পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফজাল বারী : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাতের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেন্দের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এতে হাইকমান্ডের সাথে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান কি তা জানতে গণমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে থাকে দলীয় নেতাকর্মীর মতো সাধারণ মানুষও। তাই গুরুত্ব দিতেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির থাকেন সংবাদকর্মীরা। সংবাদ সংগ্রহ করেন ঠিকই কিন্তু তা প্রচার-প্রকাশ করতে পারছেন না। ফলে গণমাধ্যমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিজ কর্মে প্রচারে পিছিয়ে পড়ছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টির জন্য চেয়ারপারসনের কর্মসূচি ও সময়সূচি নির্ধারণকারীদের দায়ী করেছেন। আর দলীয় বোদ্ধারা এটিকে আখ্যা দিচ্ছে কৌশলগত ভুল হিসেবে।
দলের একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্যের সাথে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো যারা নির্ধারণ করেন তাদের কারণে এ ধরনের বিড়ম্বনা। আমরা প্রচারে পিছিয়ে যাচ্ছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বার্তা সঠিক সময়ে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে আমাদের কাছেও ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কর্মসূচিগুলো নির্ধারণের আগে যদি বিষয়টি সঠিকভাবে জানানো হতো আমার বিশ্বাস তাহলে অবশ্যই তিনি (খালেদা জিয়া) তার রাজনৈতিক কর্মসূচি সেভাবে নির্ধারণ করতেন। ওই নেতার ধারণা, চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এমনটি হচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোর ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে প্রস্তুত থাকেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে শরিক হতে রাত ১২টায় প্রস্তুতি নিতে দেরি করেন না। এমনকি বিকেল ৪টায় বিদেশ প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ দিতে সঠিক সময়েই কার্যালয়ে আসেন কিংবা নিজ বাসায় প্রস্তুত থাকেন। মধ্যরাতের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো বিকেলে দিলে তাতে বিএনপি প্রধানের দ্বিমত থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। সংশ্লিষ্টদের দোষারোপ করে প্রবীণ ওই সদস্য অভিযোগ করে বলেন, এতে করে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনো দিনই রাত ৯টার আগে রাখা হয় না। বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টায়। কর্মসূচি শুরু হয় ৯টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটে। কোনো দিন দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগে সভা শেষ করতে। রাত সাড়ে ১১টায় তার কার্যালয় গুলশান-২ থেকে নিজ অফিসে গিয়ে সংবাদ প্রস্তুত করতে করতে ক্যালেন্ডারের তারিখটা বদলে যায়। অর্থাৎ তড়িঘড়ি করে মধ্যরাতের সংবাদে (টিভিতে) তা প্রচার করা হয়। অথবা ওই খবরটি পরদিনের সংবাদের উচ্ছিষ্ট হিসেবে প্রচার করা হয়। অনেকের বেলায় সেটাও সম্ভব হয় না।
প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা জানান, তাদের বেলায় এ চিত্র আরো করুণ। পত্রিকাগুলো সারাদেশে খবর পৌঁছানোর জন্য প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করে, যা দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছানো হয়। তবে হাতেগোনা কিছু পত্রিকা দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। তাতে রাজধানী ও তার আশপাশের কয়েক জেলার খবর থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের খবর কোনোদিনই প্রথম সংস্করণে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেশের সকল পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন।
শুধু খালেদা জিয়ার বৈঠকই নয়; দলের বিভিন্ন কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে অপেক্ষা মধ্যরাতের। যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি রাত ১টায় ঘোষণা করা হয়েছে। সুইডেনে হামলার নিন্দা জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে রাত ১২টায়। আনন্দ সংবাদের চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছাই নয়, দলীয় নেতা আগের দিন সকালে ইন্তেকাল করলে পরের রাতে শোক প্রকাশের নজিরও রয়েছে।
আলাপকালে বিএনপি ও দলটির চেয়ারপারসনের সংবাদ সংগ্রহকারী নবীন-প্রবীণ সংবাদকর্মীরা জানান, চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সময়সূচি রাতের বেলায় নির্ধারণের বিষয়টি নতুন নয়। ১৯৯৬ সাল থেকেই। তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্রিকায় নিবন্ধনের মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়। দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূইয়ার কাছে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। সে সময় তার (খালেদা জিয়া) গণমাধ্যম শাখার প্রকাশ্য-নেপথ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা ২৯ মিন্টু রোডে রাতের বদলে বিকেলে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রথা চালু করেছিলেন। অবশ্য সে ধারাবাহিকতা টেকেনি।
গত ৮ বছর আগে গুলশানের একটি হোটেলে সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়কালে বেগম খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যান্য কয়েক সম্পাদকের মতো চ্যানেল আই-এর শাইখ সিরাজ বলেছেন, ম্যাডাম আমরা আপনার রাজনৈতিক কর্মসূচির নিউজটি দিনভর গুরুত্বের সাথে প্রচার করতে চাই। আপনি ক্ষমতায় বা ক্ষমতার বাইরে যেখানেই থাকুন দেশবাসী আপনার সংবাদটির জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু দুঃখজনক যে, মধ্যরাতের নিউজেও আপনার কর্মকান্ডের সংবাদ প্রচার করা সম্ভব হয় না। অনুগ্রহ করে আপনি আপনার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সিডিউলটা রাতের বদলে দিনে নিয়ে আসুন।
মানবজমিন সম্পাদকও তার নিবন্ধে একই ধরনের আকুতি জানিয়েছেন। পরিবর্তন হবার অনুরোধও জানিয়েছেন ডানপন্থীখ্যাত ওই সম্পাদক। সমালোচনার একপর্যায়ে তিনি এমনতর বলেছেন, যে দেশে দুই নেত্রী। একজন ফুলটাইম অপরজন পার্টটাইম পলিটিক্স করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিকেলের মধ্যেই রাজপথের কর্মসূচি শেষ করেন। আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মধ্যরাতে তার কার্যক্রম শুরু করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিভিন্ন সময় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পরামর্শ দিয়েছেন রাতের রাজনৈতিক কর্মসূচির সিডিউল পরিবর্তনের জন্য।
এদিকে তৃণমূল থেকে ঢাকায় আসা নেতা-কর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করেছেন। হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দলীয় প্রধানের সাথে দেখা করতে আসেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা। রাত পাড়ি দিয়ে দিনের বেলায় ঢাকা পৌঁছলেও নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ মেলে পরদিন মধ্যরাতে। আসা-যাওয়ায় তিন দিন সময় পার। অর্থ খরচের বিষয়টা তো আছেই। এভাবে কয়জনই বা দেখা করতে পারে? অন্যদিকে পত্রিকায় তো চেয়ারপারসনের সভা-সিদ্ধান্তের সংবাদ ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ। আগের দিনের সংবাদ তো পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করে না। ফলে বছরের পর বছর এমনটি হওয়ায় দলের হাইকমান্ডের সাথে দূরত্ব বাড়ছে দিন দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।