পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খলিলুর রহমান : ‘দেশের গণতন্ত্র কিছু সুবিধাভোগী মহলের কাছে সীমাবদ্ধ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, আইনজীবী, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তোরণ সম্ভব নয়। আমেরিকার গণতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার অবস্থা এমন ‘যার কাছে ডলার আছে, তার কাছে গণতন্ত্র’। আর আমাদের দেশে গণতন্ত্র কিছু সুবিধাভোগী মহলের কাছে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবী মহলকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গতকাল সিলেট জজকোর্ট প্রাঙ্গণে ‘ডিজিটালাইজড উইটনেস ডিপোজিশন সিস্টেম’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক ও ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি রোবার্ট ওয়াটকিনস।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে বিচার বিভাগেরও উন্নয়ন করতে হবে। অন্যথায়, বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। এজন্য বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটালইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানের আর্টিকেল অনুচ্ছেদ আমাদেরকে আনলিমিটেড লিবার্টি দেয়নি। লিবার্টি ও আইনের একটা সংযোগ রয়েছে। এমন স্বাধীনতা প্রয়োগ করা যাবে না, যা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে।’ তিনি ১৮৯২, ১৮৩৬ সালসহ পুরনো বিভিন্ন আইন বাদ দেয়া ও যুগোপযোগী আইন সংযোজনের জন্য উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের এমপিভুক্তি ও বাতিল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিশারিজ, বালু ও জল মহাল ইজারাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কোন আইন নেই। কেবল সার্কুলারের মাধ্যমে এগুলো হয়ে থাকে। যে কারণে লিটিগেশনের কারণে আপীল বিভাগে প্রায় ৬০ ভাগ মামলা হয়ে থাকে। তাই এখন সময় এসেছে এ বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। নতুন যুযোগপযোগী আইন করতে হবে। এতে বিচার বিবাগের উপর চাপ অনেকাংশে হ্রাস পবে। বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।’
দেশের এখনও ৩০ লাখ মামলাজট রয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচাপতি বলেন, ‘আমাদের মামলাজট কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না। তবে, যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচারপ্রক্রিয়া আধুনিকায়ন হচ্ছে, এতে আস্তে আস্তে এর সংখ্যা কমে আসবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগে ডিজিটেল পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর এটা আমি বলতে পারি আর এটা আটকাবে না। পর্যায়ক্রমে এ ব্যবস্থা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে ও সময়ের সঙ্গে বিচার ব্যবস্থা আরো আধুনিক হবে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেন, ‘বিচার প্রার্থীরা বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থা সুফল পাবে। এ ব্যাবস্থা শুধু খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা ভয়েজ রেকর্ডিং, সিডি করা হবে। এছাড়াও বিচারকের স্বাক্ষরিত কপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের জজ আদালতে এই সিস্টেম চালু করা হবে জানান তিনি। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশের ২৮টি জেলায় আদলত ভবন ঊর্ধ্বমুখী করা হচ্ছে। সব জেলা আদালতকে আধুনিকায়ণ করা হচ্ছে। সিলেট জেলা জজ আদালতে শিগগিরই লিফট ও কানেকটিং ব্লিজ করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘আমি সিলেট জেলা বারের আইনজীবী ছিলাম। ১৫ বছর আগে বিচারপতি হয়েছি। এ সময়ও আমি কল্পনা করে নাই বিচার বিভাগ ডিজিটাল হবে। আমি আগে ভাবতাম জজ সাহেবদের হাতের লেখা আরেকটু সুন্দর করা যায় না। আজ দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক এমপি বলেন, ‘দেশের ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। সিলেট থেকে ই-জডিশিয়াল সিস্টেম চালু হল। দেশের ১৩ কোর্টে এই ব্যবস্থা চালু হবে। এই ব্যবস্থা সিলেট, মৌলভীবাজারসহ ৯টি জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হচ্ছে। সারা দেশের আদালতগুলো ওয়াই ফাই ব্যবস্থা চালু হবে। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, সাক্ষ্যগ্রহণ কর্মকা-ে ডিজিটালাইজেশনের জন্য ইতোমধ্যেই সিলেটের আদালতগুলোতে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সিলেটের ২০টি আদালতের প্রতিটিতে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি)। জুডিশিয়াল স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
সূত্র জানায়, এখন থেকে সিলেটের আদালতগুলোতে বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের সামনে কম্পিউটার থাকবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় আদালতে স্টোনোগ্রাফার কম্পিউটারে সাক্ষীর জবানবন্দি এবং আইনজীবীদের জেরা লিপিবদ্ধ করার সাথে সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজ নিজ কম্পিউটারে তা দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি থাকলে বিচারক তা সংশোধনের নির্দেশ দেবেন। এছাড়াও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কম্পিউটারে কম্পোজকৃত কপি আদালত সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষর সহকারে মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষকে সরবরাহ করা হবে। এক্ষেত্রে বাদী-বিবাদী পক্ষের তাৎক্ষণিক আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য তথা জবানবন্দি কিংবা আইনজীবীর জেরা সংশোধনের সুযোগ থাকছে। এতে করে আদালতের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত। পর্যায়ক্রমে আদালতে এই ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম দেশের সকল আদালতে শুরু হবে। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা জজ কোর্টের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে সিলেটের আদালতে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এতে করে বিচারিক ব্যবস্থায় একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।