পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি রিভিউ হবে : প্রতিরক্ষা সমঝোতায় দেশবাসী আতঙ্কিত : দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী তৃপ্ত হলেও জনগণ হতাশ
স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসে তাদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করে। এখনও আওয়ামী বলয়ের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তারা সরাসরি সহায়তা করছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই এদেশের জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এ জন্যই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিল্লীকে খুশি করতে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের প্রতিরক্ষা সমঝোতায় এ অঞ্চলে ভারতের সামরিক ও ভ‚-রাজনৈতিক আধিপত্য বাড়বে। আমরা ক্ষমতায় গেলে স্বার্থবিরোধী চুক্তি রিভিউ করা হবে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ব্যর্থ। নতজানু মানসিকতার কারণে ওই সফরে ওরা অনেক কিছু পেলেও বাংলাদেশের জনগণ কিছুই পায়নি। গতকাল এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বিভিন্ন চুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে দোষারোপের জবাব দিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পূর্ব নির্ধারিত বিকাল সাড়ে চারটার কয়েক মিনিট পরে লিখিত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট ছাড়া বিদেশী মদতে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উল্টো শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বিদেশীরা বিএনপিকে এদেশে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিলো বলে অসত্য অভিযোগ করেন। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। বিদেশী চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা স্বাধীন দেশের সরকার এতো নতজানু হয় কিভাবে? নতজানুর কারণেই দিল্লীর কাছ থেকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে পারেননি। আশ্বাস নিয়ে তাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। এতে জনগণের প্রতাশা পূরণ হয়নি। এই সফরকে দেশবাসী কেবলই দেওয়ার এবং কোনো কিছুই না পাওয়ার এক চরম ব্যর্থ সফর বলেই মনে করে। ভারতের সঙ্গে এতোগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ে প্রধানমন্ত্রী তৃপ্ত হলেও দেশের জনগণ আতঙ্কিত। প্র্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশে পরিণত করেছেন।
২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কোনো বিষয়ে বিএনপি নীরব থাকতে পারে না। ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি ও সমঝোতার বিরুদ্ধে বিএনপি প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তা রিভিউ করার ঘোষণা দেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ না করে কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলেছে। এতে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা। খর্ব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সফরের ফলাফলে তৃপ্ত তো নয়ই বরং আতঙ্কিত। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী একগাদা চুক্তি ও সমঝোতা চায়নি। হিসাবের পাওনা চেয়েছে। তিস্তার পানি আমাদের অধিকার, কারও দয়া বা দাক্ষিণ্য নয়। এটা আমাদের জীবন মরণ সমস্যা। কিন্তু সেই অধিকার আদায় বা সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করলে আরও ভাল হতো। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে ভারতের অনুমতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এখন এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি করলেই বিএনপির গায়ে লাগে-প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ভারত বিরোধী নই। ভারত কেন যেকোন রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশ বিরোধী চুক্তি করলে বিএনপির তার প্রতিবাদ জানাবে। কওমী মাদরাসার প্রতিনিধি ও ইমামদের সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তিনি আবারও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রাখার যে আহŸান জানিয়েছেন সে প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) ওপর আস্থা রেখে বাংলাদেশ কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি, পারবেও না।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ ছিল জানিয়ে খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন আগামী নির্বাচনে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বিগত সময়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ১০টি একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়ির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপ ভাসানীর এডভোকেট আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
গত ৭ এপ্রিল থেকে চার দিনের সফর শেষ করে গত সোমবার দেশে ফিরে পরদিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সফরে তিনি নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক ৩টি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
দীর্ঘ বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে জনসমর্থিত ও গণতান্ত্রিক কোনো সরকার না থাকলে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ আদায় করে আনা সম্ভব নয়। সে কারণেই বর্তমান প্রশ্নবিদ্ধ সরকার যতই বন্ধুত্বের বুলি আওড়াক না কেন, প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকেও সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে তারা পারেনি, পারবেও না।
ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আপ্যায়নের চাইতে তাদের ন্যায্য পাওনা কী এসেছে সেটা জানতে চায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় জমকালো আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে বাংলাদেশ যে বঞ্চিত ছিলো সেই বঞ্চিতই থেকে গেলো। বাংলাদেশ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখন সেই গণতন্ত্র নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
ভারত সফর শেষে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশবাসী বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি দিল্লিতে কিছু চাইতে যাননি। কেবল বন্ধুত্বের জন্য গিয়েছিলেন এবং সেটা তিনি পেয়েছেন। কিসের এই বায়বীয় বন্ধুত্ব তা দেশবাসীই বিচার করে দেখবেন। তবে এই কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন যে, ভারত থেকে তিনি দেশের জন্য কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। বরং ভারতের চাহিদা মোতাবেক সবকিছুই দিয়ে এসেছেন।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তি ও সমঝোতাগুলো প্রকাশ করার বদলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তার নিজের উপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার উপর আস্থা রেখে দেশবাসী আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং ভোট দেয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন অধিকার হারিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে অতীতে জনগণ দেখেছে তিনি একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসংখ্য চুক্তি করেছেন। ভারতকে একতরফাভাবে কেবল দিয়েই এসেছেন। বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।
ভারতের সঙ্গে করা সমঝোতা ও চুক্তির বিষয় উলেখ করে তিনি বলেন, এসবের ফলে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক, রাজনৈতিক ও ভ‚-রাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিস্তা চুক্তি খালেদা জিয়া বলেন, ভাটির দেশ হিসাবে সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারো কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এ জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। তৃৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। যারা সরকারে আছেন তাদেরই যাওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবার মতামতকে উপেক্ষা করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমরাও শংকিত। তিনি বলেন, নানা বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ও দ্ব›দ্ব রয়েছে। তা সত্তে¡ও জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার বিষয়ে আমরা সকলে মিলে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা এসব বিষয় সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভ‚মিকা পালন করলে আমরা অকুণ্ঠ চিত্তে তার সেই ভ‚মিকার প্রতি সমর্থন জানাতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বরং তিনি বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন।
প্রতিরক্ষায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রসঙ্গে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা যাই বলুন না কেন একমাত্র ভারতই হবে ওই ঋণের আওতায় একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী। এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে ভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
সশস্ত্রবাহিনী এখন বিভিন্ন দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক উচ্চমান অর্জন করেছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো অস্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে এই বাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে সেই মানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীনের অস্ত্র ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। আমরা যখন অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি বা সমঝোতা করেছি তখন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি ও সমঝোতা করেছি। আমরা পুরাতন জিনিস ক্রয় করিনি। চীন কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ফলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত মান ও স্বাতন্ত্র্য সমঝোতার নামে ব্যাহত হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, কারও সঙ্গে পরামর্শ বা জনগণকে অন্ধকারে রেখে গোপনীয়ভাবে চুক্তি করায় সবার মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিলো সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশী রফতানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে এই সফরে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। জনগণের দাবি সত্বেও আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের সুন্দরবন-বিনাশী এবং পরিবেশ বিধ্বংসী রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের জন্য তিনি একটি কথাও বলেননি। বরং প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে আরো লক্ষ্য করেছি যে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।
ভারতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈরিতা নেই বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলীর নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। ভারতের জনগণের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার আবহে আমরা পাশাপাশি বাস করতে চাই। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্তে¡ও প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভ‚মিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করি ভারতের বর্তমান সরকার অতীতের সেই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভ‚তিকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমী মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অতীতেও তাই করেছেন।
বিদেশীরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিল প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য দাবি করে তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু কোনো প্রভু নেই। বিদেশী চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। বরং আওয়ামী লীগই ভোট ছাড়া বিদেশী মদদ নিয়ে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এক প্রশ্নের পাল্টা সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানতে চান, দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তিসহ কিভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে তা তো আপনারা ভাল জানেন।
বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস উলেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে একসঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে সবায় উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী তো আপনাদের দিলিকা লাড্ডু খাওয়াচ্ছেন আজ আমি আপনাদের বাংলাদেশের লাড্ডু খাওয়াচ্ছি। খেয়ে যাবেন সবাই। তার এমন মন্তব্যে সবাই হেসে দেন।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরে সম্পাদিত প্রতিরক্ষা সমঝোতাসহ নানা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত ৭টায় এই বৈঠক বসে। বিকালে সংবাদ সম্মেলনের এক ঘন্টা পরে জোট নেতাদের নিয়ে বসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
বৈঠকের জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর আব্দুুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, জাগপা‘র শফিউল আলম প্রধান, এলডিপির আব্দুুল করীম আব্বাসী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গনি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহেমেদ, জমিয়তের উলামে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শফিকউদ্দিন, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মনি। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্প্রচারে সরকারি হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা
গতরাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ( বুধবার) বিকাল সাড়ে চারটায় বিএনপিসহ ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু হলে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের শুরু করলেও সাথে সাথে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে গুরুত্বহীনভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে বা কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে তা সম্পূর্ণ বøাকআউট করা হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, সরকারের সরাসরি নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের উপর সরকারের এই আচরণ স্বেচ্ছাচারি, অগণতান্ত্রিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। এই ঘটনায় ভোটারবিহীন সরকারের গণবিরোধী কুৎসিত রূপটি আরো প্রকটভাবে ফুটে উঠলো। এটি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতি সরকারের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। এরা বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী একটি রাজনীতিক দল, যারা দুঃশাসন চালিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করেছে। একদলীয় অপশাসন প্রলম্বিত করার জন্যই বিরোধী মত দমনে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার নিরন্তরভাবে সদা তৎপর। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বর্তমান সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করতে যাবতীয় কর্মকাÐ চালিয়ে এসেছে। সুতরাং সত্য প্রকাশিত হওয়ার ভয়েই সরকার বিএনপি’র সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারপার্সনের বক্তব্য ইলেক্টনিক্স গণমাধ্যমে প্রচারে বিঘœ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, চেয়ারপার্সনের বক্তব্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারে বাধা সৃষ্টি করতে সরকারের ন্যক্কারজনক স্বৈরাচারী হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।