পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ভারতের নাম। ধর্মীয় অসহিঞ্চুতায় বিশ্বের সেসব দেশ শীর্ষে সেই ১১ দেশের মধ্যে রয়েছে ভারতের নাম। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় অসহিঞ্চুতা অতি প্রকট নয়। বিশ্বের ১৯৮ দেশের মধ্যে ধর্মীয় অসহিঞ্চুতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম। মার্কিন সমাজ-গবেষণা সংস্থা ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। গত ১১ এপ্রিল প্রকাশ করা এই গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে ধর্মীয় অসহিঞ্চুতা অত্যাধিক বেশি হচ্ছে। প্রকারান্তরে সেটা চরম আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিশ্বের ১৯৮ দেশের মধ্যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ভারতের অবস্থান চতুর্থ।
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক ১১ দেশের তালিকায় রয়েছে ভারতের নাম। ভারতের আগে রয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, নাইজেরিয়া ও ইরাকের নাম। শুধু বিপজ্জনক ৪২ দেশের তালিকার ৯ নম্বর (সারাবিশ্বের ২০ নম্বর) রয়েছে বাংলাদেশের নাম। কম বিপজ্জনক তালিকায় ৩৬টি দেশ এবং বাকি দেশগুলো ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সহনীয় বলে গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক ১১ দেশের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলো হলো পর্যায়ক্রমে ইসরাইল, ইয়েমেন, রাশিয়া, আফগানিস্থান, প্যালেস্টাইন, পাকিস্তান ও মিশর।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন ওই গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে দেখা যায়, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম নির্যাতন তথা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় বিশ্বে চতুর্থ স্থান উঠে এসেছে ভারত। নরেন্দ্র মোদীর শাসনামল তথা গত দু’বছরে দেশটিতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে কোনো দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সবচেয়ে বেশি সেই তালিকায় ভারতের নাম উঠে গেছে চার নম্বরে। তালিকার এক নম্বরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, দ্বিতীয় নাইজেরিয়া ও তৃতীয় ইরাক। চারটি দেশেই নাগরিকের প্রতিক‚ল পরিবেশের জন্য স্বাভাবিকভাবে বসবাস করা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বিশ্বের বাকি ১৯৪টি দেশকে পেছনে ফেলে ভারত দেখিয়ে দিয়েছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষার নামে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কাকে বলে! আরএসএসের ভাবশীর্ষ বিজেপি ভারতে রামরাজত্ব কায়েমের করতে গিয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন কি ভাবে করেছে! নিজ দেশের নাগরিকদের বুঝিয়ে দিতে পেরেছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কী জিনিস!
১১ এপ্রিল প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা ফলাফলে জানা গেছে, আগের তিন বছরের মধ্যে ২০১৫ সালে ভারতে যে শুধুই ধর্মকে কেন্দ্র করে অশান্তির ঘটনা বেড়েছে, তাই নয়; সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বিধিনিষেধ আরোপ ও ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক অস্থিরতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বেড়েছে জাতি বা বর্ণ-ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা, হিংসা, সা¤প্রদায়িক হিংসা, ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাস। বেড়েছে মুসলমানদের ধর্মাচরণে বাধা দেয়ার ঘটনা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে পোশাক না পরায় নানাভাবে নারীদের হেনস্থা করা ও ধর্মান্তরণে বাধা দেয়ার ঘটনা। মুসলিম নাগরিকদের বিরুদ্ধে জুলুম নির্যাতনই শুধু নয়; পাশাপাশি ভারতে হিন্দুদের মধ্যেও বিভেদ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। দলিতদের ওপর উচ্চ বর্ণহিন্দুদের নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে; কখনো কখনো সেটা চলে গেছে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের পর্যায়ে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এই গবেষণার ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আগের ৩ বছরের চেয়ে ২০১৫ সালে ভারতে হিন্দু ও মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের প্রকটের ছবিটা কত স্পষ্ট হয়েছে। হিন্দু আর মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে দূরত্বটা বাস্তবিকভাবেই আরো বেড়ে গেছে। সব থেকে বিস্ময়ের ঘটনা হল- কেন্দ্রে বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার শুধুই যে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও শিখদের ওপর হিন্দুদের আক্রমণের রাশ টেনে ধরতে পারেনি তাই নয়; সংখ্যালঘুদের রোষের হাত থেকে নিম্ন বর্ণেরহিন্দুদেরও বাঁচাতে পারেনি। বাঁচাতে পারেনি বর্ণহিন্দুদের আক্রমণের হাত থেকে দলিতদের।
গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের পর সংস্থার মূল গবেষক অধ্যাপক কাত্যায়ুন কিশি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ভারতে হিন্দু ও মুসলিম, এই দু’টি স¤প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ও দাঙ্গার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যার সংখ্যা আগের তিন বছরের চেয়ে অনেক বেশি। বেড়েছে হিন্দুদের মধ্যে ভেদাভেদের ঘটনাও। সেটা কীভাবে ঘটেছে? অধ্যাপক কিশি বলেছেন, ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ওই নির্যাতন সবচেয়ে বেশি হয়েছে নিম্নতম বর্ণের জনগোষ্ঠীর ওপর। যাদের মধ্যে পড়েন দলিতরা। এখনো তাদের বিভিন্ন সরকারি চাকরি পেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও সরকারি পদে তাদের প্রোমোশন রুখে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেই এটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, হেনস্থার সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন দলিত নারীরা। অপরাধীদের বহু ক্ষেত্রে কোনো বিচারই হচ্ছে না। শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা। এ বক্তব্যের স্বপক্ষে দু’টি দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে ওই গবেষণায়। দেখানো হয়েছে, উচ্চবর্ণহিন্দু স¤প্রদায়ের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করার দায়ে কীভাবে তামিলনাড়ুতে এক দলিত যুবককে খুন করা হয়েছিল। আর সেই ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত কীভাবে মাসের পর মাস পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকেছে। আর গুজরাটে ধর্মান্তরের জন্য কীভাবে জেলাশাসকের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
সিরিয়া, নাইজেরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধবিদ্ধস্ততার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় অসহিঞ্চুতা হলেও সেটা বেশি বাড়তে দেয়া হয় না বলে উল্লেখ রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।