Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামী সোমবারের মধ্যে যে কোনো সময় মুফতি হান্নানের ফাঁসি

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় আগামী ৮ দিনের মধ্যে যে কোন সময় কার্যকর করা হবে। ফাঁসি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। আগামী কাল মঙ্গলবার থেকে ১৭ এপ্রিল সোমবারের মধ্যে এই দন্ড কার্যকর করা হবে। আইনী বিধান অনুসারে আট দিনের মধ্যে যে কোনো সময় জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। যেদিন তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, সেদিন থেকে ২১ দিনের কম নয় এবং ২৮ দিনের বেশি নয় এমন সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করার নিয়ম রয়েছে। সে হিসেবে ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যেই মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত শনিবার মুফতি হান্নানের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন  প্রেসিডেন্ট। ফলে তার ফাঁসি কার্যকরে আর আইনি বাধা নেই। এখন কারাবিধি অনুযায়ী তার ফাঁসির রায় যেকোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার শুরুর থেকেই আলোচিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। সেই সঙ্গে মুফতি হান্নানও পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর সমাবেশে, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এবং পল্টনে সিপিবি’র সমাবেশ ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বোমা হামলা, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার জন্য সমাবেশের অদূরে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা এবং ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি মুফতি হান্নান। শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মুফতি হান্নান। এরপর বিভিন্ন মামলায় টানা ১২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। তখনই গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করাসহ বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু তা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার প্রকাশ করেনি।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়েছে মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগী বিপুল ও রিপনের। গত ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে দÐ বহাল রাখে। পরদিন মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয় তিন জঙ্গিকে। সেদিনই তারা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানান।
গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী বিপুল এবং সিলেট কারাগারে বন্দী রিপন প্রেসিডেন্টের  কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। শনিবার রাতে সে আবেদন নাকচ করেন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এখন সরকারের নির্বাহী আদেশ যাবে। তারপর যেকোন সময় সেটি জেল কর্তৃপক্ষ তার ফাঁসি কার্যকরে পদক্ষেপ নিতে পারবে।
কে এই মুফতি হান্নান :
মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায়। তিনি গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসা ও বরিশালের শর্ষিণা আলিয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। এরপর ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে দাওরা হাদিস পড়াকালে ১৯৮৭ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরের বছর ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যান এবং করাচির জামিয়া ইউসুফ বিন নূরিয়া মাদরাসায় ফিকাহশাস্ত্রে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সীমান্তবর্তী শহর খোস্তে মুজাহিদ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি পেশোয়ারে কুয়েত আল-হেলাল হাসপাতালে ১০ মাস চিকিৎসা নেন। এরপর করাচির ওই মাদরাসায় লেখাপড়া শেষ করেন।
মুফতি হান্নান ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরেন এবং পাকিস্তানভিত্তিক হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়ে তৎপরতা শুরু করেন। অবশ্য এর আগেই আফগানফেরত এদেশীয় মুজাহিদরা হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ গঠন করেন। মুফতি হান্নান ১৯৯৪ সালে এই সংগঠনে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার থানা প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্প দিনের মধ্যে তিনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসেন। হুজিতে থাকার পাশাপাশি মুফতি হান্নান হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়েও কার্যক্রম চালাতেন।
সিলেট  কারাগারে জঙ্গি
রিপনের সাথে পরিবারের সাক্ষাৎ
সিলেট অফিস : সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ফলে তার ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা রইল না। প্রয়োজনীয় কাগজা হাতে পেলেই জেলকোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নিতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গতকাল দুপুরে জঙ্গি নেতা রিপনের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তার পরিবারের শিশু, নারী ও পুরুষসহ ১২  সদস্য। তারা রিপনের সঙ্গে দেখা করে ২৫ মিনিট কথা বলেন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। ফাঁসির আদেশ পাওয়ার পর পরই যাতে তা কার্যকর করা যায়, সেজন্য ফাঁসির মঞ্চ ও কারাগারের ৭-৮ জন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুফতি হান্নানের ফাঁসি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ