পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পলাশ মাহমুদ : সময় বাড়লে ব্যয় বাড়ে। তাই কোনভাবেই মেগা প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ হয় না। ফলে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির সাথে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ব্যয়। কোন কোন প্রকল্পে ২০০ শতাংশও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। সময় বাড়ানো হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যায় সরকারের ১০টি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধিতে সব চেয়ে এগিয়ে আছে পদ্মা সেতু। ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকায়। অন্যদিকে সময় বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প। ৩ বছরের প্রকল্পে এখন সময় লাগছে ৭ বছর।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পে ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয় ও দেড় বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার মগবাজার-মৌচাক-সাতরাস্তা রোড এলাকায় যানজট হ্রাস পাবে, ভ্রমণ সময় কমবে, যা সার্বিকভাবে ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্য পরিবেশকে উন্নত করবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
অবশ্য অনেক সময় প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশনের মতে, প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনেক ত্রুটি থাকে। ফলে সংশোধনের সময় নতুন নতুন বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয়, যা ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
গত ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছর (২ বছর) সংশোধিত ১৩২টি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে সরকারের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় অনেক আগে থেকেই বারবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২ বছরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ৪২৯টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রকল্প সংশোধিত। এসব সংশোধিত প্রকল্পের প্রত্যেকটিতে ব্যয় বেড়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প ১৯ হাজার কোটি টাকা: বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যয় বৃদ্ধি হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে পদ্মা বহুমুখি সেতু প্রকল্প। ২০০৭ সালে একনেকে পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। তখন মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানালে সরকার দেশীয় অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
নিজ উদ্ব্যোগে প্রকল্পটির কাজ শুরুর আগেই প্রথম সংশোধনীতে ১০ হাজার ১শ’ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি আরো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়ানো ব্যয় বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকয়।
বেসরকারী গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)’র এক গবেষণায় দেখা গেছে নয় বছরের ব্যবধানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৮০ শতাংশ। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রতিটি অঙ্গের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের এই অগ্রাধিকার প্রকল্পের এভাবে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ বলে মনে করছে সিপিডি।
মেট্রোরেলে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা: মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবার পরে ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি। তবে এ প্রকল্পটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা (২০০ কোটি ডলার)। কিন্তু চূড়ান্ত দরপত্রে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা (৭০ কোটি টাকা) বাড়িয়ে ধরা হয় ২১ হাজার ৯শ ৮৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে মেট্রোরেলের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ (ডিএমআরটিডিপি) বাস্তবায়ন করছে ‘ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ’ (ডিটিসিএ)। মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানইজট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নামে একটি কোম্পানিও ঘটন করেছে সরকার।
মোট বরাদ্দের মধ্যে জাইকা থেকে পাওয়া যাবে ১৬ হাজার ৫শ’ ৯৪ দশমিক ৫৯ কোটি ও বাংলাদেশ সরকারের ৫ হাজার ৩শ’ ৯০ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত দিয়েছে প্রায় ৪শ’ কোটি ও জাইকা দিয়েছে প্রায় ১শ’ ৪৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থ বছরে বড় বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে এ প্রকল্পে সময় ও ব্যয় কোনটিই আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মোফাজ্জেল হোসেন।
মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে ৪৪৬ কোটি টাকা: সময় বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার। এ প্রকল্পে মোট ৩ বার সময় বাড়ানো হয়েছে। ৩ বছরের প্রকল্পটি এখন দাঁড়িয়েছে ৭ বছরে। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্পটির সর্বমোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। একই সাথে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও এর আগে ২ দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।
প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এসময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘মগবাজার-মৌচাক কম্বাইন্ড ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল পরে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে আরেক দফা সময় বাড়িয়ে করা হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনে ১২শ’ কোটি টাকা: সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি; উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প। ২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পে এ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে ৪ বার। ফলে আড়াই বছরের প্রকল্প এখন লাগছে ৬ বছর। এ প্রকল্পে মোট ৪ দফায় ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা। নতুন করে আরো ১ বছর সময় ও ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তবে এ প্রকল্পে আর ব্যয় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পের সময় আর বাড়ানো হবে না। আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। কারও চিঠিতে কোনো কাজ হবে না। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে কম সময়ে দ্রুত কাজ শেষ করা যায় এমন বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সওজ’র সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১শ’ ৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথম দফায় প্রায় ২শ’ ৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩শ’ ৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর আবারও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। এসময় আবারও প্রায় ১শ’ ১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ২ হাজার ৪শ’ ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ তৃতীয় দফায় ৭শ’ ৮০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ১শ’ ৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ গত মে মাসে ১শ’ ৫১ কোটি ব্যয় বৃদ্ধিসহ মোট অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়ায় ১১শ’ ৭৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী আরো ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হলে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর বর্ধিত ব্যয় হবে ১৭শ’ ৭৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ চার ৯০ কোটি লেনে : বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১০ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয় ৯০২ কোটি ২২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীতে ৯০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৯৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমে ২০১৪ সালের জুন মাস এবং পরে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। কিন্তু সেই সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। এখনো পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। দুই এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
কর্ণফুলী টানেলে ৩ হাজার কোটি টাকা: চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হবে টানেল। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এখনো শুরু না হলেও এরই মধ্যে দুই দফায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে ব্যয়। মূলত অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় এ ব্যয় বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানাযায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়। তখন টানেল নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থায়নের নিশ্চয়তা না থাকায় সে সময় তা ফেরত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরে সিসিসিসির সঙ্গে চুক্তি করে সেতু বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনার ভিত্তিতে গত জুনে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। তবে সিসিসিসির কিছু প্রস্তাবে আপত্তি তোলে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। গত বছরের মে মাসে প্রকল্পটি আবার অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় না কমে উল্টো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ শুরুর আগেই দুই দফায় ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৮৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কে ৮২৩ কোটি টাকা: ২০১০ সালের জুলাইয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৯৯২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ধরা হয় ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ৮২৩ কোটি টাকা। বর্ধিত সময় ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
হাতিরঝিল প্রকল্পে ৭৭০ কোটি টাকা: রাজধানীর দৃষ্টিনন্দর প্রকল্প হাতিরঝিল। প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত মোট চারবার সংশোধনী আনা হয়েছে। ৩ বছরের এ প্রকল্পে মোট সময় লাগছে প্রায় ১০ বছর। তবে সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট মাসে সংশোধীতে ব্যয় না বাড়িয়ে দেড় বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি শেষ হবার কথা থাকলেও সম্পূর্ণ কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর আগের তিনবারই প্রকল্পটি সংশোধনের সময় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল।
২০০৭ সালে শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথম দফা সংশোধনীতে এক বছর সময় বাড়িয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় মাত্র আট কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায় বাড়ানো হয়। এ দফায় মেয়াদ বাড়ে আরও দেড় বছর। পরের দফায় ব্যয় বাড়ে ২৬৫ কোটি টাকা, আর মেয়াদ বাড়ে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
তবে এ প্রকল্পে সময় বাড়ার কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে- জমি অধিগ্রহণ না হওয়া, জমির মালিকানা-সংক্রান্ত জটিলতা, বিভিন্ন পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের লাইন অপসারণে দীর্ঘসূত্রতা, প্রকল্প এলাকায় প্রবেশের জন্য ইউ-লুপ নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়া ইত্যাদি।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ১৪৪০ কোটি টাকা: বারবার সময়, দৈর্ঘ এবং দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ) ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজে। ২০০৬ সালে ৪ কিলোমিটারের ফ্লাইওভারটি নির্মাণের জন্য ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু সর্বশেষ এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘও বাড়ানো হয়।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের প্রথম দফায় কাজ শুরু হয়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭০ কোটি টাকা। পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে দুর্নীতির অভিযোগে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাদীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রকল্পটি আবার চালু করে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে এর নামকরণ করেন ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার’। আর ২০১৩ সালে পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়।
শেষ পর্যন্ত এ এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। প্রথম দফা সংশোধনীতে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। এসময় ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় ফ্লাওভারের দৈর্ঘ্য ও নির্মাণ ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
রংপুর মহাসড়ক ৪ হাজার কোটি টাকা: গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতের প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এখন হাটিকুমরুলের পরিবর্তে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন করা হবে। এতে দূরত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও বর্ধিত অংশটি চার লেন করতে মাত্র দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরেছিল সেতু কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৪১ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার চার লেন করতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। তখন কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন করার ক্ষেত্রে খুবই কম জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় কম ছিল। তবে হাটিকুমরুল-রংপুর অংশে বেশকিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। মহাসড়কের পাশের জমির দামও অনেক বেড়ে গেছে। এতে নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এছাড়া প্রকল্পটিতে সড়কের দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন থাকবে। এটিও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।