Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামিক স্টেট ও গরিবের পারমাণবিক বোমা

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গত নভেম্বরে দক্ষিণ ইরাকের জুবাইরের একটি স্থাপনা থেকে অল্প পরিমাণ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ইরিডিয়াম-১৯২ খোয়া যায়। সংবাদ মাধ্যমে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ব্যাপকভাবে খবর প্রচার এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) এটা চুরি করেছে ও তা ডার্টি বোমা তৈরিতে ব্যবহার করতে যাচ্ছে বলে যখন জল্পনা কল্পনা চলছে সে সময় যেখান থেকে সেই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ খোয়া গিয়েছিল তার অনতিদূরেই অবিকৃত অবস্থায় তা পাওয়া যায়।
একটি রেডিওলজিক্যাল ডিসপার্স ডিভাইস, যাকে সাধারণভাবে ডার্টি বোমা বলে আখ্যায়িত করা হয়, তাকে প্রায়ই গরিবের পারমাণবিক বোমা বলেও গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে এটা এ বস্তুটির ব্যাপারে খুব সঠিক বর্ণনা নয়।
কোনো ডার্টি বোমা পারমাণবিক বোমা নয়, কারণ বিস্ফোরণ ঘটার জন্য এর পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করতে হয় না। পরিবর্তে ডিনামাইটের মত প্রচলিত বিস্ফোরকের দ্বারা ডার্টি বোমার তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ ঘটে। একটি ডার্টি বোমার ভয়াবহতা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় সামগ্রীর ধরন, আবহাওয়ার অবস্থা এবং কোথায় বোমাটি বিস্ফোরিত হচ্ছে ইত্যাদি
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি ডার্টি বোমা গণহত্যার অস্ত্রের চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে বেশি মূল্যায়িত হয়। সঠিক সামগ্রী ব্যবহার করে ঠিক মত নির্মিত একটি ডার্টি বোমা স্থাপন তুলনামূলক ভাবে সহজ। তা সঠিক আবহাওয়াগত পরিবেশে, সঠিক সময়ে ও সঠিক স্থানে বিস্ফোরিত হলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ধ্বংসকর হতে পারে।
হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামের মধ্যে তেজস্ক্রিয় বস্তু পাওয়া যেতে পারে। ১৯৯৮ সালে উত্তর ক্যারোলিনার একটি হাসপাতাল থেকে কেসিয়াম-১৩৭-এর ১৯টি ছোট টিউব খোয়া যায়। সেগুলো আর পাওয়া যায়নি।
এটা আশ্চর্য নয় যে আইএসের মত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ, যারা গণ বিধ্বংসী অস্ত্র হাতে পেতে চায়, তারা একটি ডার্টি বোমা তৈরির জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত তেজস্ক্রিয় সামগ্রী পেতে চাইবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কয়েক বছর ১৩০টিরও বেশি সোভিয়েত আমলের পরমাণু চালিত লাইটহাউস পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত ছিল। এ সব সামগ্রীর উচ্চ মূল্য ও কালো বাজারে বিপুল চাহিদা থাকায় এগুলো চুরি ও বিক্রি হওয়া অস¦াভাবিক ব্যাপার নয়।
১৯৯৮ সালে ব্রাজিলে দু’জন ধাতব আবর্জনা পরিষ্কারকারী একটি পরিত্যক্ত রেডিওথেরাপি ক্লিনিক থেকে কেসিয়াম সম্বলিত চিকিৎসা সরঞ্জাম অপসারণ করেন। কি অপসারণ করছেন তা ঠিকমত না জেনেই তারা যন্ত্রগুলোকে সরিয়ে নেন। এর ফল হিসেবে তারা কেসিয়াম-১৩৭-এ আক্রান্ত হন এবং ১ লাখেরও বেশি লোকের তেজস্ক্রিয়তা দূষণ পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১ হাজার জনকে দূষণ আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া যায়। ১৫১ জন ছিল ভিতর ও বাইরে দূষণ আক্রান্ত, ২০ জন ছিল গুরুতর অসুস্থ এবং ৫ জন মারা যায়। দূষণ মুক্ত করার অভিযানে এলাকার বিরাট অংশের জমি অপসারণ করা হয়, ধ্বংস করা হয় কিছু বাড়িঘর।
লন্ডনের মত ঘন জনবসতি সম্পন্ন নগরীতে কেসিয়াম সম্বলিত একটি বোমা বিস্ফোরণের এ ধরনের দৃশ্য কল্পনা করুন তো! এ কারণেই নীতি নির্ধারকরা ডার্টি বোমার ব্যাপারে এত উদ্বিগ্ন।
আজকের দিনে ডার্টি বোমার হুমকির মূল চাপটি রাশিয়া বহন করছে। ১৯৯৫ সালে চেচেন সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ প্রথম ডার্টি বোমা হামলার চেষ্টা করে। রাশিয়ার একটি টিভি স্টেশনকে জানানো হয় যে মস্কোর ইজমাইলোভস্কি পার্কে কেসিয়াম-১৩৭-এর সাথে ১০ পাউন্ড ডিনামাইট রাখা আছে। ভাগ্যক্রমে তার বিস্ফোরণ ঘটেনি। টিভি স্টেশনকে যেখানে থাকার কথা বলা হয়েছিল ঠিক সেখানেই কেসিয়াম-১৩৭ পাওয়া যায়।
এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে বা কেসিয়াম সরবরাহকারী কাউকেই পাওয়া যায়নি। বহুভাবেই বোমা বিস্ফোরিত না হওয়াটা বিষয় নয়। চেচেন বিদ্রোহীরা রাশিয়ার জনগণ ও সরকারের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়।
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনির ১০ মাইল পুবে রেললাইনের নিচে তেজস্ক্রিয় বস্তু সম্বলিত পাত্রের সাথে সংযুক্ত একটি স্থল মাইন খুঁজে পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয় যে আইএসের একটি জোরালো জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি আছে এবং তারা ইরাক ও সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে তেজস্ক্রিয় সামগ্রী নাড়াচাড়া করা বিপজ্জনক এবং তা বড় রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তেজস্ক্রিয় সামগ্রী যত শক্তিশালী হবে ডার্টি বোমার ক্ষতির ক্ষমতা তত বেশি হবে।
আইএসের মত একটি সংগঠন যারা তরুণ ও দুর্বলদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বানায়, তাদের জন্য তেজস্ক্রিয় সামগ্রী অথবা একটি ডার্টি বোমা নাড়াচাড়া করা কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আর সে কারণেই আইএস ও তেজস্ক্রিয় সামগ্রীর সমন্বয় হবে বিপজ্জনক। ভাগ্য ভালো যে ইরাকে খোয়া যাওয়া ইরিডিয়াম-১৯২ পাওয়া গেছে। যাহোক, সন্ত্রাসীরা পাশ্চাত্যের বা সিরিয়ার নগরীগুলোর রাস্তায় ডার্টি বোমা পেতে রেখেছে তা দেখা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সূত্র আল জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামিক স্টেট ও গরিবের পারমাণবিক বোমা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ