পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ২০০৩ সালের ঘটনা। ডিএমপির এক থানায় দায়েরকৃত মামলার রায়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত। বিচারক ওই দিন মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত গাড়িটি আদালতে হাজির করতে বললেন। নির্ধারিত তারিখে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি ব্যাগের মধ্যে ৫-৬ কেজি ওজনের কয়েকটি লোহার টুকরা নিয়ে হাজির হলেন।
বিচারক জানতে চাইলেন, গাড়িটি আনা হয়েছে কি না? তদন্তকারী কর্মকর্তা জবাব দিলেন, মাননীয় আদালত, জব্দকৃত আলামতটি আমার এই ব্যাগের মধ্যেই আছে। উপস্থিত সবাই তো হতবাক! একটি প্রাইভেট কার কী করে ব্যাগের মধ্যে থাকে। তখন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিচারককে জানালেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই মামলা। গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে যে প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছিল সেটি দীর্ঘদিনে মাটিতে খেয়ে গেছে। বাকি আছে এই কয়েকটি লোহার টুকরা। তখন বিচারক জব্দকৃত ওই আলামতের সমুদয় মূল্য মালিককে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই লোহা বিক্রি করে ৭২ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছিল গাড়ির মালিককে। ডিএমপির থানাগুলোতে জব্দকৃত গাড়ির অবস্থা শেষ পর্যন্ত এরকমই হয়। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িগুলো নিয়ে পুলিশও রীতিমতো বিপাকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোটি টাকার গাড়ি পুলিশ কোনো মামলার আলামত হিসাবে জব্দ করলেই কয়েক দিন পর তা হয়ে যায় ‘ভাঙ্গারি’। এই ভাঙ্গারি দিয়ে ডিএমপির থানাগুলো এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশের যেমন অসুবিধা হচ্ছে তেমনি থানা কম্পাউন্ডের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর প্রাইভেট কার, হিউম্যান হলার, মিনি ও মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মডেলের দামি গাড়িগুলো থানা প্রাঙ্গণে পড়ে থাকে। কোটি টাকা দামের এসব গাড়ি চোখের সামনেই ভাঙ্গারিতে পরিণত হয়। মহানগরীর কয়েকটি থানা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
শ্যামপুর থানা কম্পাউন্ডের বাইরে জরাজীর্ণ অবস্থায় বিভিন্ন রকমের ২০/২৫টি গাড়ি পড়ে আছে। ধুলোর আস্তরে ঢাকা পড়েছে কোনো কোনো গাড়ি। আবার কোনো কোনো গাড়ি একেবারে নতুন এবং অক্ষত আছে। শ্যামপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওগুলো আমাদের নয়, ট্রাফিক পুলিশের। থানা কম্পাউন্ডে যে সব গাড়ি আছে সেগুলো থানা পুলিশের। জানতে চাইলে পোস্তগোলা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মনির বলেন, এটা একটা ডাম্পিং প্লেস। রাজধানীতে এরকম বেশ কয়েকটি ডাম্পিং প্লেস আছে। তিনি বলেন, আইনী জটিলতায় গাড়িগুলো ছাড়া যায় না। বিচারকের আদেশ ছাড়া এগুলো মালিককে দেয়া যায় না। সে কারণে এভাবে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখতে হয়। শ্যামপুর এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ডিএমপির অতি পুরাতন শ্যামপুর থানা কম্পাউন্ড এবং এর আশপাশের জায়গাগুলোতে মাটির নীচে বহু গাড়ির ধ্বংসবাশেষ রয়েছে। বহু গাড়ি মাটিতে মিশে গেছে। বছরের পর বছর রোদে বৃষ্টিতে অনেক গাড়ি কঙ্কালসার হয়ে এখনও পড়ে আছে। বিভিন্ন থানা পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জব্দকৃত এসব গাড়ির মধ্যে অধিকাংশই মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবহন, খুনের কাজে ব্যবহারসহ দুর্ঘটনার মামলায় জব্দ করা। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আলামত হিসাবে এগুলো রাখতে হয়। একজন ওসি বলেন, অনেক সময় চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধারের পর মালিককে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়তে হয়। দেখা যায়, যিনি গাড়িটি দাবি করছেন তারও কাগজপত্র ঠিক নেই। তখন আদালতের নির্দেশণার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এক পর্যায়ে কালক্ষেপণ হতে হতে বহু গাড়িই নষ্ট হয়ে যায়। বছরের পর বছর জব্দ করা গাড়িগুলো থানা কম্পাউন্ডে পড়ে থাকে। মামলা শেষ হলে গাড়িগুলো আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। সরেজমিনে গিয়ে মতিঝিল থানার সামনেও বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেলসহ কয়েকটি গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডিউটি অফিসার জানান, কোন গাড়ির কি অবস্থা তা মালখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। একইভাবে যাত্রাবাড়ী, সুত্রাপুর, খিলগাঁও, মিরপুর, পল্টন, সবুজবাগ থানা কম্পাউন্ডে গাড়ির স্তুপ দেখা গেছে। প্রতিটি থানা কম্পাউন্ডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় একটি গাড়ির উপর আরেকটি গাড়ি রেখে স্তূপ করা হয়েছে। আলাপকালে ভুক্তভোগী দু’জন মালিক বলেন, এক পর্যায়ে দামি গাড়িগুলো যখন হাজার টাকার ভাঙ্গারিতে পরিণত হয় তখন সেটা নেয়ার মতো আগ্রহ থাকে না। ঝামেলা এড়াতে ওই ভাঙ্গারি কেউ নিত চায় না।
সরেজমিন দেখা গেছে, জব্দ করা গাড়িগুলোই কোনো কোনো থানা প্রাঙ্গণের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখে। কিছু থানায় জব্দ করা গাড়ি রাখার জায়গাও নেই। এতে গাড়িগুলো পাশের রাস্তা কিংবা অন্য কোনো খালি জায়গায় রাখা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, ঢাকা মহানগরের অর্ধেকের মতো থানা এখনও সীমিত পরিসরের ভাড়া করা জায়গায় চলে। তাতে জব্দ করা গাড়ির বাড়তি চাপ পুলিশের স্বাভাবিক কাজে সমস্যার সৃষ্টি করছে।
আলাপকালে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ চোরাই, দুর্ঘটনাকবলিত, কাগজপত্রহীন কিংবা মাদকবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন অপরাধে কর্মকান্ডে ব্যবহৃত যানবাহন আটক করে থাকে। এর মধ্যে কিছু গাড়ি আদালতের নির্দেশে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয় মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর। এসময়ের মধ্যে গাড়ির বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এসব গাড়ি কিংবা এর কোনো অংশ যাতে খোয়া না যায় তা নিশ্চিত করতে বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন হয়। জব্দ করা গাড়ির কোনো অংশ খোয়া গেলে বা চুরি হলে তার দায়ভার পুলিশের কাঁধেই পড়ে। এতে জব্দ করা গাড়িগুলো থানা পুলিশের কাছে বোঝার মতোই।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মুখপাত্র ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরকার ইনকিলাবকে বলেন, জব্দকৃত গাড়িগুলো আসলে মামলার আলামত। এগুলো আদালতের নির্দেশ ছাড়া হস্তান্তর করা যায় না। এমনকি প্রতিস্থাপনও করা যায় না। যে থানার আলামত সেই থানাতেই রাখতে হয়। তিনি বলেন, আমাদের থানা কম্পাউন্ডগুলোতে জায়গা সঙ্কট-পুলিশের গাড়ি রাখারই জায়গা হয় না। তারপরেও মামলার আলামত হিসাবে জব্দকৃত গাড়িগুলো রাখতে গিয়ে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।