Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ

ইউপি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে বিএনপির প্রতি নমনীয় আচরণ

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫২ পিএম, ১ মার্চ, ২০১৬

তারেক সালমান : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কৌশলে রাজনীতির মাঠকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সজাগ থাকবে দলটি। পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির প্রতি সরকারের আচরণ নমনীয় করার মাধ্যমে তৃণমূলে ‘নির্বাচন’টি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে চায় সরকারি দলটি। এমন আভাস দিয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতা।
এদিকে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাজসজ্জাসহ কমিটি বৈঠক করে সারাদেশে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে দলের সম্মেলনের বার্তা পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ২৮ মার্চ দলটির সম্মেলন নাও হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশব্যাপী স্থানীয় পরিষদ সরকারের ভিত্তি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণেই ক্ষমতাসীন দলটির কাউন্সিল পেছাতে পারে বলে সূত্র জানায়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল চাঙ্গা। আমি এখন এলাকায় গেলে যে পরিমাণ লোক দেখি ও আগ্রহ দেখি, এটা আগে ছিল না। আমাদের সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে, মানুষ ভালো আছে। এতে করে অনেকেই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে চাঙ্গা হয়েছে।
অপরদিকে দলের আরেকজন সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল মানুষের নির্বাচন নিয়ে প্রচ- আগ্রহ আছে। আমাদের নেতারা তৃণমূল প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যারা অভিযোগ করছে, তাদের কথার অর্থ এই তারা জিতলে সেটা গণতন্ত্র, না জিতলে সেটা গণতন্ত্র নয়।
দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপিবিহীন রাজপথে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী পক্ষের অনুপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে এই মুহূর্তে অন্য কোনো কর্মসূচিও কেন্দ্রের হাতে ছিল না। তাই পৌর নির্বাচনের পর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এরই মধ্যে অসমাপ্ত জেলাগুলোতে সম্মেলন হওয়ায় দেশের রাজনীতিতে অনেকটাই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, আগামী ২৮ মার্চ ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দলে নিষ্ক্রিয় নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এতে করে তৃণমূল পর্যায়েও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা নির্বাচনের আমেজে রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, তৃণমূলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেই বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে তারা মৌখিক চুক্তিও করেছেন। তৃণমূল বিএনপি নেতারা সুবিধা নিতে চান যেন নিজ দলের নেতাকর্মীর ওপর দায়ের করা পুলিশি মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতা পাওয়া যায়। প্রথম ধাপে আগামী ২২ মার্চ ৭৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ।
বিএনপির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭৩৮টি ইউপির মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১৪টিতে দলটির প্রার্থী নেই। সরকার দলীয় নেতা ও সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি বলে দলটি অভিযোগ দলটির। এর মধ্যে ৮৩টিতে সরাসরি হুমকি ও বাধার কারণেই প্রার্থিতা দিতে পারেনি বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা। বাকি ৩১টিতে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া ৫১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী মনোনয়নপত্র গৃহিত হলে প্রথম ধাপেই ৫১ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন।
অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় লোকদের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াকে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, সরকারের প্রতি আস্থা থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপরীতে অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না।
গত রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা ও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, অনেকেই এখন জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অন্য দল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে চলে যাচ্ছে বা সরকারী দলে যোগদান করতে চাচ্ছেন। স্থানীয় উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করে অন্য কোন প্রার্থী যদি না আসে, সেক্ষেত্রে কি আমাদের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ আছে?
সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বাধায় ইউপিতে দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারছে না; নির্বাচন কমিশনবিএনপি দেয়া এ অভিযোগ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে যদি তারা (বিএনপি) অভিযোগ করে থাকে এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এটা তদন্ত করে খুঁজে বের করা। আমাদের কাছে এ রকম কোন অভিযোগ আসে নাই। কাজেই, যে অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি, এ ধরণের বিষয় নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। তাছাড়া বিএনপি এখন একটি নালিশি পার্টিতে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা ও মন্ত্রী জানান, তৃণমূলে বিএনপির প্রতি প্রশাসন এবং পুলিশের আচরণে এখন কঠোরতা কাম্য নয়। এখন দরকার শিথিল ভূমিকা। মনে রাখতে হবেÑ প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কোনোভাবেই বিতর্কিত করা যাবে না।
নাম প্রকাশে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী সংখ্যা কম হওয়ায় জনমনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, কোথায় কারা বাধা দিচ্ছে, কীভাবে বাধা দিচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের বাধা দেয়ার যদি কোনো ঘটনা বা অভিযোগ থেকে থাকে তা তাদের (বিএনপি) স্পষ্ট করে বলা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ