Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত নির্ভর বিদ্যুৎ খাত

আদানি ও রিলায়েন্সের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার

প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের বিদ্যুৎ খাত অতিমাত্রায় দিল্লী নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। এই নির্ভরতার অংশ হিসাবেই ভারতের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি ও রিলায়েন্সের কাছ থেকে ২ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠান দু’টির কাছ থেকে যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হবে তা দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় অনেক বেশি দাম পড়বে। আদানি ও রিলায়েন্স প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রস্তাব করেছে প্রায় সাত টাকা। গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের এই দাম অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও দেশের বাইরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হলে যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছেÑ সেই অভিজ্ঞতাও ভারতের এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের নেই। তদুপরি, এই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কেনা-বেচার বিষয়টিও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ (বিশেষ বিধান)’ শীর্ষক বিশেষ আইনের আওতায় এবং আদানি ও রিলায়েন্সের অযাচিত (আনসলিসিটেড) প্রস্তাবের ভিত্তিতে।
প্রসঙ্গত: ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ (বিশেষ বিধান)’ শীর্ষক আইনটি ২০১০ সালে সরকার তিন বছরের জন্য করেছিল। পরে একাধিকবার তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় প্রচলিত দরপত্র-প্রক্রিয়া ছাড়াই কোনো কোম্পানিকে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিতে পারে সরকার। এ নিয়ে কখনো কোনো আদালতেরও শরণাপন্ন হওয়া যাবে না।
জানা গেছে, নিজ দেশের বাইরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হলে যে অভিজ্ঞতা অপরিহার্য বলে প্রচলিত প্রক্রিয়ায় গণ্য করা হয়, আদানি ও রিলায়েন্সের ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। আদানি ভারতে প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র্র স্থাপন করলেও বিদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো অভিজ্ঞতা তাদের নেই।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, আদানি ভারতে তাদের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদিত মোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন আদানিই নির্মাণ করবে।
রিলায়েন্সের প্রস্তাবনায় বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে মোট তিন হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে কোম্পানিটি। এর মধ্যে প্রথমটি হবে ৭৫০ মেগাওয়াটের। এই কেন্দ্রটির জন্য রিলায়েন্স সরকারের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছে। পাশাপাশি মহেশখালীতে একটি স্বতন্ত্র ভাসমান টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট বা এফএসআরইউ) স্থাপন করে এলএনজি আমদানি করে তা দিয়ে ২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা তাদের।
গত বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির বাংলাদেশ সফরকালে আদানি ও রিলায়েন্সের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আলাদা দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। সেই সূত্র ধরে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোম্পানি দুটির একাধিক বৈঠক হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানি দুটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আদানির প্রস্তাবটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বোর্ড সভা অনুমোদন করেছে। সেটি এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য আসবে। আর রিলায়েন্সের ৭৫০ মেগাওয়াটের প্রস্তাবটিতে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।
বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সাবস্টেশন হয়ে ৫শ’ মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। এ ছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ২০১৩ সালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি হয়েছে। এই কেন্দ্রটি নির্মাণে দু’দেশের অংশীদারিত্বের কথা বলা হলেও বাস্তবে এ কেন্দ্রের পুরো নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতেই থাকবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করলেও সরকার নির্দিষ্টস্থানেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে অনঢ়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর চলমান ভারত সফরেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে এক্সিম ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি, ত্রিপুরা থেকে আরো ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল চর্তুদেশীয় বিদ্যুৎ গ্রীড, ঝাড়খÐে অবস্থিত আদানি গ্রæপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সঞ্চালন লাইন করা এবং ভারতের রিলায়েন্সের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হবে।
ভারতের ত্রিপুরার সূর্য মণিনগর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিশালগড় মহকুমার কৈয়াঢেপা সীমান্ত হয়ে বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। এই পথে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এর দাম নিয়ে এতদিন দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। এখন তা ঠিক হয়েছে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ রুপি ৫৪ পয়সা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় টাকা ৩১ পয়সা। আর ভারতের আদানি গ্রæপ ঝাড়খন্ড প্রদেশে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট ছয় টাকা ৯৩ পয়সা দরে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। যা অনেক বিশে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ বিষেজ্ঞরা।
এদিকে, ভারতের নতুন আইন অনুযায়ী- নেপাল থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির কোন সুযোগ রাখেনি দিল্লী। নতুন আইনে ভারত কাউকে বিদ্যুতের ট্রানজিট দেবে না। তবে নেপাল বা ভূটান থেকে ভারত বিদ্যুৎ কিনে তা আবার বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে পারবে। যেহেতু ভারতের ভূমি ব্যবহারের বিকল্প নেই তাই ভারতের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার উদ্যোগ নিয়েছে।



 

Show all comments
  • Selina ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ৮:৪৩ এএম says : 0
    Could not understand .
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi Hasan ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২৫ পিএম says : 0
    এই সব খবর পড়লে বুকের ভিতর টা অজানা ভয়ে সংকুচিত হয়ে যায় ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ