পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোনা আলামি, দি নিউ আরব : নতুন করে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলা সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরকে এক নয়া বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। আর সিরিয়ার শিশুদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরেকবার ব্যর্থ হয়েছে।
৪ এপ্রিলের গ্যাস হামলায় কমপক্ষে ৭২ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে। রাসায়নিক অস্ত্রের এই সর্বশেষ ব্যবহার সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া রাসায়নিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ভেঙ্গে দিয়েছে। সে সাথে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘রক্ষার দায়িত্ব’ নীতি পরিত্যাগ করার বিষয়টিকে তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যার দীর্ঘমেয়াদী গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
গ্যাস হামলার ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কমপক্ষে ১১টি শিশু জ্ঞান হারাচ্ছিল ও বমি করছিল। ফেনা উঠছিল তাদের মুখে। দি ইউনিয়ন অব মেডিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড রিলিফ অর্গানাইজেশনস (ইউও এসএসএম) নিহতের সংখ্যা ১শ’রও বেশি বলে জানিয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তারা জানায়। যে হাসপাতালে রাসায়নিক হামলায় আহতদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল তাতে একটি রকেট আঘাত হানে এবং হাসপাতালের একাংশ বিধ্বস্ত হয়।
যে সময় হামলার কথা বলা হয়েছে ওই সময় রুশ জঙ্গি বিমান কোনো হামলা চালায়নি বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মেজর জেনারেল আইগর কোনাশেনকভ বলেন, সিরিয়ার জঙ্গি বিমানগুলো রাসায়নিক অস্ত্রে ব্যবহারযোগ্য বিষাক্ত পদার্থ সম্বলিত বিদ্রোহীদের একটি গুদামে হামলা করে।
সরকারপন্থী মিডিয়া সিরীয় সামরিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় যে, খান শেইখুনে আল-কায়েদার একটি রাসায়নিক অস্ত্র কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটার কারণে এ হামলা করা হয়। এ ধরনের কারখানায় বিমান হামলা চালানোর মত মনোবল ও সামর্থ একা সিরীয় সামরিক বাহিনীরই আছে।
খান শেইখুন হামলা হচ্ছে বাশার আল আসাদ সরকারের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নার্ভ গ্যাস ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনা। জাতিসংঘ তদন্তকারীরা গত বছর বলেন যে আসাদ সরকার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কমপক্ষে দু’বার কো¬রিন গ্যাস ব্যবহার করে।
এছাড়া ফেব্রয়ারিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, আসাদ বাহিনী গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব আলেপ্পোতে কমপক্ষে ৮ বার রাসায়নিক নার্ভ গ্যাস হামলা চালায়। এতে ৪ শিশুসহ কমপক্ষে ৯ ব্যক্তি নিহত হয়।
২০১৩ সােেলর আগস্টে দামেস্কের কাছে ঘুটা এলাকায় এক রাসায়নিক হামলায় শত শত শিশুসহ ১৪০০ ব্যক্তি নিহত হয়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ এ হামলার জন্য সিরীয় বাহিনীকে দায়ী করে।
এ সপ্তাহে পরিচালিত খানশেইখুনের হামলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে।
প্রথমত এটা হচ্ছে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় সিরিয়া বিষয়ক আন্তর্জাতিক বৈঠকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে দায় এড়ানোর বলিষ্ঠ বিবৃতি।
দ্বিতীয়ত খান শেইখুনে নার্ভ গ্যাসের ব্যবহার এটাও তুলে ধরে যে বিরোধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছা ও সামর্থ আসাদের আছে।
তৃতীয়ত আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এটা প্রদর্শন করে যে সিরিয়া ২০১৩ সালে যখন রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল তখন সে মিথ্যা কথা বলেছিল অথবা দেশটি এর আগে উৎপাদন সামর্থ নেই বলা তার ক্ষমতার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে।
সর্বশেষ এই রাসায়নিক গ্যাস হামলা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে ছিন্ন করেছে যার লক্ষ্য ছিল ঘুটা গণহত্যার পর সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রভাÐার ধ্বংস করা।
খান শেইখুন ঘটনা প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারে আরেকটি যুদ্ধাপরাধ যা রক্ষার দায়িত্ব সমুন্নত রাখার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রæতির ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে।
রক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে ২০০৫ সালের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রতিশ্রæতি। গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগোষ্ঠীগত নির্মূল অভিযান ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যর্থতা মোকাবেলার জন্য তা প্রণীত।
সিরিয়ার যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫ লাখেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তাদের অর্ধেকরও বেশি বেসামরিক লোক। এই প্রতিশ্রæতি সিরিয়ায় বলবতকরণের ব্যর্থতার অর্থ হচ্ছে অত্যাচারী স্বৈরশাসকের হাতে লাগাম ছেড়ে দেয়া যা আরেকটি মারাত্মক নজির সৃষ্টি করতে পারে।
৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে যাতে খান শেইখুন হামলা নিন্দা ও আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের বিমান হামলার ব্যাপারে তথ্য প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু আগের রাসায়নিক হামলাগুলোর ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে, এই নয়া অপরাধের ক্ষেত্রেও বিশ^ সম্ভবত নীরবতা পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।