পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারবে না আইপিইউ সদস্যভুক্ত কোনো রাষ্ট্র। বরং মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোন কৌশলে এই এটা প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে দু’দিনের আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এছাড়া জরুরি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর উপস্থিতিতে এই অধিবেশনে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সময়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং শান্তি ও বিশ্ব নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা চলেছে। এরপর আলোচনা হয়েছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার কৌশল নিয়ে। তবে কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বুধবার এসব বিষয়ে সুপারিশমালা চ‚ড়ান্ত করা হবে।
এরপর এ বিষয়ে আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মাটিন চুংগং সাংবাদিকদের বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। সদস্য দেশগুলো আলোচনা করছে। আশা করি ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা এমন কিছু করব না, যাতে আন্তর্জাতিক কোনো আইন লঙ্ঘিত হয়। আন্তর্জাতিক আইনের আলোকেই খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আইপিইউর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত আইপিইউ সেক্রেটারি বলেন, আমরা সংসদগুলোকে শক্তিশালী করতে চাই। তারা এসংক্রান্ত আইন পাস করতে পারে। জনগণকে সচেতন করতে পারে। এ বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর সংসদের ভ‚মিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সম্মেলন থেকে সংসদগুলো সেই উদ্যোগ নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাধারণ অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই শেষ কথা নয়। প্রবৃদ্ধির সুফল পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে না পারলে কাজে আসবে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর যত মানুষ এক দশমিক ৫ ইউএস ডলারের নিচে আয় করে, তার একটি বড় অংশ নারী। কাজেই নারীর দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়তে হলে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রয়োজন। আইপিইউ সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আমরা নারী-পুরুষের সমতা আনতে কাজ করছি। আমাদের সরকার এমডিজি বাস্তবায়ন করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের নীতি হচ্ছে, সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা যা এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
ভিয়েতনামের প্রতিনিধি টি পি টং বলেন, তার দেশ এসডিজির নির্ধারিত অনেক লক্ষ্য ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। যার মধ্যে শিক্ষা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। যুবসমাজ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরকরণে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানোন্নয়নে বর্তমানে কাজ করছে। ভিয়েতনামের মানুষের মধ্যে সম্পদের অসম বৈষম্য দূরকরণে কাজ করছে দেশটির সরকার।
কম্বোডিয়ানের প্রতিনিধি এস ইয়াং বলেন, দেশটির স্বাধীনতার পর সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অনেক অর্জন হয়েছে। খাদ্যের সুষম বণ্টন, স্কুলের শিশুদের জন্য তহবিল নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করছে। দারিদ্র্যসীমার নিচের অবহেলিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার, যাতে তারা সাবলম্বী হতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি সি লওহর বলেন, যারা বিশেষভাবে সক্ষম তারা দুর্বল না। তবে প্রতিবন্ধী কিংবা বিশেষভাবে অক্ষম প্রত্যেক মানুষ যাতে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।
মেক্সিকোর প্রতিনিধি এম ভারগস বারসিলোনা বলেন, আমি এখানে একজন নারী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাদের সংসদ এবং রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে তারই এই প্রমাণ। তবে আমাদের দেশে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। নারী পাচার বন্ধ হয়নি। এমনকি বিধবা নারীদের পুরুষের সঙ্গে থাকতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। নারীদের সংবিধানে যে অধিকার দিয়ে রেখেছে তা সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না।
সুদানের ই এফ মুনছুর বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিটি সংসদের দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। কারণ ইসলাম আমাদের নৈতিকতার শিক্ষা দেয় তাই আমাদের সবাইকে আইপিইউ সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ : সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ রুখতে কার্যকর ও অ্যাকশনমুখী কৌশল নির্ধারণ করবে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আইপিইউ সম্মেলনের ৩য় দিনে ‘শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা’ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক শেষে এ মন্তব্য করেন আইপিইউর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদকে কোনোভাবেই সহায়তা করবে না আইপিইউভুক্ত দেশগুলো। একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রুখতে একটি কৌশল নির্ধারণেও আলোচনা চলছে।
আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল জানান, সহিংস সন্ত্রাসবাদ জন্ম নেয় হতাশা, সামাজিক অসমতা, অবিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সুযোগের অভাব থেকে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার কৌশলে আমরা এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করব। আমরা এবারে অ্যাকশনমুখী কর্মসূচি হাতে নেব। তিনি আরো বলেন, যেই কৌশলটা প্রস্তাব করা হবে, সেখানে অনেকগুলো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির কারণগুলোকে রুখতে গেøাবাল পার্লামেন্টারি কমিউনিটিকে সাহায্য করবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈষম্য দূর করতে এবং মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পার্লামেন্ট কিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, খসড়া প্রস্তাবে সে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ কার্যক্রমে কোনো দেশই যেন আর্থিক বা জনবল কোনো কিছুতেই সহায়তা না পায় সেগুলো বন্ধ করার বিষয়ে নিজ নিজ দেশের সংসদের কী ভূমিকা হতে পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, নিজ দেশে নিরাপত্তাসহ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। আমরা বর্তমানে বৈশ্যিকভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক পাচারসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছি। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আইপিইউভুক্ত দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি এন ইভানস বলেন, যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। হাউস ও কমন্সের বাইরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তা শুধু যুক্তরাজ্য নয়, সারাবিশ্বের গণতন্ত্রের ওপর হামলা। তাই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।
রাশিয়ায় আইপিইউ সম্মেলনে ইউক্রেনের আপত্তি : ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৭তম সম্মেলন রাশিয়ায় অনুষ্ঠানের বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের এমপি বি. টারজোক সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। দেশটি চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আইপিইউ যেসব বিষয় ধারণ করে তা রাশিয়ার মধ্যে নেই। তাই ওই দেশে আইপিইউ সম্মেলন যাতে না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
বি. টারজোক বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে লুটতরাজ চালিয়েছে। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। রাশিয়া যদি জাতিসংঘের নিয়মগুলো মেনে চলে তাহলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি বলেন, আইপিইউ ও জাতিসংঘ মিলে আমরা শান্তি রক্ষা করে চলতে চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা প্রতিজ্ঞা করতে চাই আর যেন একটিও মৃত্যু না ঘটে। কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।