পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে দেশের সকল উপজেলায় আইসিটি রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সকালে তা তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে ১২৫টি উপজেলায় ‘আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ব্যুরো ও পরিসংখ্যানের (বেনবেইস) উদ্যোগে এবং দক্ষিণ কোারিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে খরচ হয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সারাদেশের সকল উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ১ম পর্যায়ে এদিন সারাদেশে ১২৫টি ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন করা হল। এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের মধ্যে সারাদেশের ১ লাখ শিক্ষককে আইসিটিতে মাস্টার ট্রেনিং প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হবে। এজন্য ১২৫টি ইউআইটিআরসিই’র আজ উদ্বোধন হলো, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ১৬০টি সেন্টার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সমগ্র দেশের ৪৮৯টি উপজেলাতেই এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। বাংলাদেশ কোনোমতেই পিছিয়ে থাকতে পারে না। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুতভাবে বাস্তবায়ন করা, আরও ব্যাপকভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো এবং উন্নয়নের গতিকে তরান্বিত করা- এই কাজগুলো খুব সহজ হয় শুধুমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা কেবল শহর বা রাজধানীকে কেন্দ্রিক করে উন্নয়ন করতে চাই না। উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গেছি, সকলের সমান উন্নয়ন করতে চাই।
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। সমগ্র দেশে ৫ হাজার ২৭৫ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ২শ’ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের ৮ হাজার পোস্ট অফিসকেও ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণে মানুষের নানা সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবার সাথে সাথে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে ডিজিটাল ক্লাস রুম করে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ২৬ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের অন্তত একটি করে হলেও আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করে দেব।
তিনি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা যে যেই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনে একটি করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টি মিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে হলেও সহযোগিতা করুন। আপনার স্কুলকে আপনিই দিন। যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সেই স্কুলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে হলেও আপনাদের এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি বলেন, আগে মনে আছে কম্পিউটার কিনতে অনেক টাকা লাগত। পার্টির জন্য একটা কম্পিউটার কিনেছিলাম, অ্যাপল কম্পিউটার, ডিজিটাল প্রিন্টার প্রায় ৩ লাখ টাকায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়াম লীগই প্রথম তথ্য প্রযুক্তির সন্নিবেশন ঘটায় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ১৬ কোটি মানুষ ১৩ কোটি মোবাইল সীম ব্যবহার করে, অনেকে দুই-তিনটাও ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মানুষ একটু আলাপ প্রবণ বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দেশে কোন বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না। আমরা ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলে এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিক্ষক সরকারের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শেই প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিই, তখন লোকে ঠাট্টা করতো। কিন্তু এখন আর কেউ ঠাট্টা করতে পারেনা। কারণ সরকার গঠনের সময়কার সমস্যাগুলো আমরা কাটিয়ে উঠেছি।
তিনি বলেন, সারাদেশে ১শ’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ১৪ হাজার ৩ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সাধারণ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশ কি তা প্রমাণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশুরা অনেক বেশি মেধাবী। তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজলভ্য করার উদোগ নিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ১২৫টি উপজেলায় ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেনবেইসে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন বিষয় ভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ভার রুম স্থাপন সহ উপজেলা থেকে নির্বাচিত শিক্ষকদের মাসব্যাপী তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যম নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবেন। একইসঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের একসেস টু ইনফরমেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব কেন্দ্র থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
ভবিষ্যতে উপগ্রহ স্থাপন করা হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গম এলাকা যেখানে কেউ চিন্তা করতে পারেনি ইন্টারনেট সার্ভিস থাকতে পারে। সেখানেও ইন্টারনেট সেবাকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ২৫ হাজার ওয়েব পোর্টাল নিয়ে তৈরী দেশের ‘তথ্য বাতায়ন’ এক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
‘ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপন দেশের জন্য মাইল ফলক’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে, দেশের উন্নয়ন করেছে।
তিনি বলেন, আজ বিশ্বে বাংলাদেশ একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। আমাদের আর কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না। আমরা বীরের জাতি, আমরা বিজয়ী হবো। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এবার বাকেরগঞ্জ, মুলাদী, চরফ্যাশন, নলছিটি, আমতলী, বাউফল গলাচিপা, মোড়েলগঞ্জ, রায়পুরা, মনোহরদী, মোকসেদপুর, নড়িয়া হালুয়াঘাট, ইসলামপুর, নালিতাবাড়ি, কালীহাতি, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রামু, ছাগলনাইয়া, কোম্পানীগঞ্জ, রাঙামাটি সদর, ফরিদগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, দাউদকান্দি, বাজিতপুর, কালীগঞ্জ, মহেশপুর, শৈলকুপা, লোহাগড়া, গাংনী, কুমারখালী, তানোর, পুঠিয়া, গুরুদাসপুর, বাগাতিপাড়া, সুজানগর, ক্ষেতলাল, গাবতলী, শিবগঞ্জ, সাদুল্ল্যাপুর, পীরগঞ্জ, পার্বতীপুর, দেবীগঞ্জ, রাণীশংকৈল, পতœীতলাসহ দেশের ১২৫টি উপজেলায় ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাকায় নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত আন সিয়ং ডু ও ইউআইটিআরসিই প্রকল্প পরিচালক ফসিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম’সহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ইউআইটিআরসিই-এর উদ্বোধন শেষে টুঙ্গীপাড়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহীর পবায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।