Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের পথ ও পাথেয়

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা আনোয়ার খান : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের দ্বারা এই মুহূর্তে মোটিভেশন প্রোগ্রাম শুরু করা উচিত। এ জন্য দেশের ৪৮৯টি উপজেলার প্রত্যেক উপজেলায় কমপক্ষে ১০ জন আলেমকে নিয়ে মোটিভেশন কমিটি গঠন। তারা মসজিদ, মাদরাসা ও গ্রামসহ দেশের প্রত্যেক স্থানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করবে। কমিটি যে সমস্ত গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পায়, তা সরকারের নিকট উপস্থাপন করবে। যাতে সরকার প্রয়োজনীয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মোটিভেশনের জন্য একটি আইন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে কোন দিন জঙ্গিবাদ এদেশে না আসতে পারে। যার যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা বিবরণ এর সাথে গাঁথা ছিল। বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা ও কার্যকর করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট পৌঁছেছে কিনা জানা যায়নি। যেহেতু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের সকল শ্রেণির নাগরিককে সম্পৃক্ত করে কোন মোটিভেশন প্রোগ্রাম গ্রহণের প্রস্তাবের খবর আমাদের কাছে নেই, সেহেতু আশাছিল প্রস্তাবটি জনসম্মুখে পেশ করা হবে বা সংসদে তোলা হবে। এমন তো হতে পারে যে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সংসদে বা গ্রামেগঞ্জে, হাটে-মাঠে-ঘাটে আলোচিত হলে এর চেয়ে আরো সুন্দর ও কার্যকর প্রস্তাব আসতে পারে। এ দাবি ও আশা সরকার ও বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল-সংগঠনের প্রতি সকল শ্রেণি ও পেশার বিবেকমান মানুষের প্রতি। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইমামদের প্রতি।
এই প্রস্তাবের একটি করে ফটোকপি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বর্তমানে সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদকেও দেয়া হয়েছিল এই আশায় যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপর তাদের মুখ থেকে কোন কথা সংসদে বা সংসদের বাইরে শোনা যাবে। ‘সে আশায়ও গুড়ে বালি’। ২০১০ সাল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি আরও আগে থেকেÑ ফলতো শূন্য।
বাংলাদেশের ধর্মের নামে যে ধরনের উগ্রতা, জীবনহানি, সন্ত্রাস ইত্যাদি হয়েছে এবং পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আরো হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের সকল মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্ত কার্যকলাপ মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তার সাথে দেশের সকল নাগরিককে সম্পৃক্ত করে একটি মোটিভেশন প্রোগ্রাম শুরু করা খুবই জরুরি।
ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ হচ্ছে আল-কোরআন। আল-কোরআনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ। আল-কোরআনের শিক্ষা সন্ত্রাস প্রতিরোধের শিক্ষা, একথা যারা আল-কোরআনের অর্থ একবার পড়েছেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। দেশের প্রায় ৯২% নাগরিক মুসলিম। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া জানে না তাদের কথা বাদ দিলে, যারা লেখাপড়া জানেন তাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের ৯৮% জন শিক্ষিত লোক সমগ্র কোরআনের অর্থ একটিবারও পড়েননি এবং জানেন না, ৯০% নাগরিক আবেগ ও বিশ্বাস যে কিতাবের সাথে জড়িত, যে কিতাবের জন্য সে যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে জীবন দিতে প্রস্তুত, তাতে কী লেখা আছে তা তারা জানেন না। ফলে ইসলাম ও আল-কোরআনের নামে পরকালের ভয় দেখিয়ে নিজের বা গোষ্ঠীর স্বার্থে বশীকরণ অপপ্রলাপের মাধ্যমে মানুষকে গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে দেয়া কঠিন কাজ নয়। আর এটাই ইদানীং হচ্ছে। আর একবারও যদি কারো সমগ্র আল-কোরআনের অর্থ পড়া থাকে, তবে অন্তত কোন অবস্থাতেই তার সামনে ইসলাম, আল-কোরআন, পরকাল ইত্যাদির দোহাই দিয়ে উগ্রতা, জীবনহানি, সন্ত্রাস প্রভৃতি করে কেউ পার পাবে না।
এ জন্য ইসলামের নামে উগ্রতা, জীবনহানি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাই যেন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে পারে, এজন্য সমগ্র আল- কোরআন মজিদের অর্থ পড়া থাকার জন্য দেশের সাধারণ মুসলিম নাগরিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষক-ছাত্র, সরকারি আধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্য করা সবচেয়ে জরুরি। প্রত্যেক মুসলিম শিক্ষিত নাগরিকের যাতে কোরআনের অর্থটুকু পড়া থাকে এ জন্য আইন হওয়া উচিৎ।
আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, আল্লাহর নাজিল করা কিতাব আল-কোরআনে কী লেখা আছে তা ব্যক্তিগতভাবে দেশের প্রত্যেক মুসলমানকে ও অন্যান্যদের জানানোর জন্য বাংলা তরজমাসহ কোরআন মজিদ পড়ার জন্য উৎসাহিত করা, বিনা মূল্যে তরজমাসহ কোরআন মজিদ বিতরণ করা এবং বিতরণ করতে অন্যদেরকে উৎসাহিত করা। ইসলামের নামে উগ্রতা, জীবনহানি ও সন্ত্রাস ইত্যাদিকে নিরুৎসাহিত ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। এ উদ্দেশ্যে সভা-সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করা ও অন্যান্যদেরকে করতে উৎসাহিত করা। এ ব্যাপারে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, কে জাতীয় পার্টি কে খেলাফত মজলিশ কে কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামী বা কে কোন মতাদর্শের তা কোন অবস্থাতেই আলোচ্য ও বিবেচ্য বিষয় হতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে দু’একটি কথা বলা উচিৎ। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্তমানে সবচেয়ে সোচ্চার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো। সারা পৃথিবীজুড়ে তারা আজ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় যুদ্ধ চালাচ্ছে। এ জন্য তাদের উচিত- যুদ্ধে এই এত খরচ ও প্রাণহানির সাথে একটি মোটিভেশন প্রোগ্রামও চালু করা। এজন্য তাদের উচিৎ প্রথম তাদের দেশের সকল মুসলিম নাগরিকের জন্য ইসলামের মূল গ্রন্থ আল-কোরআনের অর্থটুকু কমপক্ষে একবার হলেও পড়া থাকা বাধ্যতামূলক করে আইন করা এবং যে সব মুসলিম নাগরিক তাদের দেশ যাবে তাদের কোরআনের অর্থটুকু পড়া আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা করা। যারা মুসলিম হওয়া সত্তে¡ও কোরআনের অর্থটুকু একবারও পড়েনি তাদের ভিসা না দেয়া এবং ঢুকতে না দেয়া।
এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কারণ কি? তা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা বর্তমান দুনিয়ার মানুষের মাঝে প্রচলিত ব্যবস্থাপনা জনিত না অন্য কিছুর জন্য, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সারাবিশ্বের সমাজবিজ্ঞানী দার্শনিকদের মতামত গ্রহণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অসুখের কারণ জানতে পারলে পূর্ণ নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা দেয়া সহজ।
আজ সারা দুনিয়ায় জঙ্গিবাদকে দমন করতে হলে প্রত্যেক জাতির মধ্যে একটি জঙ্গিবাদ বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেহেতু কোরআন মুসলমানদের মূল গ্রন্থ এবং কোরআনে কোন জঙ্গিবাদ নেই সেহেতু কোরআন প্রত্যেক দেশের শুধু মুসলমানদের জন্য পাঠ্যক্রমে আইনি বাধ্যবাদকতা আনতে হবে। যে বিদ্যার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করবে তাকে অবশ্যই পবিত্র কোরআনের যে কোন অংশ দেখে পড়তে জানতে হবে। নয়তো সে মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে না। মাধ্যমিক শ্রেণীতে তাকে অবশ্যই কোরআনের অর্থটুকু নিজ ভাষায় পড়তে হবে। যদি কোন বিদ্যার্থী মাধ্যমিক শিক্ষায় সমগ্র কোরআনের অর্থটুকু পড়েছে বলে প্রমাণ করতে না পারে তবে তাকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি করা যাবে না। ¯œাতক ও ¯œাতক উত্তর শ্রেণিতে অবশ্যই তাকে কোরআনের বক্তব্যের উপর পরীক্ষা দিতে হবে। নয়তো তাকে কোন সনদ দেওয়া যাবে না। আশা করা যেতে পারে এভাবেই ক্রমান্বয়ে প্রত্যেক দেশের জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে। দুনিয়া হবে জঙ্গিবাদ মুক্ত।
ষ লেখক : সমাজ বিশ্লেষক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন