Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ আলামত পরীক্ষার অনুমতি

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বনশ্রীতে একই বিছানায় শিশু ভাইবোনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট ‘ক্লু’ খুঁজে পায়নি পুলিশ। এ ঘটনার ৩ দিন পরেও গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। এদিকে সন্দেহের তীর থেকে শিশুদের বাবা-মা ও খালাকে র‌্যাবের গাড়িতে করে জামালপুর থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। এর আগেও বাড়ির দুই নিরাপত্তা কর্মী, শিশুদের শিক্ষিকা ও ২ স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ওই ৮ জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব। তবে গত রাত ৮টায় র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে শিশুদের বাবা-মায়ের সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। শিশুরা খুনের শিকার হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসকরা তা-ই বলেছেন। রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু দুটির মৃত্যুর বিষয়ে তাদের পরিবার এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। তাই রহস্য উদ্ঘাটনে সম্ভাব্য কারণগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশু দুটির পরিবার মামলা না করলে পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করবে। ঘটনাটিকে ‘হত্যা’ বলে ধারণা করে এর ‘ক্লু’ বের করতে কাজ করছে একাধিক সংস্থা।
র‌্যাব সূত্র জানায়, গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় নিহত শিশুদের বাবা আমান উল্লাহ, মা মাহফুজা মালেক ও খালা আফরোজা মালেককে জামালপুর সদরের ইকবালপুর থেকে ঢাকায় আনা হয়। র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম সারওয়ার বলেন, শিশু দুটির মা-বাবা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনা হয়। এটা আটক নয়। জামালপুরের ইকবালপুর হচ্ছে শিশু দুটির মামাবাড়ি। শিশুদের বাবা আমান উল্লাহর স্থায়ী বাড়িও জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রায়েরপাড়া গ্রামে। তাদের মা মাহফুজা মালেকের গ্রামের বাড়িও শহরের ইকবালপুরে। আমান-মাহফুজা সম্পর্কে চাচাতো ভাইবোন। শহরের ইকবালপুর এলাকায়ও তাদের ভাড়া বাসা রয়েছে। জামালপুরের দুটি বাসা-বাড়ি রেখেও ব্যবসায়িক কারণে আমান উল্লাহ সপরিবারে ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বি ব্লকের ৪নং রোডের ৯ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন। শিশু দুটির খালা আফরোজা মালেকও সপরিবারে ভাড়া থাকেন বনশ্রীতেই।
গত সোমবার ওই বাসায়ই আমান-মাহফুজা দম্পতির দুই সন্তান নুসরাত আমান (১২) ও আলভী আমানের (৬) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ঘটনার পর স্বজনেরা দাবি করেন, চাইনিজ থেকে আনা খাবার খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকেরা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। দুই সন্তানের লাশ মর্গে রেখে মা-বাবার গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় এবং মামলা না করায় এ ঘটনা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। ক্লু-হীন এ ঘটনায় দুই শিশুর মা-বাবাসহ কেউ সন্দেহের বাইরে নন বলে উল্লেখ করছে পুলিশ। দুই সন্তানের লাশ মর্গে রেখে বাবা-মায়ের গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়া এবং মামলা না করায় রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে।
সূত্র জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত ঢাকার র‌্যাব-৩ ও জামালপুর র‌্যাব-১৪ টিমের সদস্যরা জামালপুর শহরের ইকবালপুর এলাকার বাসায় নিহত শিশু অরণী ও আলভী আমানের বাবা আমানুল্লাহ, মা মাহফুজা মালেক জেসমিন ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বেলা সোয়া ১১টার পর র‌্যাব-৩-এর একটি দল তাদের নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেন। র‌্যাব-৩ খিলগাঁও তালতলা ঢাকার ক্যাম্প কমান্ডার এডিশনাল এসপি মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, জিজ্ঞাসাবাসের জন্য তাদের ঢাকায় আনা হয়। তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আলামত পরীক্ষায় পুলিশকে অনুমতি
এদিকে দুই ভাইবোনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জব্দ করা আলামত ডিএনএ প্রোফাইলিং ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম গতকাল বুধবার এ অনুমতি দেন। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশের জব্দ করা আলামত ডিএনএ প্রোফাইলিং ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন রামপুরা থানার এসআই সোমেন কুমার বড়–য়া। জব্দ করা আলামতের মধ্যে রয়েছে বালিশ, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, টিস্যু ও কম্বল। আর রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার বোতলের সংরক্ষিত পানি। এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিচারক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন।
শিশু দুটির খালা আফরোজা মালেক নীল সে সময় দাবি করেছিলেন, দুই সন্তানকে নিয়ে তাদের বাবা-মা রোববার রাতে একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। অবশিষ্ট খাবার প্যাকেটে করে বাসায় নিয়ে আসেন। সোমবার দুপুরে সেই অবশিষ্ট খাবার খাওয়ার পরে দুই ভাইবোন ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর বিকেলে ডাকাডাকি করা হলেও তাদের কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে রাত পৌনে ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় পুলিশ সোমবার সকালেই ‘কেন্ট’ নামে ওই হোটেলের ব্যবস্থাপক ও প্রধান বাবুর্চিসহ তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। পরে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। নুসরাত আমান অরণী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিদ্ধেশ্বরী প্রধান শাখায় ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার ছোট ভাই আলভি আমান বনশ্রীর হলিক্রিসেন্ট স্কুলে নার্সারি শ্রেণিতে পড়ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ আলামত পরীক্ষার অনুমতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ