পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীসহ দেশের চালের বাজার আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। তৎপর হয়ে উঠেছে মজুদদার চক্র। কালো হাতের ইশারায় চালের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে চলছে। গত আমন মৌসুমে ধানের ব্যাপক ফলন হওয়া সত্তে¡ও জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ দফা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহকালসহ ৩ মাসাধিককালে ৪ দফায় চালের মূল্য কেজি প্রতি বেড়েছে ৯ থেকে ১০ টাকা। একবার চালের দাম বেড়েছে আমন ধান কাটার কিছুদিন পূর্বে। তখন বেড়েছিল কেজি প্রতি ১ টাকা। দ্বিতীয়বার বেড়েছে আমন ধান কাটা শুরু হওয়ার এক পক্ষকাল পরে।
তখন বেড়েছিল কেজি প্রতি ৩ টাকা। এর ৩ দিন পর তৃতীয় দফায় চালের মূল্য বেড়ে যায় কেজিপ্রতি আরো ২ টাকা। এভাবে ৩ বার বৃদ্ধি পাবার পর চালের বাজার স্থিতাবস্থায় থেকে যায়। মাঝখানে কেজিপ্রতি আট আনা এক টাকা কমে সে অবস্থায়ই থাকে। গত এক সপ্তাহে পাইকারী বাজারে বস্তাপ্রতি বেড়েছে দেড়শ’ টাকা এবং কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩ টাকা। খুচরা চাটাইয়ে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা এবং খুচরা প্রতিকেজি ৪ টাকা। ব্রি-২৮ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, ২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, বাংলামতি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে বেড়ে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা এবং কাজললতা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ গত ৩ মাসে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা। চালের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সচেতন সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। সামনের বোরো মৌসুমে কি হবে এ নিয়ে মানুষ শংকিত হয়ে পড়েছে।
খুচরা চাটাই’র মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে চাল সরবরাহে কোন ঘাটতি ছিল না। বাজারে চালের ব্যাপক আমদানী ছিল। গত সপ্তাহে সিলেটের হাওর অঞ্চলে পানি বেড়ে বোরো ধান নষ্ট হবার অজুহাত দেখিয়ে বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। আগামী বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে নাÑ এই অপপ্রচার চালিয়ে সিন্ডিকেট চক্রটি চাল মজুদ করা শুরু করেছে। সকল চালই এখন সিন্ডিকেট চক্রের গোপন মজুদ ভান্ডারে চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে নরসিংদীর আড়তদারদের সাথে কথা বলার পর তারাও একই কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, সিলেটের বোরো চাল বছরে দুই আড়াই মাস চলে। বাকি চাল আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। সিলেটে বোরো ধান মার খাবার অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম কেন বাড়িয়ে দিয়েছে তা আড়তদাররা বলতে পারেনি।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর আমন মৌসুম থেকেই চালের বাজারে কালো হাতের থাবা পড়েছে। ধান কাটার মৌসুমেই এই চক্রটি চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। উৎপাদন কম হলেও ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম বাড়ার নজীর খুব কম। অথচ আমন ধান কাটার পূর্ব থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত ৩ দফা চালের দাম বাড়িয়েছে এই চক্রটি। তারা বলেছে আমন ধান কাটার পর চাল করে বাজারে ছাড়েনি অনেক সিন্ডিকেটচক্র। তারা সরাসরি চাল আড়তে না দিয়ে নিজেদের গোপন মজুদাগারে মজুদ করে ফেলে। যার ফলে চালের দাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। মজুদদাররা চাল মজুদ করে আর বাজারে চালের দাম যখন বাড়ে তখনই তারা অল্প অল্প করে আড়তে সরবরাহ করে। সিন্ডিকেট চক্রটি চাল সম্পর্কে অপপ্রচার চালায় যে, বিগত আমন মৌসুমে সরকার পর্যাপ্ত চাল ক্রয় করেনি। সরকারের গুদামগুলোতে চালের মজুদ খুবই কম। যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে তা দিয়ে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সরকারের ঘরে চাল না থাকার কারণে দীর্ঘ ৩ মাস যাবত ওএমএস বন্ধ হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ খোলা বাজারে সরকার চাল বিক্রি করতে পারছে না। হত দরিদ্রদের চাল ছাড়া আর কোন চাল সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের হাতে পৌঁছছে না। এ সুযোগ নিয়েই সিন্ডিকেট চক্র চালের দাম যখন তখন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নরসিংদী কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম বেড়েছে। মিলাররা গত আমন মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুদ করেছে। এখন কৃষকদের হাতে ধান নেই। এই সুযোগ নিয়ে চালের বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। চলতি বোরো মৌসুমে হাওর অঞ্চলে কিছু ধানের জমি নষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু সারা দেশে বোরো ধানের অবস্থা খুবই ভাল। হাওরে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছেÑ এ কথা সর্বাংশে ঠিক নয়। চালের দাম বোরো ধান লাগানোর আগেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। অর্থাৎ আমন ধান কাটার পূর্বেই সিন্ডিকেটচক্র চালের বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠে। সচেতন ক্রেতারা জানিয়েছে, বাজারে চালের বাহ্যতঃ কোন ঘাটতি নেই।
নরসিংদীর অর্ধশত আড়তে প্রচুর পরিমাণ চাল রয়েছে। চাটাইগুলোতেও চালের কোন ঘাটতি নেই। এরপরও চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ থাকতে পারে না। তারা বলেন, চালের মূল্য নিয়ে সরকার যেমন নীরব, তেমনই বিরোধী দলসমূহও নীরব ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে পূর্বাপর সময়ে চাল কেজিপ্রতি আট আনা বাড়লেই বিরোধী দলের লোকেরা গর্জে উঠতো। এখন কেউ কথা বলে না। গত ৩ মাসে চালের দাম কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। চালের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য সাধারণ মানুষের আলোচনা সমালোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ বিরোধী দলসমূহ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছে না। মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। একদিকে চালের মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ঘাটতির অপপ্রচারে মানুষ এক বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।