পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ শ্লোগানে। কর্পোরেট হাউজ মালিকানাধীন মিডিয়াগুলোতে নিত্যদিন উন্নয়নের নানান ফিরিস্তি তুলে ধরা হচ্ছে। অথচ উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে দেশের অর্থনীতির। বেকারের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রবাহ কমে গেছে। জঙ্গি প্রচারণায় নিরাপত্তাহীনতায় বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ভীতি-আতঙ্ক-অনিশ্চয়তায় দেশী বিনিয়োগে ভাটা পড়ায় মিলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ-গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন কমছে এবং মিলকারখানা বন্ধ হওয়ায় কর্মজীবীরাও কর্মহীন হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডিজিটাল চুরি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারীর পর ব্যাংকিং সেক্টরকে অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূলে সরকার যথযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি গ্রাহকদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গি অর্থায়ন এবং জঙ্গিদের টাকার উৎস খুঁজে বের করতে ব্যাংকিং-এ নতুন নতুন নিয়ম করায় গ্রাহক হয়রানী সবকিছুই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ সব প্রকল্পে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। মেগা প্রকল্পকে ‘উন্নয়নের সাইনবোর্ড’ ব্যবহার করে মিডিয়াগুলো প্রচার করছে দেশে গণতন্ত্র ভোটের অধিকার সীমিত হয়ে আসলেও উন্নয়নের চাকা জোরসে চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন উন্নয়ন মানেই ‘টাকার প্রবাহ’। দেশে উন্নয়ন হলে মানুষের হাতে টাকা আসবে; টাকার হাতবদল বাড়বেই। বাস্তবতা উল্টো। ক্ষমতার চারপাশে থাকা কিছু ব্যক্তি ফুলে ফেপে উঠেছে অর্থনৈতিকভাবে। সম্পদের পাহাড় গড়ছেন ঠিকই; অথচ প্রতিটি সেক্টরে ব্যবসা মন্দা। আবাসন খাতের সঙ্গে প্রায় অর্ধকোটি লোক জড়িত। এর মধ্যে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ শ্রমিক। এ ছাড়াও রড, ইটবালু-সিমেন্টসহ অনেক ব্যবসা নিয়ে কয়েক লাখ মানুষ এ সেক্টরে সঙ্গে যুক্ত। অথচ ফ্লাট বিক্রি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। কয়েক বছর আগে যে ব্যবসায়ী বছরে ২০ থেকে ৩০টি ফ্লাট বিক্রি করতেন তিনি এখন বছরে দু’তিনটি ফ্লাট বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছেন। জমা-জমি বিক্রির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ফলে জমির দাম কমে গেছে। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিদেশে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে নানান সাফল্যের কথাবার্তা প্রচার করা হলেও বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। এমনিতেই সরকারের অদূরদর্শি পদক্ষেপ, ভুল পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনীতিক ব্যর্থতার কারণে বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানো কমে গেছে। যারা বিদেশে রয়েছেন তারা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। কিন্তু দেশে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপকতা নিয়ে বিশ্বমিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচারণায় প্রবাসে বাংলাদেশীদের যাতায়াত এবং বসবাসে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে; তেমনি বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমে যাওয়ায়ও রেমিটেন্স পাঠানোতে মন্দা নেমেছে। তাছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে জটিলতা, আস্থাহীনতা এবং নতুন নতুন নিয়মনীতির কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ অবৈধ পথ হুÐির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৬ সালে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭০ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার। টাকার অংকে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অন্য হিসেবে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩২ কোটি ৩ লাখ ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে।
পোশাক শিল্প নিয়ে স্বপ্নের শেষ নেই। অথচ অবকাঠামো সংকট, সরকারি সহযোগিতার অভাব ও অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তৈরি পোশাক শিল্পে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। একের এক তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পোশাক খাতের রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে পোশাক খাতের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ওভেন খাতের ২ হাজার ৩৪৮ এবং নিট খাতের বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৯৯৫টি। এতে কয়েক লাখ নারী শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার সংকুচিত হওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বড় বাজার আমেরিকা জিএসপি স্থগিত করেছে। আরেকটি বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে জিএমপি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রানা প্লাজা ধ্বসের পর তৈরি পোশাক ক্রয়ের সংগঠন অ্যাকোর্ড ও অ্যালাইন্স বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলোর কর্মপরিবেশের যে শর্ত দিয়েছে তা পূরণে ধীরগতিতে তারা অসন্তুষ্ট। অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের বদলে ভিয়েতনাম গেছেন তৈরি পোশাক কিনতে। গত ২৮ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসেন গার্মেন্টস এর কর্মপরিবেশ দেখতে এবং ট্রেড ইউনিয়নের দাবি নিয়ে। তাদের নিয়ে সেমিনারও হয়। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার দিতে হবে। বেতন সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। গত বছরের অক্টোবরে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় কয়েকজন বিদেশীর মৃত্যু পরবর্তীতে জঙ্গি ইস্যুর প্রচারণা এবং জঙ্গি গ্রেফতার অভিযানের খবর বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সরকারও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় রেড অ্যালাট জারী করেন। অষ্ট্রেলিয়াসহ একাধিক দেশ নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। ঢাকায় কর্মরত বিদেশীদের অনেকেই ঢাকা ত্যাগ করেন। এ সব খবর দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করায় দেশের সর্বত্রই আতঙ্কাবস্থা বিরাজ করে। নিরাপত্তার অজুহাতে তৈরি পোশাক ক্রেতাদের ঢাকায় একাদিক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার স্থগিত হয়ে যায়। কয়েকটি দেশের ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার ফিরিয়ে নেন। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার কথা থাকলেও তারা বিকল্প দেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের অর্ডার দেন। আবার যথাসময়ে সরবরাহ করতে না পারায় কিছু অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। ফলে সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্পে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। কিছুদিন আগেও পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতেন ২০২১ সালের মধ্যে বছরে বাংলাদেশ ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করবে। তাদের কণ্ঠে সেই দৃঢ়তার বদলে এখন হতাশার সুর। বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, কোনো কারণে একবার একটি বাজার হারালে ওই বাজার ফিরে পাওয়া কষ্টকর। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে যে সব দেশ পোশাক রফতানিতে প্রতিযোগিতা করছে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। রফতানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় অপেক্ষাকৃত ছোট উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারছেন না। জঙ্গি ইস্যুর কারণে আমরা তো নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে। এ অবস্থার উন্নতি না হলে বেকার সমস্যা বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ পরিস্থিতি সামষ্টিক অর্থনীতিকে মারাত্মক চাপে ফেলবে।
যতই দিন যাচ্ছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়ছে। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রæপ কেলেঙ্কারী, বেসিক ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা লোপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকা ডিজিটাল চুরি’র পর কার্যকর আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার ঘটনা ভালভাবে নেয়নি গ্রাহকরা। কয়েকটি ব্যাংকের শাখার টাকা লুট ও চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন লাখ লাখ গ্রাহক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাছাড়া জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকানোর নামে ব্যাংকে গ্রাহক পর্যায়ে লেনদেনে ‘অতি বাড়াবাড়ি’ ধরনের নিয়মনীতি করায় গ্রাহকরা ব্যাংক বিমুখ হচ্ছেন। বিশেষ করে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে অহেতুক ঝামেলা এড়াতে ব্যাংকিং সেক্টরের বদলে অবৈধ পথ হুÐির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ না আসায় কর্মক্ষেত্র বাড়ছে না। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির গবেষণা অনুযায়ী দেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় ওই বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ লাখ ১২ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে ৫৪ হাজার ১৬০ জন। সেই হিসেবে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ লাখ স্নাতক বের হচ্ছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই কাজ পাচ্ছে না। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে; সেই সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। ঢাকায় কয়েকটি উড়াল সেতু, পদ্মা সেতু নির্মাণ, যোগাযোগে কয়েকটি ফোর লেন-এইচ লেন প্রকল্প ইত্যাদির উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সে সে উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে দেশের জনগণ। অবকাঠামো উন্নয়ন না করেই সমুদ্রবন্দরগুলো ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। স্থানীয় সরকারগুলোকে ক্ষমতাহীন করে রাখায় তৃর্ণমূলের উন্নয়ন সীমিত হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জ দূরে থাক রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের রাস্তাঘাটের যে দুর্দশা; বেকারত্ব বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের যে মন্দা তাতে অর্থনৈতিক মন্দা স্পষ্ট। ফলে উন্নয়নের নামে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ঠিকই; কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে অর্থনীতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।