Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামরিক চুক্তি শান্তির বুকে অশান্তির ভিত্তি

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ : প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন ৭ এপ্রিল। ডজন খানিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আভাস মিললেও তুরুপের তাস বিনিময় হচ্ছে মূলত সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে। সামরিক চুক্তি আমাদের দেশের জন্য কতটা জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ আদৌ প্রয়োজন কিনা এ বিষয় রয়েছে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। এ ধরনের চুক্তি সংঘটিত হয়ে থাকে মূলত এক দেশের সাথে অন্যদেশের যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। যেমনটি হয়েছিল ১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধরত পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার। কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সকল ধরনের ঝামেলা নিষ্পত্তি হয়েছে চুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ শংকার সম্ভাবনা জিরো। সুতারাং বাংলাদেশের সঙ্গে কারো যুদ্ধ ঘটতে পারে এ ধরনের সমূহ সম্ভাবনা অকল্পনীয়। তাহলে ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঘের বৃষ্টির মতো সামরিক স্মারক কতোটা সামঞ্জস্যক ও যুক্তিযুক্ত?
প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বে যতো ধরনের চুক্তি বিনিময় হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে বলশালী দেশসমূহ চুক্তির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা আদায় করে থাকে। দুর্বল দেশগুলোর ভ্যাবাচ্যাকা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না কস্মিনকালেও। এবারে আসা যাক, বলশালী ভারতের গ্রহণীয় সুবিধা আর আমাদের দেশের প্রাপ্ত সুবিধার নগদান, খতিয়ানের খাতায় কার কতোটা পুষ্ট। বর্তমান সরকারের মেয়াদামলে ভারত যেসব সুবিধা গ্রহণ করেছে তার তুলনায় দিয়েছে অতি নগণ্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে ভারত যেখানে তাদের সীমানার সুন্দরবন রক্ষায় সর্বত্র তৎপর থেকে ইনভেস্ট করছে ঠিক তখন বাংলাদেশের সুন্দরবন ধ্বংস দশায় ফেলে ভারতীয় ইনভেস্টে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলছে। বিএসএসএফ সীমান্তে প্রায়শঃ বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। প্রতিবাদে সরকারকে আজো কোনো বিবৃতি বা হত্যা বন্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বিএসএসএফের বুলেটে অসংখ্য বাংলাদেশির বুক ছিদ্র হলেও বিজেপির বুলেটে ভারতীয় একটা পাখি মরেছে বা এক রাউন্ড গুলি খরচ হয়েছে এমন খবর কখনো চাউর হয়নি। সমুদ্রসীমা ও নৌবন্দর ব্যবহারে ভারতকে অনুমতি, স্থলবন্দরে পরিবহনের সুবিধা ইত্যাদি নজিরবিহীন। ভাবী সামরিক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে খাল কেটে কুমির আনার মতো নতুন উপদ্রব হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
ভারতীয় মিডিয়া প্রতিবেদন করেছে, ‘দিল্লি ঢাকার সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়। কিন্তু ঢাকা এখনো এত দীর্ঘকালীন চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী নয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে পারে। এতে কোনো বাঁধাধরা সময় থাকবে না এবং তা হবে কম আনুষ্ঠানিক। এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রীয় সুরে লিখিত এবং ভারত সরকারের আকাক্সিক্ষত সুবিধা সম্বলিত খসড়া যা বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া মারাত্মক দায়ভার।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের ৭টি রাজ্যে স্বাধীনতা লাভের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারী বাহিনীর সাথে প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে যুদ্ধ করে আসছে। সামরিক চুক্তি হলে ভারতীয় সেনা, অস্ত্র বহনকারী সরঞ্জাম নির্দ্ধিধায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গমনের সুবিধা লাভ করবে, যার ফলে ভারতীয় সেসব বিদ্রোহীগোষ্ঠী গোস্যাস্বরূপ বাংলাদের উপর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং নতুন করে জঙ্গিভীতি দেখা দিতে পারে। অহেতুক শান্তির বুকে অশান্তির তিল আঁকা আর কি!
ভারতের সঙ্গে সিকিমের সামরিক চুক্তি ও পরবর্তী ফলাফল দুনিয়ার কারো অজানা নয়। ভুটানের সঙ্গে সমচুক্তি এবং ভারতের চির বশ্যতা মেনে নেওয়া আরেকটি উদাহরণ। সামরিক চুক্তি হলে দুদেশের সামরিক ক্যাম্পের হাঁড়ির খবর ছড়িয়ে পড়বে। ভারতের মতো বৃহৎ দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাংলাদেশের মতো দেশের জানা বা অজানাতে ফল থাকতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তির সিক্রেট পলিসি জ্ঞাত হয়ে হয়তো ভারত একদিন ভাবতেও পারে মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, তলার মাপ শেষ। ভারতের মতো দেশকে অবাধে অনুপ্রবেশ স্বাধীন দেশের কাম্য কিনা বিবেচনা করা উচিত।
ভারতের মূলত চীন ভীতি মারাত্মক। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থ বাণিজ্যে একচেটিয়াভাবে চীন রাজ করছে নির্দ্বিধায়। বাংলাদেশেও চীনের অনুগম্যতা ভারতের মাথাব্যথার কারণ। তবে ২০০৯ সাল থেকে ভারত এ দেশ থেকে যা নিয়েছে এবং দিয়েছে চীন সে তুলনায় নেইনি বললেই চলে বরঞ্চ দিয়েছে ভারতের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি। সর্বশেষ চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরকালে যেসব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রকল্প খাতে ঋণ ও অনুদান চুক্তির স্বাক্ষর অনুমোদন করেছেন যার তুলনায় ভারত থেকে প্রাপ্তি ২% এর চেয়েও কম। চীন থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় করা হলে ভারতের ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং তড়িঘড়ি করে সামরিক চুক্তির নামে জাল ফেলতে উদ্যত হয়। বাংলাদেশের সেনা অফিসারদের প্রশিক্ষণসহ অত্যন্ত সস্তা দামে মানগত প্রযুক্তির অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে চীন। যা হালকা ও সহজ ব্যবহারযোগ্য। অন্যদিকে ভারতের অস্ত্রের দাম বেশি, মান খারাপ ও ভারী ব্যবহারে সমস্যা। এসবের পরেও কেনো যে ভারতের সাথে সামরিক চুক্তির প্রয়োজন হাওয়াই মিঠার মতো।
অন্যদিকে বহুল প্রতিক্ষীত ভারতের সাথে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হচ্ছে না। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের গণমানুষের বহু পুরনো ন্যায্য ও মৌলিক দাবী। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই, কথা যত হচ্ছে তা হলো অপ্রয়োজনীয় সামরিক চুক্তি নিয়ে।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

Show all comments
  • shadhin ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১:৫৯ পিএম says : 0
    Amra holum .............. .......... jonogon. Amadar kopala ja koto kosto asa. Ei ........... jonogon jokon porna lungi thakba na tokon bujba
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন