটে যানবাহন চলেছে হাতেগোনা। এসব এলাকায় শত শত গুদাম, আড়ত, দোকান-পাট ও বাসাবাড়ি কাদাপানিতে প্লাবিত হয়। নগরীতে পাহাড়-টিলা কাটা মাটি, বালি এবং নির্মাণ কাজের বালি-মাটিতে রাস্তাঘাটে সর্বত্র স্তূপ পড়ে যায়। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টির পানিও উপচে যায় এ কারণে। প্রবল বৃষ্টি ও দমকা-ঝড়ো হাওয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস, পরিবহন ব্যাহত হয়। সন্ধ্যায় বর্ষণ কমলেও নগরীর অনেক জায়গায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি, কাদা-বালি আটকে থাকায় জনদুর্ভোগ অব্যাহত থাকে।
বন্দরে ৩নং সংঙ্কেত   
গত সন্ধ্যায় সর্বশেষ আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড়ধসের সতর্কবাণী    
বজ্রঝড়ের ঘনঘটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও গতকাল (শুক্রবার) থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশংকা রয়েছে।
এদিকে আজ (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে। যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বর্ধিত। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টি ২০৪ মি.মি.   
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ২০৪ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১ মিমি, ময়মনসিংহে ৪১ মিমি, চট্টগ্রামে ৮৬ মিমি, সীতাকুন্ডে ১৩৬ মিমি, সিলেটে ৫০ মিমি, বরিশালে ৪৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।



 

Show all comments
  • ডাঃ মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুল্লাহ ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:৫৬ এএম says : 0
    পানিবদ্ধতা নিরাসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Solaman ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    আল্লাহ আপনি সবাই হেফাজাত করুন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অতি বর্ষণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ