মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
আসাদুজ্জামান আসাদ : মহান আল্লাহ তাআলা অসংখ্য বস্তু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিসমূহের মধ্যে নদী একটি। নদীকে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ বজায় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির নিদর্শন হিসাবে সৃষ্টি করেন। নদীর জন্ম কোথায়? নদীর জন্ম হলো পাহাড়ের ঝরনা থেকে। এ ঝরনা আস্তে আস্তে স্রোতের গতিতে পরিণত হয়। তারপর শুরু হয় নদীতে। পাহাড় থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। আমাদের দেশে বড় বড় অধিকাংশ নদীর জন্মসূত্র ভারতে। আদিকাল থেকে এ দেশের মানুষের জীবন উৎস ছিল নদী। আমাদের পড়শি রাষ্ট্র ভারত। তারা বড় নদীসমূহের মুখে বাঁধ নির্মাণ করে পানিপ্রবাহ অন্যদিকে প্রবাহিত করে। যার কারণে বাংলাদেশে নদীসমূহের অপমৃত্যু হয়েছে। হয়েছে মরা খাল। নদীতে পানিশূন্যতার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পানিশূন্যতার জন্য প্রাকৃতিক কোনো কারণ নেই। ভারত সরকারই পানিশূন্যতার মূল কারণ। ভারত সরকার আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে নদীর মুখে বাঁধ নির্মাণ করে এককভাবে পানি ব্যবহার করছে।
বলা হয়- পানির অপর নাম জীবন। হ্যাঁ সত্যি। পানি ছাড়া কোনো মানুষ ও প্রাণী বাঁচতে পারে না। সৃষ্টিগত কারণে মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে দু’ভাগ পানি আর এক ভাগে মাটি সৃষ্টি করেন। পানির স্থান হিসাবে সাগর, নদী, খাল, বিল, পুকুর, কুয়া ইত্যাদি। পানিশূন্যতার কারণে রসহীন জমিতে ফসলের চারা মরে যাচ্ছে। পানিহীন নদীতে আমাদের দেশে অপরিসীম ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু পানি নিয়ে আমাদের দেশে মন্ত্রী, নেতা, সম্পাদক, লেখক, কবি, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কারো মাঝে তেমন কোনো ভাবনা বা চিন্তা নেই। নদীর অপমৃত্যু হলো না মরে গেল, সে বিষয়ে কোনো তর্ক-বিতর্ক নেই। অথচ আমরা স্ব-বিরোধিতায় সর্বদা লিপ্ত। নদীর জীবন ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টিপাত করার জন্য যথাযথভাবে, মানববন্ধন, লংমার্চ, অবরোধ, সভা- সমাবেশ করার প্রয়োজন। কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না।
নদী আমাদের জাতীয় সম্পদ। অথচ বর্তমানে নদীর বুকে কোনো ¯্রােত বা পানির প্রবাহ নেই। পানিশূন্য হয়ে নদীগুলোর অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা নদীর অপমৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করি না। নদী ড্রেজিং করার আলোচনা করি। নদীতে যদি পানিপ্রবাহ না থাকে, তাহলে কি ড্রেজিং করলে পানির সমস্যা সমাধান আসবে?
আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের উপর দিয়ে ছোট বড় অসংখ্য নদী প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীর মধ্যে ৫৭টি নদীর জন্ম উৎস ভারতে। এসব নদীর মধ্যে, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, করতোয়া, আড়িয়ালখাঁসহ অধিকাংশ নদীই মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। এটা চিরন্তন সত্য যে, নদীর পানি কোন দেশের বা জাতির একক সম্পদ নয়। যে দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত সে দেশ তখন সেটা ভোগ করবে। নদীর পানিবণ্টনে আন্তর্জাতিক আইন ও কাঠোর নীতিমালা আছে। আন্তর্জাতিক আইন দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষম বণ্টন হবে। কিন্তু পড়শি রাষ্ট্র ভারত আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে অবৈধ পন্থায় এককভাবে পানি ভোগ করে চলেছে। আমাদের উজান থেকে নদীর পানি প্রত্যাহার করে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের অনিচ্ছার কারণ এবং নদী ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশে নদীগুলোর অপমৃত্যু হয়েছে। নদীর উৎসমুখ ভারতে থাকার কারণে তারা পানি ইচ্ছামত ব্যবহার করছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
ভারতকে মোকাবিলা করে পানির ন্যায্য হিসাব বুঝে নেয়ার জন্য পরাষ্ট্রনীতি, রাজনৈতিক ঐক্য ও পাস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের স্বার্থে অর্থাৎ নদীর পানি পাওয়ার নিমিত্তে ভারতের সাথে সমুদ্রবন্দর, ট্রানজিট সুবিধার সুযোগ-সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে ইতিমধ্যে ভারত, বিনাশর্তে সমুদ্রবন্দর, ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ফেলছে। কিন্তু আমরা কোনো ভৌগোলিক সুবিধা ভারতের কাছ থেকে নিতে পারিনি।
খরা মৌসুমে নদীর পানিতে ¯্রােত প্রবাহ না থাকার কারণে নদীর নিচে পলি মাটি জমে উঠেছে। নদীর বুকে সেসব মাটিতে ইরি, বোরো, গম, রসুন, পেঁয়াজ, হাইব্রিড, তিল ইত্যাদি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানির ধারণক্ষমতার অভাবে সামান্য পানিতে বন্যা হচ্ছে। বন্যার পানিতে কৃষকের খেতের ফসল, বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে নষ্ট হচ্ছে। বাসা বাড়িতে গাছ-পালা ভেঙে চুরে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এদেশের কৃষকরা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। না থাকার কারণে দেশের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির মাঝে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। অতি তাড়াতাড়ি নদী প্লাবিত অঞ্চল মরুভ‚মিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। নদীসমূহের পানির গতিধারা স্বাভাবিক না হলে আমাদের দেশে চরম ক্ষতি হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধের কারণে নদীর পানি এদেশে তেমন একটা আসতে পারে না। যতটুকু আসে ততটুকু ভারত নিয়ে নেয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ পানি পাওয়ার কোনো আশাই নেই। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে পদ্মার পানিতে টান ধরেছে। পদ্মার বুকে বড় বড় চর জেগেছে। পদ্ম এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। চলছে মানুষ ও গাড়ি-ঘোড়া। নদীর পানির উপর সেচব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। পদ্মার পানিশূন্যতার কারণে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প এবং তিস্তায় পানির অভাবে তিস্তা প্রকল্পে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। পানি সেচ ছাড়া কৃষি অচল। পানির অভাবে কৃষকরা আজ পথে বসেছে। নদী পানিশূন্যতার কারণে কৃষকরা ভ‚গভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে গত দু’বছরে পানির স্তর ১২ ফুট নিচে নেমে গেছে। নদীর পানি রক্ষায় ভারত অভিন্ন নদীর পানি আটকে দিয়েছে। পানি প্রবাহিত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে সামাজিক, পরিবেশিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এদিকে আমরা অর্ধশতাব্দী থেকে গঙ্গা ব্যারাজের কথা শুনে আসছি। এই ব্যারাজ আজো নির্মিত হয়নি। শুধুমাত্র ভারতের বিরোধিতার কারণে। গঙ্গা ব্যারাজ তৈরি হলে এদেশে অনেক নদী তার নাব্য ফিরে পাবে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, পানি ছাড়া মানুষ নয়, কোনো প্রাণী বা জীব বাঁচতে পারে না। পানির জন্য নদীর প্রয়োজন। নদী বেঁচে না থাকলে দেশ বাঁচবে না। পানি ছাড়া দেশ হবে মরুভ‚মি। মানুষ হবে বিপর্যয়ের শিকার। পরিবেশ হারাবে ভারসাম্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য। তাই পরিবেশবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য নদীর জীবন ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। তাই আসুন, আমরা সবাই নদীর প্রাণ বা পানির জন্য দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
ষ লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।